পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] নীল আকাশ সবুজ মাঠের উপর কেমন উপুড় হইয়া আছে ! ওম, পানকৌড়ির ঝাক চরের উপর বসিয়া বসিয়া কেমন ঝিমায় ! কলিকাতার বউটি বলিল—এস ভাই, আমরা একটা কিছু পাতাই " কেমন ? • স্বশীলা খুসি হইয়া বলিল খুব ভাল ভাই, কি পাতাব বলো— —এক কাজ করি এস —আসতে আসতে নদীর ধারে যে মৌরীফুল দেখে এলাম, এস আমরা দুজনে মৌরীফুল পাতাই । কেমন ? স্বশীলা আহলাদের সঙ্গে এ প্রস্তাবে সম্মতি দিল । নদী হইতে অঞ্জলি করিয়া জল তুলিয়। তাহাবা মৌরীফুল পাতাইল । এমন সময় মোক্ষদা ডাকিলেন—বেীমারা এদিকে மு: | তাহারা গিয়া দেখিল গাছতলায় অনেক লোক – সেদিন পুঞ্জ দিতে অনেক লোক আসিয়াছিল। প্রক গু বটগাছ, তার তলায় ভাঙা ইটের মন্দির । গাছতলা হইতে একটু দূরে এক বুড়ী নান ঔষধ বিক্রয় করিতেছে। স্বশীল। ও তাহার সঙ্গিনী সেখানে গিয়া জিজ্ঞাস করিয়া জানিল, রোগ সারা, ছেলে হওয়া হইতে স্বরু করিয়া সকলরকমের ঔষধই আছে, গরু হরাইলে খুজিয়। বাহির করিবার পৰ্য্যস্ত । মেয়ের সেখানে ভিড় করিয়া দাড়াইয়া ঔষধ কিনিতেছে । স্বশীলার সঙ্গিনী হাসিয় তাহার হাত ধরিয়া টানিয়া তাহাকে সেখান হইতে মন্দিরের দিকে লইয়া চলিল, বলিল—চলে। মৌরীফুল দেখিগে কেমন পূজো হচ্চে । একটুখানি মন্দিরে দাড়াইয়। স্বশীল একটা ছুতায় সেখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়া ঔষধ-বেচা বুড়ীর নিকট দাড়াইল । সেখানে তখন কেহ ছিল না, বুড়ী বলিল—কি চাই ? - স্বশীলার মুখ লজ্জায় আরক্ত হইয়া উঠিল । বুড়ী বলিল—“আর বলতে হবে না মা-ঠাকুরুণ । তা তোমার তো এখনও ছেলে-পিলে হবার বয়েস যায়নি, ওঁ-বয়েসে অনেকের— e মৌরীফুল እዋgo স্বশীল সলজ্জভাবে বলিল—ত নয় । বুড়ী বলিল—এবার বুঝলাম মা-ঠাকুরুণ-ত যদি হয়, তা হ'লে তোমার সোয়ামীর বার-মুখো টান আছে। একটা ওষুধ দিই, নিয়ে যাও, এক মাসের মধ্যে সব ঠিক হ’য়ে যাবে—ওরকম কত হয় মা-ঠাকুরুণ— বুড়ী একট। শিকড় তুলিয়। বলিল—এই নাও, বেটে খাইয়ে দি ও । কেউ টের না পায়, টের পেলে আর ফল হবে না। আট আনা লাগবে । - স্বামীর বারমুখে টান আছে—একথা শুনিয়া স্বশীল খুব দমিয়া গেল। তাহার আঁচলে একটা আধুলী বাধা ছিল, আজ কার দিনে জিনিষট-আসটা কিনিবার জন্য সে ইহা বাড়ী হইতে শাশুড়ীকে লুকাইয়া আনিয়াছিল। বাড়ীর বার হওয়া তে। বড় ঘটে না, কাজেই এট। তাহার পক্ষে একটা উংসবের দিন। আধুলীটি শাশুড়ীকে লুকাইয়া আনিবার কারণ—মোক্ষদ। ঠাকুরুণ জানিতে পারিলে ইহা এতক্ষণ তাহার আঁচলে থাকিত না । সুশীলা আঁচল হইতে আধুলীটি খুলিয়া বুড়ীকে দিল এবং খাওয়াইবার প্রণালী জানিয়া লইয়া শিকড়টি কাপড়ের মধ্যে গোপনে বাধিয়া লইল । পূজা দেওয়া সাঙ্গ হইয়া গেল। সকলে আবার আসিয়া নৌকায় উঠিল । গ্রামের ঘাটের কাছাকাছি আসিলে সুশীলা বলিল,—ভাই, তুমি এখন দিন কতক আছ তো ? —না ভাই, আমি কাল কি পরশু চলে’ যাব । তা হ’লেও তোমায় ভুলবে। না মৌরীফুল, তোমার মুখখানি আমার মনে থাকৃবে ভাই-চিঠি পত্র দেবে তো ? এবার পাড়াগায়ে এসে তোমায় বুড়িয়ে পেলাম—তোমায় কখনো ভুলব না। সুশীলার চোখে জল আসিল, এত মিষ্ট কথা তাহাকে কে বলে ? সে কেবল শুনিয়া আসিতেছে সে দুষ্ট, একগুঁয়ে ঝগড়াটে । তাহার হাতে একটি সোনার আংটি ছিল, ইহা তার মায়ের দেওয়া আংটি, প্রথম বিবাহের পর তাহার মা তাহার হাতে এটি পরাইয়া দিয়াছিলেন । সেটি হাত হইতে খুলিয়া সে সঙ্গিনীর হাত ধরিয়া বলিল—দেখি ভাই