পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কি যেন একটা ফিরিয়া পাইবার আশায় তাড়াতাড়ি দ্বার খুলিলাম। দেখিলাম চপল। আলো-হাতে দ,ড়াইয়। আছে—সেই অতুল সৌন্দৰ্য্য, সেই অতুলনীয় দৃষ্টি। “আম্বন আমার ঘরে - বলিয়। সে আলো লইয়। অগ্রসর হইল। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাহার- পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলাম। হঠাৎ মনে হইল, “এ কী করিতেছি ! এই গভীর রাত্রে এক নারীর শয়নকক্ষে চলিয়াছি, যে নারীর দুস্কৃতির ইতিহাসের এক পৃষ্ঠ৷ এই মাত্র অমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি।” ভাবিলাম ফিরিয়া যাই—কিন্তু ততক্ষণে চপলাব শম্নকক্ষে আসিয়া প্রবেশ করিয়াছিলাম । টেবিলের উপর আলোট। রাধিয়। চপল এক পাশ্বে শির নত করিয় দাড়াইয়া বহিল । আমি ও অপর পাশ্বে দাড়াইয়ু তীক্ষ দৃষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয। বহিলাম। এক মিনিট দু’মিনিট করিয়া প্রায় পাচমিনিট নিঃশব্দে কাটিয়া গেল । আমি অধৈয্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমাকে এখানে ডকুলে কেন ?” ছু এক মূহুৰ্ত্ত সে কোন ও কথা কহিল না, তাহাব পব শির নত করিয়। খুব ধীরে ধীরে বলিল, “আপনি আমাকে ভালবাসেন ?” অন্ত সময় হইলে এই অবস্থায় এই অদ্ভুত প্রশ্নের কি উত্তর দিতাম জানি না ; কিন্তু আজ নাকি কিছু পুৰ্ব্বে বড় অধাত পাইয়াছিলাম, তাই তীক্ষ স্বরে বলিলাম, “ন, কোনদিন না !" এই কথায় চপল শির উন্নত করিয়া আমার প্রতি চাহিয়া দেখিল । তাহার চক্ষু বিস্ময়ে বিস্তৃত হইয়। পড়িয়াছিল, এ উত্তর বুঝি সে কোন দিনই আশ করে নাই । তাহার চোখ হঠাৎ ধারাল ছুরির মত চক্চক্‌ করিয়া উঠিল—-সে তাহার দৃষ্টি একবার ঘরের চতুর্দিকে ফিরাইয়া লইতেই তাহার দৃষ্টি পড়িল ঈষৎ উন্মুক্ত সেই জানালাটার দিকে । দু এক মুহূৰ্ত্ত সেই দিকে দৃষ্টি স্থির রাখিয়া সে যখন দৃষ্টি ফিরাইল তখন তাহাব ওষ্ঠে একটু মৃদু হাসির রেখা লাগিয়া আছে। আমার দিকে তাহার সেই অতুলনীয় চোখের দৃষ্টি ফিরাইয়া সে ঈষৎ হাসির সহিত বলিল, “সে আমার দাদা।” - নির্বাসিতের আত্মকথা Xసాలి আমি বিস্মিত হইয়া বলিলাম, “দাদ। —কে বীরেন ?” “না, তার ছোট, ধীরেন ।” *কই তাকে ত অমি-—” “ন দেখেননি। সব বলছি। কিন্তু তার পূৰ্ব্বে আমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিন ।” যে মোহময় আবেশটা এতক্ষণ ছুটিয়া গিয়াছিল সেট। আবার আমাকে চাপিস। পরিল । আমি বলিলাম, “তোমাব অল্পমান ঠিক।" ক্ষীণ হাসির একট। রেপ চপলাব ওষ্ঠে বিকশিত হইতে ন হইতেই মিলাইয় গেল । সে ও মস্তক নত করিয়া বলিল, “আমার ইদযের কথা না বললেও বুঝতে পেরেছেন বোধ হয় ।* সেদিন ঐ কথায় আমবি সমস্ত শরীরটা একটা পুলকের শিহরণে কম্পিত হইয়। উঠিয়াছিল, কিসের যেন একটা কুহকে আচ্ছন্ন হইয় পড়িয়াছিলাম। কিন্তু আজ মনে হইতেছে কুমাবীব প্রথম-প্রণয়-প্রকাশের ধরণটা বুঝি ঠিক ওরূপ নয। তাঙ্গর কণ্ঠস্বব সে সময অত স্পষ্ট সতেজ হওয়৷ সেন একটু কি বকম ! যাক সে কথা, দু’জনেই স্থান কাল ভুলিয়া নিজেব অন্তরের মধ্যে তলাইয়া গিয়াছিলীম ! মিনিট পাচ পর্বে চপলা বলিল, “আমরা মে শ্রেণীর ব্রাহ্মণ তাতে কন্যাপণ দিতে হয় জানেন ত ?” আমি আশ্চৰ্য্য হইয়। বলিলাম, “জানি। কেন ?” সে বলিল, “আমার ও একটা পণ আছে, সে পণ আপনাকে দিতে হবে ।” আমি বিস্মিত হইয়। বলিলাম, “কি পণ ?” চপল আমাক চোখের উপর চোখ রাখিয। বলিল, “বলছি। কিন্তু তার আগে আপনাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে সে পণ আপনি জীবন পণ ক’রেও দেবেন।” আমি কোন কথ। বলিতে পারিতেছিলাম ন । আমার নিকট এ কি এমন পণ চাৰ্য যাহার জন্য পূৰ্ব্বে হইতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করাইয়। লইতেছে। মাথাট। কেমন যেন গোলমাল হইয়। যাইতেছিল, এমন সময় চপল৷ ধীরে ধীরে আমার কাছে সরিয়া আসিয়া আমার একটা হাত ধরিয়া বলিল, “ভয় পাচ্ছ । ছিঃ ! তুমি ‘অশান্ত' না !”