পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক ማ¢ কতকগুলি গিনি মুঠায় করিয়া তুলিয়া গৃহিণী বধুর হাতে দিয়া বলিলেন, “বি-চাকরদের ডেকে একটা একটা দাও।” বাড়ীর যত চাকর দাসী আসিয়া মাটিতে গুইয়। সাষ্টাঙ্গ প্ৰণিপাত করিয়া এক-একটা মোহর লইয়া বাহিরে গিয়া দাড়াইল। পাকা সোনার এক ছড়া সরু লম্ব দড়িহার বাহির করিয়া তারপর গণেশকে হাতছানি দিয়া ডাকিয়া বলিলেন, “এ আমার মায়ের গলার হার বাবা, তোমার বউকে দিলাম ; সৰ্ব্বদা গলায় রাখতে বলে ।” তারপর রেশমে গাথা এক জোড়া লবঙ্গ ফুলের কঙ্কণ তুলিয়৷ বলিলেন, “কাতু, মার হাতে এ গয়না কতদিন দেখেছিলি মনে আছে বোন ? এ জোড়াটি দিদিকে মনে ক’রে পরবি।” কাতৃ কাদিতে কাদিতে গহনা আঁচলে বাধিলেন ; গৃহিণী একটি পেট সোনার ঠান্থলি তুলিয়৷ বলিলেন, “আমার সাধের সময় আমার শাশুড়ী দিয়েছিলেন, নাতিকে দিয়ে যাব মনে করেছিলাম। তা নাতিই চোপে দেখলাম না। এটি ভোর জ্যাঠাষ্টমার নাতিকে দিস বাছা, কালই হয়ত তার আসবে।” নিরঞ্জন মুখ নীচু করিয়া বসিয়াছিল, হাল্পলিট হাতে লষ্টয়া মূপ তুলিয়া বলিল, “ম, তুমি আর কত কথ: বল্বে ?” ম। বলিলেন, “বে কট বলতে পারি এই শেষ বলে নিতে দে বাবা। আমার বুলবুল দিদি, এদিকে আয় ত ভাই। গলার এই সাতমহুর খুলে শাশুড়ী আমার মুখ দেখে ছিলেন, এটি তোর বিয়ের দিনে পরিস ভাই। আর বৌমা লক্ষ্মী, এষ্ট সরস্বতী হার ছড়া তোমায় দিলাম, তোমার শ্বশুরের প্রথম রোজগারের টাকায় গড়ানো ।” বন্ধু শাশুড়ীকে প্রণাম করিয়া হারটি গলায় গলাষ্টয়া লইল । মা এই বার কল্যাণীকে কাছে টানিয়া লইলেন, “আমার ম লক্ষ্মী, বাপমায়ের এক মেয়ে তুই । তোকে কি-ই বা দিতে পেরেছি, মা ? বড় সাধ ছিল, বড়ঘরে বিয়ে দেব, তাও অদৃষ্টে হ’ল না। বাপ-মাকে ক্ষমা করিস, বাছা। মনে যা সাধ ছিল তেমন করে ত দিতে পারলাম না। তবে মেয়ে তুই, মা’র গহনার দাম টাকার চেয়ে অনেক বেশী জানিস ত? এই ক’খান তাই তোকে দিয়ে গেলাম।” কল্যাণী মুখ নীচু করিয়াই বলিল, “থাক নাম এখন।' মা বলিলেন, “না, আমার সাম্নে সব পরতে হবে। কাতু, এক একখান করে পরিয়ে দে দিকি ভাই। নিজের চোখে একবার দেখে যাই ।” আটপৌরে গহনার বাক্সে চুড়ি বাল, হার দ্বল আটি সোনার ফুল-কঁটা চিরুণী, তাগা প্রভৃতি প্রায় চল্লিশ ভরির গহন ছিল। সেগুলি সব নিশেষ করিয়া পরাইয়া কাতানী হাত গুটাইতেই গৃহিণী অন্য বাক্সটি দেখাইয় দিলেন। নিরঞ্জন একবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এটা কাকে দিচ্ছ ?” ম৷ বলিলেন, “কল্যাণীকেই।” হীরার কষ্টি, হীরার কঙ্কণ, হীরার দুল, হীরার আংটি, মুক্তার মাল, মুক্তার টুড়ি, জড়োয় বালা, জড়োয় তাবিজ, পরাইতে পরাইতে কাত্যায়নীর চোখ বিস্ময়ে ঠিকরাইয়৷ আমিতে লাগিল। পল্লী বধূর চক্ষে ইহা আলাদিনের ঐশ্বৰ্য্য। কল্যাণী সঙ্কোচে জড়-সড় হুইয়া ঘামিয়া উঠিতেছিল, আর থাকিয়া থাকিয়া আঁচলে চোখের জল মুছিতেছিল। কাত্যায়নী বলিলেন, “হঁ্য দিদি, এ কত হাজার টাকার গয়ন হবে ভাই ?” গৃহিণী বলিলেন, ‘মনে কি আছে ছাই ভাল করে। পচিশ-ত্রিশ হাজার হবে, কিছু বেশী-কমও হতে পারে। মেয়েকে আর ত কিছু দেবার আমার নেই, শুধু গয়নাই ক’খান পরিয়ে দিচ্ছি। কল্যাণী, একবারটি উঠে দাড়া ত মা, দেখি কেমন মানিয়েছে।” কল্যাণী মাকে প্রণাম করিয়া সজল চক্ষে আরক্ত মুখে উঠিয় দাড়াইল। মণিমাণিক্যের ছাতিতে মরণের শিক্ষরে যেন উৎসবের আলো জলিয়া উঠিল । সকলের বিস্মিত মুগ্ধ দৃষ্টি কল্যাণীর উপর। বিধবা গৃহিণী কতকাল পূৰ্ব্বে অলঙ্কার প্রসাধন ছাড়িয়া দিয়াছেন ; তাহার যে এত গহন ছিল তাহ তাই যেন আজ ঘরের লোকেও নূতন করিয়া আবিষ্কার করিল। নিরঞ্জন আরক্ত মুখে কি বলিতে গিয়া ফিরিয়া দেখিল পিছনে বাঙালী ও ইংরেজ দুই ডাক্তার দাড়াইয়া বিস্ফারিত নেত্রে কল্যাণীকে দেখিতেছে। নিরঞ্জনের উপর চোখ পড়িতেই বাঙালী ডাক্তার বলিলেন, “রুগীর ঘরে এত গহনার একজিবিশন হচ্ছে কেন ?” নিরঞ্জন বিরক্তিতে মুখটা বাকাইয়া বলিল, “মা'র খেয়াল। কল্যাণীর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি তুলিয়া সে মুখ নামাইয়া লইল । গৃহিণীর আনন্দোজ্জল মুখের দিকে তাকাইয়া ইংরেজ