bo প্রবাসী— কীৰ্ত্তিক, ১৩৩• বিমানবিহারীর চিত্ত সুরেশ্বরের প্রতি এমনই একটু বিরূপ হইয়া ছিল ; তাহার উপর মুমিত্রার খদ্দর পরিধান ও তৎসংক্রান্ত স্বরেশ্বরের এই সোল্লাস কথোপকথন তাহার অসহ হইয়া উঠিল । সে ঈষং বিরক্তিকটু কণ্ঠে কহিল,—“কিন্তু দেশলায়ের কাঠি জলে না পড়ে বারুদের স্তুপে পড়লে কি পরমার্থ লাভ হয় ত৷ ত বুঝতে পারছিনে স্বরেশ্বর-বাৰু!” স্বরেশ্বর বিমানবিহারীব দিকে ফিরিয়া স্মিতমুখে বলিল,—“নিভে যায় না । দেশলাযের কাঠিব পক্ষে জলে পড়ার মত দুৰ্গতি আর নেই ভ। মানেন ত ?” বিমান একটু উত্তেজনার সহিত কহিল,-“কিন্তু ত ই বলে কি বারুদের স্তুপে পড়াই তার চরম সার্থকতা ?” সুরেশ্বর হাসিয়া বলিল,—“নয় ? যার কৰ্ম্ম জালানে। আর যার ধৰ্ম্ম জল, তাদের সংযোগই ত পরস্পবের সার্থকতা। আগুন • থাকূলে বারুদেব সর্থকতাই থাকৃত না । ধরুন আপনি একজন গুরু, আপনাব জ্ঞানের শিখটি তা হ'লেই সার্থক হয়, যদি, আপনাব শিষ্যের মধ্যে সেই শিখটি থেকে ধরিয়ে নেবাব মত কোনো দাহ্য পদার্থ থাকে । বিমান এ কথার কোনও উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেই জয়ন্তী কহিলেন,—“ন, ন, বিমান, তুমি একজন গবমেণ্ট - অফিসার, এ-রকম করে আগুন আর বারুদের কথা নিয়ে তোমার থাকা উচিত নয় । তোমার যতট। সাবধান হ’য়ে চলা দরকার তার চেয়ে তুমি অনেক অসাবধানী ।” কন্যাকে প্রহার করিয়া বধূকে যেটুকু শিক্ষা দেওয়া হইল তাহ বুঝিতে সুরেশ্বরের বিলম্ব হইল না। কিন্তু তাহার চিত্তের মধ্যে আনন্দ ও উল্লাসের যে বিপুল প্রবাহ বহিতেছিল তন্মধ্যে এইটুকু মালিন্য কিছুমাত্র রেখাপাত করিল না। তাহার মনে হুইতেছিল সে অাজ সফলকাম, সে আজ বিজয়ী, তাই পরাজিতের কটুক্তিকে জয়লাভের অপরিহার্য্য অংশ বিবেচনা করিয়া সে অতি সহজেই তাহ উপেক্ষা করিল। বিমান কোনও কথা কহিবার পূর্বেই স্বরেশ্বর স্মিতমুখে কহিল,—“সত্যি ! আপনি আমার বন্ধু, তা ছাড়াও যে আপনার অন্যরকম সত্তা আছে তা প্রায়ই ভুলে যাই ।” [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড বিমান হাসিয়া কহিল,—“সে সত্তায় আমি কি আপনার শক্র ?” স্বরেশ্বর কোন উত্তর দিবার পূর্বেই প্রমদাচরণ কক্ষে প্রবেশ করিলেন । প্রমদাচরণ আসিবfর পরে প্রসঙ্গক্রমে খন্দরের কথাট। পুনরায় উঠিল । প্রমদাচরণ আশঙ্ক। করিয়াছিলেন যে আসিয়া জয়ন্তীর বিদ্রোহমূৰ্ত্তি দেখিবেন এবং অবশ্যম্ভাবী সংগ্রামেব বিরুদ্ধে প্রয়োগেব জন্য মনে মনে কতকগুলি যুক্তি এবং তর্ক স্থিব করিয়ু আসিয়াছিলেন, কিন্তু আন্দোলনকালে জঘন্তীব শাস্তু স্তব্ধ ভাব নিরীক্ষণ করি। র্তাহার মানসিক ভাব জয়ন্তীর প্রতি কতজ্ঞতায় পরিবর্তিত হইয় গেল। জয়ন্তীর সৌজন্যের ঋণ পরিশোধ করিবাব জন্যই তিনি খন্দরের প্রতিকুল পক্ষ অবলম্বন গ্রহণ করিলেন । তখন বিমানের তর্কের উত্তরে স্বরেশ্বর বমিতেছিল,— “কিন্তু ঘাই বলুন, থদরের প্রতি গবমেণ্টেব বিরুদ্ধাচরণ কিছুতেই সমর্থন করা যায় না।” 始 বিমান কহিল,—“মায় । গঙ্গ। আর গঙ্গাজল হিন্দুমাত্রেরই পবিত্র জিনিস । কিন্তু তাই বলে’ কোনে। হিন্দুই ঘরের মধ্যে গঙ্গাজলের বন্য। কিছুতেই পছন্দ করে না । খদ্দর আসলে মন্দ জিনিস কোন মতেই নয় ; গবমেণ্ট ও তা মনে করেন না । কিন্তু খদ্দরকে যদি গবমেণ্ট কে বিপন্ন করবার একটা উপায় করে তোলা হয়, ত। হ’লে, গবমেণ্ট, খদ্দরকে ঠিক তেমনি করে রোধ করতে পারেন যেমন করে' হিন্দু গঙ্গাজলের বন্যাকে রোধ করে ।” বিমানের যুক্তি পছন্দ করিয়া প্রমদাচরণ খুলী হইয়। দুলিয়। উঠিলেন, তাহার পর কহিলেন,—“ঠিক কথা, ভাল জিনিসের ক্রিয়। যদি মন্দ হ’য়ে ওঠে তা হ’লে সে জিনিসটাকে অার ভাল বলা চলে না । সে হিসাবে গবমেণ্টের খদ্দর-বিদ্বেষ অন্যায় বলা যায় না ।” কিন্তু এই কৃতজ্ঞতা-প্রদর্শনে অভীষ্ট ফল ফলিল না । এতক্ষণ জয়ন্তী বিরক্ত হইয়া নিৰ্ব্বাক্ ছিলেন, কিন্তু অপরাধী স্বামীর মুখে এই বিপরীত উক্তি শুনিয়া তাহার অসহ বোধ হইল। ঈধং ব্যঙ্গভরে কহিলেন,—
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।