পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిరBO দিও না। তবে এখানে আর যেন অযথা বেশী গোলমাল না হয়।” বাগবাজারের গলির ভিতর গলি। স্থধ্যের আলো কখনও এখানে পড়ে কি-না একবার মাত্র দেখিয়া বলা শক্ত । প্রতি দরজার মুখের কাছেই প্রতিবাসীর স্ত্রাস্তাকুড় পথিকদের অনেক কষ্টে বাকিয়া চুরিয়া ডিঙ্গাইয়া পা ফেলিবার জন্য এক বিঘং পরিমাণ পরিষ্কার ভূমিখণ্ড প্রতি পাদক্ষেপে আবিষ্কার করিয়া চলিতে হয়। সেটুকুও শুষ্ক নয়, এমনই দুর্ভাগ্য। পুরানো দু-তিন মহল একটি বাড়ির সাম্নে একটা মোটর গাড়ী আসিয়া থামিল। কয়েকটি বালিক উলঙ্গ শিশু কোলে এবং হাতে ধরিয়া গাড়ী দেখিতে একেবারে সেই আবর্জনার রাশির ভিতর আসিয়া দাড়াইল। খোলা চুলের উপর ঘোমটা টানিয়া শোকক্লিষ্ট সাশ্রনয়ন কল্যাণী একটি ছেলের হাত ধরিয়া গাড়ী হইতে নামিল। পথের লোকের সকৌতুক দুটি এড়াইবার জন্য সে কল্যাণীকে প্রায় টানিয়া উঠানের ভিতর লইয়া গেল। একটা ছোট উঠানের পর একটুখানি পায়ে-চল বাক পথ পার হইয়া আর একটা বঁধানে উঠান। তাঁহারই প্রাস্তে কল্যাণীদের বাড়ির অংশ । উপরের একখানি ঘর ছাড়া এদিকটা সবই একতলা । কল্যাণী সোজা উপরে গিয়া নিজের ঘরের মেঝেতে লুটাইয়া পড়িল। সে সব শেষ করিম আসিয়াছে। শুধু মা’র মৃত্যু নয়, শ্রাদ্ধ শাস্তি সব । যত দিন শ্রাদ্ধ হয় নাই, মনে হইত মার পীড়া, মা’র মৃত্যু যেন একটা দুঃস্বপ্নের বিভীষিক মাত্র। সত্য সত্য মা ধেন কোথায় হাওয়া খাইতে গিয়াছেন, আবার কখন অলক্ষিতে আপনার ঘরে ঢুকিয় পুরানো সোনার চশম জোড়া পরিয়া শ্বেত পাথরের চৌকির পাশে ঝুঁকিয়া বসিয়া সংসারের হিসাব লিখিতে থাকিবেন, নক্স ত তসরের থান পরিয়া নিভৃতে একমনে কালো পাথরের উপর মটর ডালের বড়ি দিতে থাকিবেন, অথবা হয়ত দেখা যাইবে মা খাটে গুইমা পাকাচুল-সন্ধানে-নিরতা বুলবুলকে - পাড়াগায়ের নীলকণ্ঠের যাত্রার গান শুনাইতেছেন। মা’র তীক্ষ মধুর কণ্ঠস্বর কেন হঠাৎ স্পষ্ট কানে বাজিয়া উঠিত। যেন মনে হইত ওই আলিসার উপর মা'র শাদা কাপড়খানা এখনও উড়িতেছে। গান শেষ না করিয়াই এই বুঝি মা বৃষ্টির ভয়ে কাপড় তুলিতে চলিলেন। পিঠ ভরা এলোচুলের উপর বৃটির ফোটা মুক্তার মত ঝরিয়া পড়িল । কিন্তু হায়, কাল যে পাঁচ-ছয় শত লোক মিলিয়া খাইয় দাইয়া হাসিম কাদিয়া বকিয়া বকাইয়া হাজার রকমে কল্যাণীর চেতন ফিরাইয়া দিয়াছে। মা নাই, নাই, নাই, মা তাহার চিরদিনের মত বিদায় লইয়াছে। আর সে বাড়িতে থাকা যায় না। মা'র মৃত্যুর দিনটা যত পিছনে চলিয়া যাইতেছিল ততই মমতা দিয়া মৃত্যু-ক্ষতকে ঢাকা দিয়া বাড়ির প্রতি কোণে কোণে তাহার এতকালের মাকে সে আবার সকলৰূপে গড়িয়া দেখিতেছিল। কাল তাহার মায়ায়-গড় সে মাতৃমূৰ্ত্তি হাজার লোকে টানিয়া ফেলিয়া দিয়াছে। তাই সে দরে পলাষ্টয়া আসিয়াছে। এখান হষ্টতে আজ চৌদ্দ বৎসর সে তাহার মাকে মানস-চক্ষে যখন যেমন খুশী তেমনি সহস্ৰ কাজে ঘুরিতে দেখিয়াছে। আবার তেমনি করিয়া এষ্ট দর হইতে সে দেখিবে তাহার চিরজীবন্ত কৰ্ম্মময়ী মাকে । মুত্ত্বার দুঃসহ রূপ এই দূরত্বের ছায়ায় স্নান হষ্টয়া মিলাষ্টয়া থাকিবে। কল্যাণী উঠিয়া বসিল। এমন করিয়া ধরাশযা মঠস্থা পড়িয়া থাকিলে হয়ত আবার দশজন সাম্ভুনা দিতে আসিয়া তাহাকে ঘৃণা দিয়া মারিবে। ঘরে কয়দিন হাত পড়ে নাই, বিছানার চাদরটা অত্যন্ত ময়লা, আলনায় কুড়ি দিনের কাপড় ঝুলিতেছে, জিনিষপত্রে সাত পুরু ধূলা, এইগুলাই না হয় ঠিক করা যাক্ । জানলার পাশ দিয়া দুই-একজন যাওয়া আসা করিতেছিল, কল্যাণীকে গম্ভীর মুখে কাজে মগ্ন দেখিয়া কেহ ভিতরে ঢুকিতে সাহস করিল না। অতি-পরিচিত পদশবা পিছনে শোনা গেল। কল্যাণী বালিশে পরিষ্কার ওয়াড় পরাইতেছিল, মুখ তুলিল না। সে আসিয়া পিছন হইতে কাধের উপর ধীরে হাত রাখিয়া বলিল, “এসেই অমনি কাজ-কৰ্ম্ম না হয় নাই করলে ও পড়ে থাক্ গিয়ে। এস এইখানে একটু বসি ।” কল্যাণী দাড়াইয়া দাড়াইম্বাই স্বামীর কাধে মাথা রাখিয়া কাদিয়া ভাসাইয়া দিল । স্বামী তাহাকে খাটের উপর কসাইম্বা মাথায় হাত দিয়া বলিলেন, “বাইরে কাজে জড়িয়ে গিয়ে জামার শেষ সময় একবার দেখাও হ’ল না । বড় দুঃখ থেকে গেল। যাবার সময় হয়েছিল গিয়েছেন, তোমাদের সকলকে রেখে গেলেন,