পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] অদৃষ্ট-চক্র J8S অদৃষ্ট-চক্র ১ম পরিচ্ছেদ স্বাগত গলায় বগলশ-অঁাটা, বৃহৎ, বলিষ্ঠকায় একট। কুকুর নবদ্বীপের ষ্টেশন প্ল্যাটফৰ্ম্মে ইতস্তত: বিচরণ করিতেছে । সন্ধ্যা হইয়াছে। প্ল্যাটফর্মের আলো জালা হইতেছে, গাড়ী আসিতে বিলম্ব নাই । লোক-সমাগমে ষ্টেশন সর-গরম। গাড়ী আসিয়া দাড়াইলে লোকজন নাম-ওঠা করিতে লাগিল, কুলী ডাকিতে লাগিল, গাড়ী খুজিতে লাগিল, নানারূপ ফেরীওয়ালা নানাছাদে হাকিতে লাগিল,— কুকুরটা ব্যস্তভাবে শুকিতে শুকিতে গাড়ীর ধারে ধারে পাশ কাটাইয়া চলিল—যেন কাহার সন্ধান করিতেছে। এমন সময় সকল কোলাহল ছাপাইয়া কে ডাকিল— "জোসেফ ’ । কুকুরটা তৎক্ষণাৎ শব্দ লক্ষ্য করিয়া ছুটিল। ছুটিয়া গিয়া লাচিয়া, লাফাইয়া, এক শ্যামবর্ণ নধরকান্তি বলিষ্ঠকায় যুবকের গায়ে ভর দিয়া উঠিয়, তাহার মুখের দিকে মুখ বাড়াইয়া, লেজ নাড়িয়া, নানা ভঙ্গীতে আদর ও অভ্যর্থনা জানাইতে লাগিল। যুবক তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া, ঘাড় চাপ্‌ড়াইয়া হুকুম করিল—“আগে সেলাম।” অমনি সেই বৃহদাকার কুকুরটা যুবকের সামনে পায়ের উপর মাথাটা নোয়াইয়া দিল । পর মূহুর্তেই উঠিয়া হা করিয়া প্রভুর প্রতি চাহিয়া লেজ নাড়িতে লাগিল । যুবক হাতের ব্যাগ হইতে একটা ছোট লণ্ঠন বাহির করিয়া জালিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর রাখিয়া হুকুম করিল—“বাড়ী চল” । জোসেফ তৎক্ষণাৎ আলোটা মুখে তুলিয়া লইয়া রেল-লাইনের ধারে ধারে আগে আগে চলিল । ২য় পরিচ্ছেদ প্রভাবতীর বড় স্থখ মণিলাল আজ বড় হৃষ্টচিত্তে বাটী আসিতেছিল । তাহার বন্ধু ব্ৰজগোপাল টেলিগ্রাম করিয়াছে যে নিৰ্ব্বিঘ্নে তাহার একটি পুত্রসস্তান প্রস্থত হইয়াছে । কত ভাবনাই যে ছিল ! প্রভাবতীর পিতৃকুলে এমন কেহ নাই যে এই প্রথম বারটির জন্তাও লইয়া যায়। আর - মণিলালের সংসারে তো কেবল মাত্র প্রভাবতী আর জোসেফ, । একমাত্র ভরসা ব্ৰজগোপাল আর তাহার স্ত্রী। কলিকাতায় কৰ্ম্ম করিতে হয়,—উকীলের মুহুরীগিরি। বাল্যকালে পড়া-শুনা বেশীদূর অগ্রসর হয় নাই। বিধবা মাতার একমাত্র সন্তান। তাহার উপর কুকুরট যেদিন নিঃসহায় শৈশবে, শীতের রাত্রে, করুণ ক্রমানে প্রাণ আকৃষ্ট করিল, সেদিন হইতে লেখাপড়া একেবারে মাথায় উঠিল । তাহাকে খাওয়ান ধোয়ান, কসরৎ শিখানতেই সকাল-সন্ধ্যা কাটিয়া যাইত । অবশ্য জোসেফের দ্বারা এখন তদনুরূপ উপকার পাওয়া যায় । সে দিবারাত্র যমদূতের মত বাড়ী পাহারা দেয়, ছাতে জিনিষপত্র শুকাইতে দিলে আগুলিয়া বসিয়া থাকে,-হকুমানের উৎপীড়ন হইতে গাছ পালা রক্ষণ করে,—চিঠি লিথিয় দিলে ডাকঘরে গিয়া সামনের পা-দুটা তুলিয়া ডাকৰাক্সে ফেলিয়া আসিতে পারে, এমনি কত কি করে । আদরও পাইত সে যথেষ্ট । স্বামী-স্ত্রীতে যেন একটা সন্তানের মত তাহার যত্ন করিত। আর প্রভাবতীর সতের-আঠারো বৎসর বয়স হইল এত দিনেও সন্তান কোলে পায় নাই। প্রভাবতীর বড় মুখ, ভরা যৌবনে একটা মাধুরী যেন দেহটাতে আঁটিয়া উঠিতেছে না, স্বামীর সোহাগ— অপৰ্য্যাপ্ত, গৃহের একমাত্র অধীশ্বরী—গরীব গৃহস্থের পক্ষে টাকাকড়িও রোজগার মন্দ হইত না, তাহার উপর আবার ভগবান তাহার কোলে আজ এ কী উপহার পাঠাইলেন ! এ আসিয়াই যে এক অপূৰ্ব্ব আকর্ষণে