পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] অন্ধকার শাখায় শুধু একটি আধটি হতোমপেচার ডাক শুনা যাইতেছিল। এই সময় বঙ্গসাহিত্য-ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র অবতীর্ণ হইলেন। তিনি চারিদিকের এই বিক্ষিপ্ততার মধ্য হইতে আহরণ করিয়া সাহিত্যকে প্রথম স্থায়ী করিলেন। কিন্তু তিনি তাহাকে স্থায়ী করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই । তাহাকে ধীরে ধীরে গতি প্রদান করিলেন, বঙ্গসাহিত্যের একটি নূতন ধারা প্রবত্তিত করিলেন। অবশু বঙ্কিমচন্দ্র একা এ-সমস্ত কাজ করেন নাই । তাহার সহিত সেই সময়ে কৃতকৰ্ম্ম বহু সহযোগীর মিলন ঘটিয়াছিল । নবীনচন্দ্র, রমেশচন্দ্র, হেমচন্দ্র, অক্ষয় সরকার, চন্দ্রনাথ বস্থ প্রভৃতি বহু কৃতী লেখক তাহার সহিত বঙ্গসাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। কিন্তু-সাহিত্যে এক এক যুগে এমন ঘটে, যে, একজন না থাকিলে আর সকলের থাকা বৃথা হইয়া যায়। কিছু আগে বা পরে র্যাহার। আসেন, র্তাহারা সকলেই মধ্যবৰ্ত্তী একজনকে আশ্রয় করিয়াই সাহিত্যে সার্থকতা লাভ করেন । যুগেও তাহাই ঘটিয়াছিল। বঙ্কিমচন্দ্র না থাকিলে ইহাদের কাহারও কাৰ্য্যই বেশ ঘনীভূত হইয়া একত্রসম্বন্ধ কোন মৌলিক সাহিত্য স্বষ্টি করিতে পারিত না। ফল-কথা, বঙ্কিমচন্দ্র না থাকিলে ইহারাও থাকিতেন কি ন সমেদ হু । এখন বুঝ। যাইতেছে, এই সৰ্ব্বতোমুখী প্রতিভাই তাহার বিশেষত্ব। রবীন্দ্রনাথ তাহার ‘চারিত্রে বঙ্কিমচরিত্রালোচনায় সত্যই বলিয়াছেন, তিনি দশভূজার মত সাহিত্য-ক্ষেত্রে আবিভূত হইয়াছিলেন, দশহস্তে তিনি বরাভয়াদি ধরিয়া একাধারে শক্রনিষ্পেষণ করিয়াছেন এবং সাহিত্যর বল স্থষ্টি করিয়াছেন । যখন একাধারে জাতিত্ববোধহীন পাশ্চাত্য-শিক্ষিত সম্প্রদায় দেশের অতীত ভুলিয়া পশ্চিমের নূতন নূতন চিন্তাধার ও সাহিত্যকলারসে আপনাদের মনকে বিভ্রান্ত করিয়া তুলিতেছিল এবং অন্যদিকে সামাজিক বন্ধনে বদ্ধ জনসাধারণ বাহিরের আকর্ষণে ভীত হইয়া আপনার কোণটিতে ক্রমশঃই অধিকতর অন্ধকারের মধ্যে লুকাইয়া বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের ' ఇసి? চন্দ্রই মাভৈঃ স্বরে তাহীদের আহবান করিয়া একদলকে দেশের অতীতের দিকে ফিরাইয়াছেন এবং অন্তদলকে বাহিরের আলোর দিকে টানিয়া আনিবার চেষ্টা করিয়াছেন । যাহারা অভিনিবিষ্টচিত্তে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিকৃতি লক্ষ্য করিয়াছেন, র্তাহারাই বোধ হয় দেখিয়াছেন, গাম্ভীৰ্য্যই উtহার চরিত্রের বিশেষত্ব ছিল এবং তাহার মুখচ্ছবিতেও তাহ স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে। এই অটল গাম্ভীৰ্য্যই তাহীকে এই বিরাই শক্তি দান করিয়ীছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও রীতির মধ্যে প্রবেশ করিয়া অটল স্থৈধ্যের সহিত যতদূর সম্ভব তাহার ভাল মন্দ দুইদিক্ বিচার করিয়া, তাহার সৌন্দৰ্য্যকলা আহরণ করিয়া, সেই গুণে ও সেই কলায় দেশীয় চরিত্রকে উজ্জীবিত করা এবং দেশীয় সাহিত্যকে ভূষিত করা তখনকার দিনে শুধু বঙ্কিমচন্দ্রই পারিয়াছিলেন। অন্ত অনেক মনীষী তাহার প্রবল নূতনতর টানে গা ভাসাইয়া দেশের যন হইতে দূরে সরিয়া পড়িয়াছিলেন। আমরা দেখিয়াছি বঙ্কিম-যুগের সাহিত্যের মূলে পাশ্চাত্য-শিক্ষার প্রবর্তন। যে সাহিত্যের ধারা পশ্চিমে তখন প্রায় নিঃশেষিত হইয়া আসিয়াছে তাহার সাড়া তখন আমাদের দেশে সবে মাত্র নূতন পড়িয়াছে। পশ্চিমেব সাহিত্যসমালোচকগণ যাহাকে রোমাটিকৃমুভমেণ্ট নাম দিয়া থাকেন, বঙ্কিমযুগের সাহিত্যে তাহার দোষগুণ উভয়ই উজ্জলরপে প্রতিভাত হইয়াছে। বাঙ্গালায় রোমাটিকু-মুভ মেন্টের ফল-স্বরূপ বঙ্কিমযুগের সাহিত্য কখন আলোচিত হইয়াছে কি না জানি না, কিন্তু তাহা না করিলে তাহার দোষগুণের সহিত সমস্ত প্রকৃতি যে ধরা পড়িবে না, ইহা নিশ্চিত । বঙ্কিমচন্দ্রকে বুঝিতে হইলেও আমাদের সেই সাহিত্যধারার ভিতর দিয়া তাহাকে প্রথম বুঝিতে হইবে। ইউরোপীয় তথা ইংরেজী সাহিত্যে যে রোমাটিকৃমুভমেন্ট প্রবর্তিত হইয়াছিল, তাহার অন্তর্নিহিত শক্তি হইতেছে, বাহিরের প্রকৃতির সহিত মানবাত্মার গৃঢ় মিলন-চেষ্টায়। এই চেষ্টা ষে সকল স্থলে সফল হইয়াছে