পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਧ মুক্তি । br83 কাটাইয়াছেন, কিন্তু এখন আর এক মুহূৰ্ত্তও এক থাকিতে পারেন না। নিৰ্ম্মলাকে তাহার চাই-ই । ছোটছেলের কান্নায় গোলমালে তাহার ঘুম হয় না বলিয়। বরাবর রাত্রিবেলায় তিনি নিজের ঘরে এক গুইতেন ; কিন্তু নিৰ্ম্মলাকে কাছে না লইয় গুইলে এখন ঘুমের আরও ব্যাঘাত হয় । সমস্ত বাড়ির মধ্যে এই মেয়েটিকে আহারে বিহারে শয়নে শিক্ষায় তিনি নিজের কাছে একান্ত করিয়া টানিয়া লইয়ুছিলেন । এতদিন যে ব্যক্তি মিল, বেস্থাম লইয়া দিবারাত্র আলোচনা করিয়াছে, আজ সে-ই সাত-আট বছরের মেয়েকে বোধোদয় এবং রয়্যাল রীডার পড়াইতে লাগিল। প্রকৃতির যে দিকটা চন্দ্র কাস্তের মনে বহুদিন হইতে অস্বাভাবিক ভাবে রুদ্ধ ছিল আজ কেবলমাত্র এই মেয়েটির উপর দিয়াই যেন তাহ দ্বিগুণ বেগে প্রবাহিত হইল । এমনই করিয়া এখন নিৰ্ম্মল সতেরো বৎসরেরটি হইয়াছে। বেথুন কলেজের দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণীতে সে পড়ে । তাহার বাবা তাহার জীবনকে এমন কবিয়া ঘিরিয়৷ ছিলেন, যে, সে-আবরণ ছিন্ন করিয়া আর কিছুর প্রবেশপথ নাই। তাই সতেরো বছরের কলেজে-পড়া মেয়ে যেমন হয়, যেমন হওয়া উচিত, নিৰ্ম্মল আদৌ সেরূপ ছিল না। কলেজে সে সকলের চেয়ে সামনের বেঞ্চিতে বসিত, প্রফেসরের লেক্চার অবহিত হইয়া শুনিত। কমনরুমে গিয়া যখন বলিত, তখন সৰ্ব্বদাই হাতে থাকিত কোন একখানা বই । কলেজের মেয়ের হাসি চাপিয়া বলিত “নিৰ্ম্মলার কথা আর বল কেন ?...ও বডড ভাল মেয়ে । কিন্তু দরকার নাই বাপু আমাদের অত ভাল হয়ে।” সে হাসি অথবা সে ইঙ্গিভের কোন অর্থ নিৰ্ম্মল৷ বুঝিত না। কারণ ও সব তার কানেই যাইত না। কলেজের ছুটি হইলে উৎফুল্প হইয়া ভাবিতে বসিত, এই ত আর একটুক্ষণ পরেই বাড়ি যাইতে পাইব । কলেজ হইতে ফিরিয়া জালিয়া নিৰ্ম্মলা বিকালের গা-ধোওয়া শেষ করিয়া যখন : বাহিরে তাহার বাবার ঘরে স্বইচ টিপিয়া ঘরখানি আলোকিত করিত, সেই আলোর রশ্মি তাহার শাদা কালে পাড়ের শাড়ীড়ে, হাতের দুইগাছি শাদ সাপ্টা বালায়, প্রশান্ত ললাটের স্বৰ্ণাভ কচি বেশের দুই-একটি বিক্ষিপ্ত অংশে জাসিয়া পড়িত, তখন সে ঘরখানি যেন একটি বিশেষ ঐ পাইত। সে ঘরের সমস্তই যেন তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়াছিল। নিৰ্ম্মলাকে কেন্দ্র করিয়াই সেই ঘরটি যেন গড়িয়া উঠিছে । টেবিলের উপর তাহারই হাতের কারুকার্য্য করা টেবিল-ঢাকা বাতাসে কঁাপিতেছে, শেলফের উপরকার বইগুলি সে নিজে বিশেষ পরিপটি করিয়া সাজাইয়াছে। দেয়ালের গায়ের খানিকট অংশ শালু দিয়া মুড়িয়া সেখানে চন্দ্রকান্তবাবুর ওভারকোট, বেড়াইতে যাইবার ছড়ি এবং শাল, কাঠের ঝোলান আলনায় টাঙান আছে। ঘরের মাঝে একটি বড় গোল টেবিল। চারি পাশে গুটিকতক চেয়ার সাজান । একপাশে একখানি তক্তাপোষের উপর শুভ্র বিছানা । চন্দ্রকান্ত বাবুও সারাদিনের মধ্যে এই বিকালবেলাটুকুর অপেক্ষা করিয়া থাকেন কখন নিৰ্ম্মল আসিবে, কখন তাহার কলেজের ছুটি হইবে। এই মেয়েটি তাহার কাছে বিশ্বের আকর্ষণ । সেই আট বৎসর বয়স হইতে আজ অবধি সহস্ৰ কাজ থাকিলেও তাঁহাকে নিজে ভূ-বেল না পড়াইলে চলে না । সে নিজের হাতে চা তৈয়ারী করিয়া ন দিলে র্তাহার বিকালের মজলিস জমে না । তিনি যে-কাজ করুন, যে-কথা বলুন, যে-ভাবনা ভাবুন, সমস্ততেই নিৰ্ম্মলার সায় পাওয়া চাই । এমনি করিয়া পিতার সহিত কষ্কার একটি রসসিক্ত স্নেহ-মধুর সম্পর্ক স্বই হইয়া উঠিয়াছিল। নিৰ্ম্মল তাহার মনের কথার ভাগ বাবাকে দিত, এবং তাহার বাবা র্তাহার বেদান্ত এবং দর্শনের মতামত হুইতে শার্টের বোতাম ও কোর্টর কলার অবধি নিৰ্ম্মলার হেপাজতে রাথিয় নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন। তিনি অমুক বিষয়ে কি মনে করেন, বুধবার বিকালে হেদুয়ার ধারে বেড়াইতে গিয়া তিনি ছড়ি ফেলিক্সা আসিয়ছেন কি-না, চায়ে তিনি ক' চামচ চিনি খান, সোমবারে তাহাকে কোন একটা বিশেষ জরুরি চিঠি লিখিতে হইবে - এ সকল কথা নিৰ্ম্মলাকে নিত্য স্মরণ রাখিতে হুইত । বাবার নিকট যে-পরিমাণে প্রশ্রম পাইত, স্বাভাৰী গৃহকাৰ্য্যরত মায়ের নিকট তেমনি সে একেবারেই আমল পাইত না। মাটিক দিবার পরেও নিরন্ত না হইয়া চজকাত্ত যখন খরচপত্র করিয়া মেয়েকে কলেজে পড়িতে দিলেন, তখন জীবনের মধ্যে প্রথম স্বশীলা স্বামীর কাজের মৃদ্ধ প্রতিবাদ