পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কান্তিক এ ত ভাগ্যের কথা, এতে অধীর হোমো না কল্যাণী । মামুষের মন দুঃখ পায় ; কিন্তু ভেবে দেখ এতে দুঃখের কি কিছু আছে ?” কল্যাণী কাদিতে কাদিতে বলিল, “ম যাওয়ার চেয়ে বড় দুঃখ মেয়েমানুষের আর কিছু নেই।” স্বামী বলিলেন, “আছে বই কি । ভগবান তোমাকে সে দুর্ভাগ্য দেন নি, তাই বুঝতে পারছ না আজ। মনটা ঠাণ্ড হ'লে পৃথিবীতে কোন দুঃখ সবার বড় আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে ।” - স্বামীর উপদেশে সত্য থাকিলেও কল্যাণীর শোকক্লিষ্ট হৃদয়ে কথাটা তীরের খোচার মত দুঃসহ লাগিল। সে কোনো জবাব দিল না, শুধু “ম, মাগো" বলিয়া দুইহাতে মুখখান। একবার ঢাকিল। হীরালাল সাম্বনা দিবার কোনো চেষ্টা না করিয়া পাট ছাড়িয়া উঠিয় বাহিরে চলিয় গেল। নিঃসঙ্গ কল্যাণী আবার উঠিয় ঘরের কাজে মন দিল । ঘর গোছাইয়া স্বামীর বিকালের জলখাবার সাজাইয়া আসন পাতিয়া সে হীরালালকে ডাকিতে গেল। খাষ্টতে বসিয়া হীরালাল অন্যদিন পারত পক্ষে কথা বলে না । কিন্তু আজ এতদিন পরে কল্যাণী বাড়ি আসিয়াছে, তাহার কাছে একেবারে চুপ করিয়া থাকিতে নিজেরই অস্বস্তি লাগিতেছিল। হীরালাল বলিল, “ মা’র বুদ্ধি এত বয়সেও আশ্চৰ্য্য তীক্ষ ছিল। শোবার আগের দিন পৰ্য্যন্ত না কি খাতাপত্র সব নিজে দেখে লিখে গিয়েছেন।” কল্যাণী উৎসাহিত হইয়া বলিল, “ষ্ঠ্য, আমার জ্ঞান হয়ে অবধি মাকে কখনও একদিনের একটা হিসাব বাদ দিতে দেখি নি।” হীরালাল বলিল, “অমন বিবেচনাও স্ত্রীলোকের প্রায় দেখা যায় না। তার উপর ত সজ্ঞানেই প্রায় গিয়েছেন।” কল্যাণী বলিল, “সত্যি, যাকে যা বল্বার কইবার কোনোটি এতটুকু ভোলেন নি ; শুনলে অবাকৃ হবে ।” হীরালাল উৎসাহিত হইয়া বলিল, ‘সংসারের সব দিকে নিশ্চয়ই স্বব্যবস্থা করে গিয়েছেন। পরে গোলমাল বাধবার পথ রেখে কি আর তিনি যাবেন ?” এতটা বৈষয়িক প্রশ্নে কল্যাণীর সদ্য-শোকাহত মন সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল। স্বামী যে ক্রমেই স্পষ্টতর করিয়া ঘরের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটির খোজ করিবেন বুঝিতে ज्यूषज़ ፃዊ পারিয়া তাহার মন খুলিয়া কথা বলিবার স্পৃহা কমিয়া আসিতেছিল। তাহার মা না হইয়া দূরসম্পৰ্কীয় কোনো বর্ষীয়সীর কথা হইলে স্পষ্ট বৈষয়িক প্রশ্নে মৃত্যুর মৰ্যদাহানি নিশ্চয় সে অনুভব করিত না। কিন্তু এই নিকটতম সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বিয়োগবেদনকেই বহুদিন ধরিয়া নানা সুখদুঃখ হাসিকান্ন প্রেম ও ভক্তির বিচিত্র রসের ভিতর দিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া পাইতে ইচ্ছা । করিতেছিল। অসংখ্য স্মৃতির স্পর্শে বেদনা যত গভীর হইতে গভীরতর রূপে বুার বার জাগিয় উঠবে, ততই যেন তাহার মাতৃঋণের বোঝ একটু একটু করিয়া হাল্কা হইবে । কথার জবাব ন পাইয় হীরালাল বলিল, “সন্তান বলতে ত মাত্র তোমর দুই ভাইবোন ; তাছাড়া যুর ঞ্জিনিষপত্র, স্বাধন, সে ত মেয়েই পায়। এর ভিতর গোলমালের ত কোনো কথাই নেই। তবে তোমার অবস্থা ত ভাল নয়, সেটাও যদি বিবেচনা কবে থাকেন ত যথার্থ কাজ হয়েছে।” . কল্যাণী একটু বিরক্তির স্বরেই বলিল, “আমার আবার অবস্থা ? ছেলে না পিলে না যে তার জন্তে ভাবতে হবে ? মেয়েছেলের বিয়ে দিয়ে যাওয়া মানেই তার একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া । তার উপর আবার বেশী কিছুর আশা কেন আমি করতে যাব ? অবস্থা আমার ঘেমনই হোক্ সে আমারই অদৃষ্ট; তার জন্যে তারা কেন দামী হতে যাবেন?” হীরালাল বলিল, “ছেলেপিলে আজ নেই বলে কোনোদিন থাকৃবে না এমন ত কথা নেই। তাছাড়া যেটা আছে সেটাকে অষ্টপ্রহর অত পর নাই ভাবলে । আমি চোখ বুজলে তুমিই ত তার সব । তখন তার ভাল কিসে হয় দেখবে না ?” কল্যাণী বলিল, “ওসব কথা বলে আর আমায় মড়ার উপর খাড়ার ঘা দিও না। ও আমারই ত ছেলে, ওর জন্যে প্রাণপাত আমি করবই ; কিন্তু যারা ওর পর তাদের টাকা দিয়ে ত ওকে সুখে রাখতে চাওয়া যায় না।” হীরালাল বলিল, “প্রাণটা সত্যি সত্যি পাত করতে হলে আর টাকাটাকে অত অবহেলার জিনিষ মনে হবে না। ও ছেলেটাত পর, তার জন্যে সত্যিই কিছু বলছি না । - তোমারই পেটে ভাত না পড়লে ও সব ভাবুকতা আর । টিকবে না। মার কাছে হাসিমুখে নিজের দাবি বলে যা