পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] “নারী-সমস্যা” 80 రి হঠাৎ যদি এই দেশের কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা যায় যে জগতের কোন কোন প্রকারের জ্ঞানলাভের, কোন কোন নিৰ্ম্মল আনন্দ উপভোগের, কোন কোন রাজপথ উদ্যান ও দেশ ভ্রমণের এবং নিজ জীবনের কোন কোন কাজে স্বমত প্রতিষ্ঠার অধিকার মানুষের থাকা উচিত, তাহা হইলে সম্ভবত তিনি বলিবেন, জগতের সকল-রকম জ্ঞানলাভের, সকল নিৰ্ম্মল আনন্দ উপভোগের, সৰ্ব্বদেশ ভ্রমণের ও, প্রাপ্তবয়স্ক হইলে, নিজ জীবনের সকল কাজে স্বমত প্রতিষ্ঠার অধিকার মামুষের থাকা উচিত। এই অধিকার আমাদের নাই বলিয়া, শুনিতে পাই, অনেকে আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া স্বদেশ উদ্ধারে লাগিয়া গিয়াছেন। সেই বুদ্ধিমান ব্যক্তিকেই যদি ‘মাকুষ’ শব্দের সংজ্ঞ জিজ্ঞাস করা হয়, তাহা হইলে উত্তরে আমরা যে কথা শুনিব, তাহাতে নারীকে মানুষ মনে না করিবার কোনো কারণ থাকে না । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ন্যায়শাস্ত্রে এইপ্রকার লোকদের জ্ঞান যথেষ্ট থাকিলেও নারীর শিক্ষা, নারীর স্বাধীনতা, নারীর বিবাহ ও বৈধব্যের কথা উঠিলেই ইহঁাদের অধিকাংশের বুদ্ধিভ্রংশ হইতে দেখা যায়। কাজেই নিরসমস্যা বলিয়া যদিও কোনো কথার স্বষ্টি হয় নাই, তবু ‘নারীসমস্যা'র কথা শুনিতে শুনিতে শ্রান্ত হইয়া পড়িতে হয় । উচ্চাঙ্গের স্ত্রীশিক্ষার যে প্রয়োজন আছে, স্বাধীনতা যে সকল মানবের অর্থাৎ নারীরও জন্মলন্ধ সম্পত্তি, এবং বাল্যবিবাহের, বিশেষতঃ বাল্যমাতৃত্বের, ফলে যে নারীর দেহ মন ও ভবিষ্যৎ বংশের বহু ক্ষতি হয়, এসকল কথা এদেশেও আর নূতন নয়। যাহার মস্তিষ্কে কিছু সার পদার্থ আছে, হৃদয়ে স্নেহ প্রেম আছে এবং নিজহিত ও পরহিতের দিকে দৃষ্টি আছে, তিনিই এ-সকল কথার সত্যতা মনে মনে স্বীকার করেন। কিন্তু মনে মনে যাহারা স্বীকার করেন, তাহীদেরও অধিকাংশ, কেহ বা দেশাচারের ভয়ে, কেহ বা শারীরিক ও মানসিক জড়তা ও আলস্যের বশে, কেহ বা আজন্ম গতানুগতিক হওয়ার ফলে, কেহব স্বার্থের দায়ে, কেহব। “সনাতনপন্থী** বলিয়া পূজা পাইবার লোভে, কেহ বা দেশের ভালমন্দ সমস্তই দেশভক্তির আতিশযে শিরোধাৰ্য্য করিবার উৎসাহে, মুখে এবং কার্য্যে উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারেন না। উপরন্তু বহু অৰ্দ্ধশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত নর-নারী, দেশের কি ক্ষতি করিতেছেন তাহা না বুঝিয়া, নিজেদের অজ্ঞানকে জ্ঞান মনে করিয়া, কাগজে কলমে যুক্তিহীন আবল-তাবল লিথিয়া স্ত্রীজাতির উন্নতির পথে নব নব বাধা স্বষ্টি করিয়া নারীসমস্যার সমাধান করিবার চেষ্টা করিতেছেন। তাহাদের লেখনীপ্রস্থত এই-সব অপূৰ্ব্ব সম্বর্তে দূরদৃষ্টি কোথাও নাই, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের চিহ্নও দেখা যায় না, পূৰ্ব্বাপর সামঞ্জস্য অনেক স্বলে পাওয়া যায় না, এবং প্রামাণ্য দৃষ্টাস্তের একান্তই অভাব। বাজে গল্প ও উড়ো খবরের উপর বিশ্বাস করিয়া নিজ নিজ পারিবারিক জীবনের কয়েকটি দৃষ্টাস্তকে সম্বল করিয়া এবং ‘বটতলা’র গল্পের উচ্চশিক্ষিতার নমুনাকে সত্য মনে করিয়া বৈঠকী গল্প করা চলে, কিন্তু দেশব্যাপী বড় বড় সমস্যার সমাধান যে করা যায় না, তাহা ইহঁারা ভুলিয়া যান। এই-সব প্রবন্ধের ফলে, আমাদের দেশের মাসিকপত্রের পাঠকপাঠিকাদের মধ্যে যাহারা অৰ্দ্ধশিক্ষিত, র্তাহীদের মধ্যে কতকগুলি ভ্রাস্ত মত ও মিথ্যা সংবাদ ছড়াইয়া পড়িতেছে । দেশের অল্পশিক্ষিত পাঠকদের অধিকাংশেরই ধারণা ছাপার অক্ষরে যে কথা লেখা থাকে, তাহা প্রায় বেদবাক্যেব কাছাকাছি সত্য ; তদুপরি যদি দুই চারিট দুৰ্ব্বোধ্য সংস্কৃত বচন এবং গোট কয়েক খ্যাতনাম লোকের নাম জোড়া থাকে, তাহ হইলে ত কথাই নাই । কিছুদিন হইল কয়েকটি মাসিক-পত্রে প্রায় প্রতি

  • সনাতন পন্থী সম্বন্ধে লেকের একটি প্রস্ত ধারণ আছে । হিন্দু ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মধ্যে বেদ ও উপনিষদ প্রধানতম স্মৃতি ও পুরাণ তাহার পরবত্ত: । স্বতবাং যাহার ঔপনিষদিক ধৰ্ম্ম ন জানিয়া বা না মানিয়া পৌরাণিক ধৰ্ম্ম মানেন ও স্মৃতির অসুসরণ করেন, ওঁহীরা "সনাতনপন্থী” নাম পাইতে পারেন না । -