পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] হইয়। চির-নিদ্রীয় নিমগ্ন,—মনের মধ্যে একটা বিষাদের ভাব श्रांनिब्रां ८लग्न । পথ-চলতি লোকের বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন বর্ণের : কেহ কেহ শুধু স্যামবর্ণ; তাদের বড় বড় চোখের সাদাটায় একটু নীলিমার আভা দেখা যায় ; আর কতকগুলি লোক প্রায় কৃষ্ণবর্ণ, মুখে একটা বুনো ভাব ; কিন্তু তারাও দেখিতে স্বশী,—সেই অতুলনীয় ভারতীয় সৌন্দৰ্য্য তাহীদের মুখেও লক্ষিত হয়। এই দেখ কতকগুলি লোক ( নিশ্চয়ই দেশের গণ্যমান্ত ) যুরোপীয় পোষাক-পরা ; আমরা যখন তাদের সম্মুখ দিয়া যাইতেছিলাম, তখন তাহার একটু টিম চালে চলিতে লাগিল—শিশুদের মত তাদের ভাবট। এই ষে—অtষরী তাহাদিগকে একবার চাহিয়া দেখি । কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ পোষাকে উহাদিগকে আদৌ মানাইতেছিল না। বিশেষত স্ত্রীলোকেরা যেরূপ সাজসজ্জা করিয়াছিল, তাহ দেখিলে না হাসিয়৷ থকা যায় না ; কিন্তু তাদের যে স্বন্দর চোখের দৃষ্টি—সেই দৃষ্টিব খাতিবে আমরা হস্ত সম্বরণ করিতে বাধ্য হইয়াছিলাম—এবং আমাদেব মনে হইল যেন আমাদের যাত্র-পথে কর্তকগুলি রহস্যময় অন্ধকাবেব ফুল কুড়াইয়া পাইলাম। সেই চিরন্তন-সবুজ তালবন-মণ্ডপের ছায়া-তলে দেশীয় লোকদের গৃহ ; গৃহের চারিদিকে কলাগাছ, পুপিত “লাস্তান", লাল “হিরিস্কস' -যে-সকলু উদ্ভিজ্জ কোন উদ্যানকে মনোমুগ্ধকর করিতে পাবে, তাহী সমস্তই আছে। এই ছোট-ছোট গৃহের সাদা দেওয়াল, , শার্সি ইন জানাল,—চওড়া-চওড়া গরদে দিয়া বদ্ধ ; নিবিড় শাখাপল্লবের দরুণ গৃহের ভিতরটা অতি কষ্টে দেখা যায় ; ভিতরটা নগ্ন ও প্রায় থলি। কিন্তু সব সময়েই একটা টেবিলের উপর একট। ঝিনুকেব দোয়াৎ ও কতকগুলা কাগজ থাকে –সেইখানে বসিয়া উহার লেখে—কতকগুল সাদামাট চলতি বিষয়ের কথা : কিন্তু সেই কথার পুরাতন শব্দগুলি পৃথিবীর আদিম কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে ; এবং আমাদের পাশ্চাত্য ভাষাসমুহের মূল অনুসন্ধান করিবার জন্য আমাদের মহোপাধ্যায় পণ্ডিতের এক্ষণে উহার অনুশীলনে ব্যাপৃত রহিয়াছেন । - ...দিবস চলিয়া যাইতেছে, দিনের আলো স্পষ্ট নামিযা পড়িয়ছে। এখনে কিছু স্বর্ণরাশি ইতস্তত তালগাছের মাথায় গড়াইয়া চলিয়াছে : ভteার পর এই শেষ প্রতিবিম্বচ্ছটা যথন নিবিয়া গেল তখন আবীব “হরিৎরত্রি” সৰ্ব্বত্র ঘনাইয়া অমিল--তখন এই বিজন-স্তব্ধ তরুৰাখির মধ্যে কেমন একটা বিযাদের ভাব আসিয়া পড়িল । আমার কাছ দিয়া একটি বালিকা চলিয়া গেল—তার গাল দুটি ঈষৎ তাম্রাত, নীল রং-এর যুরোপীয় পরিচ্ছদ পরিয়াছে। তাহার বেরূপ অপ্রচলিত চ-এর সাজসজ্জা, ছিপছিপে পাতল গড়ন, কেঁকুড়া-কেঁকুড়া কালে চুল, তাহাতে সেকালের উপন্যাসের পীতবর্ণ “ক্রেওল' রমণীদের ভাবট। আমার মনে আসিল,-যেন কোন “ভজিণ", যেন কোন “কোরী”। তাই একটা বিষাদময় ঔৎসুক্য সহকারে তাঁহাকে আমি নিৰীক্ষণ করিতে ভারতের উপকূলস্থ “মাছে” নগর 8(2@ লাগিলাম। এই তারতীয় বালিকাটি নিশ্চ খুব গরিব ; কেনন, সে নিবিড় গাছপালার ভিতরে প্রবেশ করিয়া, ঘন পল্লবে ঢাকা একটা কুটারের মধ্যে স্বরস্বর করিয়া ঢকিয় পড়িল এবং লোকালয় হইতে বিচ্ছিন্ন সেই বিজন আকাশের নিন্তব্ধতা ও অন্ধকারের মধ্যে অন্তর্হিত হইল ... পথের আলো ক্রমেই কমিয়া আসিতেছে ; এই সময় একজন পুরুষ, মৃগ-স্বলভ নিস্তব্ধ লসূত সহকারে, প্রায় আমার গা-ঘে সিয়৷ আমার সন্মুখ দিয়া চলিয়া গেল। এ অীর এক জাতের লোক, আরও আদিম কালের মানব-জাতিব কোন এক শাখার লোক। প্রায় নগ্ন, কোমরে ছুরী ঝোলানো, গোর কুষ্ণবর্ণ, ভালুকের মত শক্ত ঘন লোমে তার বক্ষদেশ অtথত। জাহাজের মস্তলের চেয়েও লম্বী ও সোজা একটা প্রকাও তালগাছের কাছে আসিয়া দে থামিল। এবং হাত পা চালাইয়া খুব তাড়াতাড়ি গাছ বাহিয়া উঠিতে লাগিল—যেন ঐ গাছের উপরে একট কি জরবি কাজ রাতারাতি শেষ না কবিলে চলিবে না-আশ্চৰ্য্যরকম বানরের মত চটুল লেকিট । এবই মধ্যে খুব অন্ধকার হইয় পড়ি. য়ছে-এই অন্ধকারে ভালীবনের মধ্যে সে আমার দৃষ্টির বহিভূত হইয়া পড়িল --- শেষ গোধূলিতে, আমার ডিঙ্গিতে উঠিবার জন্ত যখন আমি ফিরিয়া আসিলাম ; তখন কতকগুলি বালক, এক প্রকার ঘাসে-বোন। হাতপাখা, কমল-লেবু, তীব্রগন্ধী বজনীগন্ধা ফুলের তোড়া বিত্ৰী কধিবীব জন্য অসিয়া আমাকে ধিরিয়া ফেলিল। তাছাদের লম্ব চুল, অঁটা-সটা ধূতি কোমরে জড়ানে । - দড়ের কএক আঘাতেই, তুমির নদীর এই ক্ষুদ্র-নমুনাটিকে অতিক্রম করিয়া, সাগবে আসিয়া পড়িলাম। তখন সমুদ্র আমাদের সম্মুখে হরিৎ-ঝিনুকের বিজন তীব মত প্রসারিত হইল-এই ঝিনুকের প্রতিবিশ্বচ্ছটা অতীব পরিবর্তনশীল-প্রতিবিম্বগুলা নিজেই যেন স্বয়ম্প্রভ হইয়| উঠিবে এইরূপ ভাব ধারণ করিল। যে পুপগুচ্ছগুলি বালকেরা আমার নিকট বিক্রয় করিয়াছিল, অন্ধকাৰে তাহার গন্ধ আরও বেশী তীব্র বলিয়া মনে হইতেছে—অস্তান্ত অপ্রীতিকর গন্ধের সহিত ডাঙ্গ জমি যতই দূরে সরিয়া যাইতেছে ততই এই গন্ধেব তীব্রত আরও অনুভূত হইতেছে। আমাদের যাত্রাপথে জলের উপর এই রজনীগন্ধীর গন্ধ রাথিয় যাইতেছি । দিক্‌চক্ৰবাল,—নিম্নে একটু লাল, তবে পর বেগনী, তার পর সবুজ, তার পর ইস্পাতের রং, ময়ূবের রং-এইরূপ ইন্দ্ৰধনুর স্তায় স্তবর্কে স্তবকে রঞ্জিত হইয়াছে। তারাগুলা এরূপ বকৃষ্ণক করিয়া জ্বলিতেছে যে মনে হয় যেন আজ রাত্রে বুঝি উহারা পৃথিবীর পুব নিকটে আসিয়াছে —সেই সীমাবিন্দু পর্যন্ত আসিয়াছে, যেখানে অস্তমান স্বৰ্য্যের স্বম্পষ্ট গোলাপী কিবণচ্ছটা এখনে লীল-গগন-মণ্ডলে ছড়াইয়া রহিয়াছে । এইবার বত্রি সমাগত – কিন্তু তথাপি যেন আলোক-উৎসবের একটা ঐন্দ্রজালিক আলোকে সৰ্ব্বত্র উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়ছে। শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর