পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(t8 সংস্কারটাকে ত ছেকে ফেলতে পারিনে। কাজেই পরের দিন ভোর-বেলাতেই এক সেবের বেশি ছাগদুগ্ধ ভিন তোলার বেশি রজত খরচ করে’ হাফ ছেড়ে বঁচি । এই ত গেল আমাদের সবচেয়ে প্রধান সমস্ত। যে বুদ্ধির বাস্তায় কৰ্ম্মের রাস্তায় মানুষ পরস্পবে মিলে সমৃদ্ধির পথে চলতে পারে সেইখানে খুটি গেড়ে থাকার সমস্ত। ; যাদের মধ্যে সৰ্ব্বদা আনাগেনার পথ সকল রকমে খোলসা রাখতে হবে তাদের মধ্যে অসংখ্য খুঁটির বেড়া তুলে’ পরস্পরের ভেদকে বহুধা ও স্থায়ী করে তোলার সমস্যা ; বুদ্ধির যোগে যেখানে সকলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, অবুদ্ধিব অচল বাধায় সেখানে সকলের সঙ্গে চিববিচ্ছিন্ন হবার সমস্ত ; খুটিরূপিণী ভেদবুদ্ধির কাছে ভক্তিভরে বিচার-বিবেককে বলিদান করবার সমস্ত্য ! ভাবুক লোকে এই সমস্তার সাম্নে দাড়িয়ে ছলছল নেত্রে বলেন, আহ, এখানে ভক্তিটাই হ’ল বড় কথা এবং সুন্দর কথা, খুটিটা ত উপলক্ষ্য ; আমাদের মত আধুনিকের বলে, এখানে বুদ্ধিটাই হ’ল বড় কথা, সুন্দর কথা, খুটিটা ৪ জঞ্জাল, ভক্তিটাও জঞ্জাল –কিন্তু আঙ্গি, গৃহিণী যখন অশুভআশঙ্কায় করজোড়ে গলবস্ত্র হয়ে দেবতার কাছে নিজেব ডান-হাত বাধা রেথে আসেন, তার কি অনিৰ্ব্বচনীয় মাধুর্য্য! আধুনিক বলে, যেখানে ডান-হাত উৎসর্গ কর। সার্থক, যেখানে তাতে নেই অন্ধুতা, যেখানে তাতে আছে সাহস, সেখানেই তার মাধুর্য্য –কিন্তু যেখানে অশুভআশঙ্কা মুঢ়তা-রূপে দীনতা-রূপে তfব-কুশ্ৰী-কবলে সেই মাধুর্য্যকে গিলে খাচ্চে, সুন্দর সেখানে পরাস্ত, কল্যাণ সেখানে পরহিত । আমাদের আর-একটি - প্রধান সমস্ত। হিন্দুমুসলমান সমস্যা। এই সমস্তার সমাধান এত দুঃসাধ্য তার কারণ দুই পক্ষই মুখ্যত আপন আপন ধৰ্ম্মের দ্বারাই অচলভাবে আপনাদের সীমা-নির্দেশ করেচে। সেই ধৰ্ম্মই তাদের মানববিশ্বকে শাদা-কালো ছক কেটে দুই সুস্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করেচে, আত্ম ও পর । সংসারে সর্বত্রই আত্মপরের মধ্যে কিছু-পরিমাণে স্বাভাবিক ভেদ আছে। সেই ভেদের পরিমাণট। অতিমাত্র হলেই তাতে অকল্যাণ হয় । বুশ ম্যান জাতীয় লোক পরকে দেখবামাত্র তাকে প্রবাসী=অগ্রহায়ণ, ১৩৩e . [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড নিৰ্ব্বিশেষে বিষবাণ দিয়ে মারে। তার ফল হচ্চে পরের সঙ্গে সত্য মিলনে মানুষের যে-মনুষ্যত্ব পরিস্ফুট হয় বুশ ম্যানের তা হতে পারেনি, সে চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে । এই ভেদের মাত্র যে-জাতির মধ্যে অস্তরের দিক্‌ থেকে যতই কমে এসেচে সেই জাতি ততই উচ্চ-শ্রেণীর মঙ্গুষ্যত্বে উত্তীর্ণ হতে পেরেচে। সে-জাতি সকলের সঙ্গে যোগে চিন্তার কৰ্ম্মের চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করতে পেরেচে। হিন্দু নিজেকে ধৰ্ম্মপ্রাণ বলে’ পরিচয় দেয়, মুসলমানও তাই দেয। অর্থাং ধৰ্ম্মেব বাহিরে উভয়েরই জীবনের অতি অল্প অংশই অবশিষ্ট থাকে । এই কারণে এরা নিজ নিজ ধৰ্ম্ম দ্বারাই পরস্পরকে ও জগতের অন্য সকলকে যথাসম্ভব দূরে ঠেকিয়ে রাখে। এই যে দূৰ্বত্বের ভেদ এর নিজেদের চারি দিকে অত্যন্ত মজ লং করে গেঁথে রেখেচে, এতে করে সকল মানুষের সঙ্গে সত্য-যোগে মনুষ্যত্বের ঘে প্রসার হয় তা এদের মধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়েচে । ধৰ্ম্মগত ভেদবুদ্ধি সত্যেব অসীম স্বরূপ থেকে এদের সঙ্কীর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কবে" এই জন্যেই মাতৃযের সঙ্গে ব্যবহারে নিত্য-সত্যের চেয়ে বাহ-বিধান কৃত্রিম-প্রথ৷ এদের মধ্যে এত প্রবল হয়ে উঠেচে । পূর্বেই বলেচি–মানব-জগৎ এই দুই সম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মেব দ্বারাই আত্ম ও পর এই দুই ভাগে অতিমাত্রায় বিভক্ত হয়েচে । সেই পর চিরকালই পর হয়ে থাক হিন্দুর এই ব্যবস্থা, সেই পর, সেই ম্লেচ্ছ বা অস্ত্যজ কোনো ফাকে তার ঘরের মধ্যে এসে ক না পড়ে এই তার ইচ্ছা । মুসলমানের তরফে ঠিক এর উন্টে। ধৰ্ম্মগণ্ডীর বহির্বত্তী পরকে সে খুব তীব্র ভাবেই পর বলে’ জানে, কিন্তু সেই পরকে সেই কাফেরকে বরাবরকার মত ঘরে টেনে এনে আটক করতে পারলেই সে খুলী। এদের শাস্ত্রে কোনো একটা খটে-বেব-করা শ্লোক কি বলে, সেটা কাজের কথা নয়, কিন্তু লোকব্যবহারে এদের এক পক্ষ শত শত বৎসর ধরে ধৰ্ম্মকে আপন দুর্গম দুর্গ করে পরকে দূরে ঠেকিয়ে আত্মগত হয়ে আছে, আর অপর পক্ষ ধৰ্ম্মকে আপন ব্যুহ বানিয়ে পরকে আক্রমণ করে তাকে ছিনিয়ে এনেচে । এতে করে এদের মনঃপ্রকৃতি দুই রকম ছাদের ভেদ রেখেচে ।