পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ቁ8 মা বলিলেন, “আমি সারব কি ন-সারব তোর চেয়ে তা কি আমি কম বুঝি? অামায় ছেলে-ভোলাতে হবে না, যা বলছি কর।” কল্যাণী দেওয়ালের গায়ে গৰ্ত্ত করিয়া বসানো লোহার সিন্ধুকটি খুলিতেই ম৷ বলিলেন, “বাক্স তিনটে এইখানে নিয়ে ज्ञांग्न !” নীরবে-আসীন নসর্বসন্ত্রস্ত হইয়া উঠিয় দাড়াইয়৷ কল্যাণীকে চুপি চুপি বলিল, “আমি একটু বাইরে বসি গিয়ে ” বৃদ্ধ বুঝিতে পারিয়া বলিলেন, “তোমাকে কোথাও যেতে হবে না বাছা এখন ; একবারটি নিরঞ্জন, বৌমা বুলবুল আর কাত্যায়নীদের ডেকে নিয়ে এসে এইখানেই বস।” পা টিপিয়া টিপিয়ানস বাহিরে চলিয়া গেল। কল্যাণী গহনার বাক্স তিনটি মা’র থাটের উপর আনিয়া রাগিয়া আবার ধীরে ধীরে মা'র কপালে হাত বুলাইতে লাগিল। এই সমস্ত ব্যাপারের সাহায্যে মৃত্যুকে আসন্ন বলিয়া মানিয়া লওয়াটা তাহার মনকে দুঃসহ পীড়া দিতেছিল, তবু কি বলিতে কি বলিয়া মাকে চটাইয়া ফেলিবে ভাবিয়া সে কোনো মতামত প্রকাশ করিল না । নসের পিছন পিছন হাপাইতে ইপিাইতে কল্যাণীর দাদ নিরঞ্জন আপনার বিপুল দেহভার টানিয়া প্রায় চুটিয়াই ঘরে ঢুকিলেন। তাহার মুখে চোখে ব্যাকুল সপ্রশ্ন ভাব ফুটিয়া উঠিয়াছে, বধু বাহিরেই কাজে বাস্ত ছিলেন, মাথার ঘোমট আর একটু বেশী টানিয়া দিয়া শাশুড়ীর পায়ের কাছে আসিয়া দাড়াইলেন। নিরঞ্জনের বালিকা কন্যা বুলবুল হতবুদ্ধির মত বিস্ফারিত চোখে সকলের মুখের দিকে চাহিতে চাহিতে খাটের পাশে বসিয়া পড়িল। গৃহিণীর ভগিনী কাভ্যায়নী দিদিকে দেপিতে দেশ হইতে কয়েকদিন মাত্র সপুত্ৰ আসিয়াছেন। রোগীর ঘরে নানা স্লেচ্ছাচার হয় বলিয়া তিনি বড় সে ঘরে যান না, আপনার নির্দিষ্ট ঘরে গঙ্গাজল গঙ্গামাটি তুলসীমালা ইত্যাদি লইয়াই ব্যস্ত থাকেন। নলের ডাকে তিনি, ‘ ও মাগো কি হলে গে দিদির ? বলিয়া কাদিতে কাদিতে দিদির গায়ের উপর আসিয়া পড়িলেন। কাত্যায়নীর পুত্র গণেশ ঘরের ভিতর ঢুকিতে ইতস্তত করিয়া দরজার নিকটেই দাড়াইল । নিরঞ্জন ব্যস্তভাবে কাত্যায়নীকে মাতার নিকট হইতে একটু ఏరBC সরাইয় একটা চোরে বসাইয়া দিয়া মার মুখের কাছে ইটু গাড়িয়া বসিয়া বলিলেন, “ম, তোমার কি বড় আসোমান্তি লাগছে, এড ব্যস্ত হুচ্ছ কেন মা ? ডাক্তার ত ঘণ্টা থানিকের মধ্যেই এসে পড়বেন খবর পেলাম।” ম! বলিলেন, ‘ না বাবা, তার জন্তে ব্যস্ত হইনি। তোদের সবাইকে একবার একসঙ্গে দেখে নি, দুটো কথা মন খুলে বলে নি। এর পর আর ক্ষমতা যদি ভগবান নাই রাখেন। এই জিনিষ পত্রগুলোরও ত একটা ব্যবস্থা ক'রে যেতে হবে।” থাটের উপর গহনার বাক্স দেখিয়া নিরঞ্জন বিরক্ত হইয়া বলিল, “ওসব আবার এখন কেন ? ওর ব্যবস্থা করবার কি আছে বুঝতে পারছি না। ওর বা ব্যবস্থা তা ত আপনিই হয়ে পড়বে। তোমার কাউকে কিছু বলবার কি দেবার ইচ্ছ: থাকে ত বল, আমরা তোমার ইচ্ছামত ক’রে দেব।” কল্যাণী বলিল, “ম, দাদা ত ঠিক কথাই বলছেন। আমাদের অদৃষ্টের দোষে তুমি যদি আমাদের ছেড়েই চলে যাও, তখন যা বুঝিয়ে দেবার-নেবার সে ত করতেই হবে । তুমি যেমন এতদিন সব কবৃছ তেমনি দাদাও করবেন । কিন্তু এখন কেন মা, শুধু শুধু দুৰ্ব্বল শরীরে ও সব কথা বলে নিজেকে ক্লান্ত করছ, আমাদেরও দুঃখ দিচ্ছ ? বলিতে বলিতে কল্যাণীর চোখের জল আবার রাধ ভাঙিয়া ছুটিল। মা ক্ষীণ হাসিয়া বলিলেন, “ওরে, তোর আমন ক’রে কি আমার মরণ ঠেকিয়ে রাখতে পারবি ? আমার কাজ ফুরিয়েছে, এখন যাওয়াই যে আমার মঙ্গল । আমার শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করতে বাধা দি নে । আমার হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নিতে দে । আর আমার সময় নেই আমি জানি।” নিরঞ্জন বাস্ত্র তিনটার চাবি খুলিয়া মা'র একেবারে হাতের কাছে আনিয়া দিল। গৃহিণী প্রথমেই এক তাড়া কাগজপত্র বাহির করিয়া বলিলেন, “নাও বাবা, তোমাদের ঘরবাড়িব দলিলপত্র দেখেশুনে নাও। কোনোদিন ত এসব কিছু করতে হয় নি। এইবার নিজের বুঝে নিজের মত করে করে ” নিরঞ্জন অস্পষ্ট স্বরে বলিল, “এই সব বাজে কাজ নিয়ে এমন করে আয়ুক্ষ করার মানে বুঝতে পারি না।” সেদিকে লক্ষ্য না করিয়া একটা বাক্সের তলা হইতে