পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ֆՆՑ কৌতুহলী স্বরেশ্বর স্বমিত্রার দিকে চাহিয়া আগ্ৰহভরে কহিল, “কই দেখি, দেখি ! নারীর অধিকারের বিষয়ে কি ওকালতী করেছেন দেখি ।” স্বমিত্রা আরক্ত মুখে কহিল, “না, না, সে কিছুই হয়নি, সে আপনার ভাল লাগবে না।" স্বরেশ্বর স্মিতমুখে কহিল, “বিমান-বাবুর যখন এত ভাল লেগেছে তখন আমার ভাল লাগবে না বলছেন কেন ? আপনি কি বলতে চান যে বিমানবাবুর পছন্দ আর মতের কোনও মূলা নেই, না আমার রস-বোধের কিছু মাত্র শক্তি নেই "- - অপ্রতিভ মুখে স্থমিত্ৰা কহিল, “ন, তা বলছিনে। স্বরেশ্বর হাসিয়া কহিল, “ তবে বিমান-বাবুর আর. আমার মধ্যে প্রভেদ করছেন কেন ? প্রবন্ধটা র্তাকে যখন দেখিয়েছেন তখন আমাকে দেখাতে আপত্তি’ কি ?” - স্থমিত্র তাড়াতাড়ি কহিল, “আমি দেখাইনি, তিনি নিজেই দেখেছেন।” - হুরেশ্বর তেমনি হাসিয়া কহিল, “আমাকে না হয় আপনি নিজেই দেখান। সব বিষয়েই যে বিমান-বাবু আর আমার মধ্যে অভিন্ন ব্যবহার করতে হবে তার কি মানে আছে । এই ক্রতপরিবর্তিত যুক্তিতে কৌতুকাম্বিত হইয়া স্বমিত্রা হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, “ন, তার কোনো মানে নেই ।” তাহার পর আর বাদামুবাদ না করিয়া মাসিক পত্ৰখানা লইয়া আসিয়া সুরেশ্বরের হস্তে দিল । স্বরেশ্বর সুমিত্রার প্রবন্ধটি বাহির করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল এবং অনতিবিলম্বে তন্মধ্যে গভীরভাবে নিবিষ্ট হইয়া পড়িল ৷ যতক্ষণ ধরিয়া সুরেশ্বর পাঠ করিল স্থমিত্রা অধীর কম্পিত হৃদয়ে একাগ্রচিত্তে অপেক্ষা করিয়া রহিল। তৎকালে বিমানবিহারী তাহার সহিত নানা বিষয়ে কথা কহিয়া যাইতেছিল, কিন্তু চেষ্ট এবং ইচ্ছা সত্বেও সে তাহাতে মনঃসংযোগ করিতে পারিতেছিল না। পাঠাস্তে স্বরেশ্বর কিরূপ সমালোচনা করিবে,—নিন্দ করিবে, না স্বখ্যাতি করিবে, সেই চিন্তা তাহাকে উদ্ভান্ত করিয়া রাখিয়াছিল ; ক্ষণপূৰ্ব্বে বিমানবিহারী যে অমিত প্রবাস,=অগ্রহায়ণ, ১৩৩• ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড এবং অমিশ্র প্রশংসা করিয়ছিল তাহা তাহাকে কিছুমাত্র আশ্বাস দিতেছিল না । • . পাঠ শেষ হইলে সুরেশ্বর সুমিত্রার দিকে চাহিয়া মৃদ্ধ হান্ত করিয়া কহিল, “এটা কিন্তু আপনার ঠিক ওকালতী হয়নি ; এটা পুরুষ-জাতির সঙ্গে কলহ হয়েছে। কলহট আবার কিরকম জানেন ? দেহের বিবিধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে অধিকার-ভোগ আর অধিকার-ভেদ নিয়ে কলহের মত। মুখ বসে’ বসে খায় বলে হাত একবার বিদ্রোহী হয়ে উঠে বলেছিল, যত রসাস্বাদন মুখ করবে আর আমি পরিশ্রম করে তাকে আহার জোগাব ? তা হবে না। রই লাম আমি ঝুলে’ আর উপর দিকে উঠছিনে ? পরে দেখা গিয়েছিল যে বিদ্রোহের ফলে মুখের চেয়ে হাতের লাঞ্ছনা কম হয়নি ; মুখ পৰ্য্যন্ত না ওঠার ফলে মুখ পৰ্য্যস্ত ওঠ বার শক্তিই তার লুপ্ত হয়েছিল। তেমনি অন্নপূর্ণর বৃত্তিকে দাস্যবৃত্তি বলে’ ভুল করে’ পুরুষ-জাতিকে আপনার যদি শুকিয়ে মারতে চেষ্টা করেন, ঠিক জানবেন তাতে আপনারাও পুষ্ট হবেন না।” বলিয়া সুরেশ্বর মৃদু মৃদু হাসিতে লাগিল । স্বরেশ্বরের এই বিরুদ্ধ সমালোচনায় স্থমিত্রার মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল। প্রথমটা তাহার মুখ দিয়া প্রতিবাদের কোনো বাক্য বহির্গত হইল না, কিন্তু ক্ষণপরে সে নিজেকে দৃঢ় করিয়া লইয়া বলিল, “আপনাদের এই দম্ভ, এই অহঙ্কারই আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রথম অভিযোগ। আপনারা যে মনে করেন আপনারা উপার্জন করে’ এনে না দিলে আমাদের শুকিয়ে মরতে হবে, এইটেই আমাদের প্রতি আপনাদের সবচেয়ে বড় অত্যাচার ।” স্কুরেশ্বর শাস্ত-সংযতভাবে কহিল, “ঠিক বিপরীত। আমরা ফে ও-রকম মনে করি আপনাদের এই ধারণাই আমাদের প্রতি আপনাদের সবচেয়ে বড় অবিচার । শক্তি আর প্রকৃতির বিভিন্নতার অনুরোধে এতদিন স্ত্রীপুরুষের মধ্যে যে অধিকার ভাগ হয়ে এসেছে তা নিয়ে যদি আপনার মামলা করতে চান ত স্বষ্টিকৰ্ত্তাকে প্রতিবাদী করবেন, পুরুষদের করবেন না।” স্বমিত্রা উত্তেজিত হইয়া বলিল, “কিন্তু আমাদের শক্তি আর প্রকৃতির জন্যে কি আপনারাই দায়ী নন ? চিরদিন