পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] কথা ও ভাবকে সৌন্দর্ধ্যস্থষমায় মণ্ডিত করে” কথা ও রূপকে অনিৰ্ব্বচনীয়তা ও অরূপের মধ্যে মুক্তি দেওয়া । গানে ছন্দের উদ্দেশ্য গানের অরূপ নিবিড় আনন্দরসকে কথার মধ্যে ধরিয়ে দিয়ে মনের আয়ত্তের মধ্যে পৌছিয়ে দেওয়া। কাব্যের ছন্দের কারবার প্রধানত কথাকে নিয়ে, কিন্তু কথার অতীত অরূপ অসীমের দিকে তার ব্যঞ্জনা । গানের ছন্দের উদ্দেশ্য কথাব অতীতকে আভাসে ইঙ্গিতে মনের গোচরে ফুটিয়ে তোলা, কিন্তু কথার অতীতকে কথার মধ্যেই মূৰ্ত্তি দান করা তার সাধনা। সহজেই বোঝা যাচ্ছে যেহেতু কথার অতীত স্বরকে ফুটিয়ে তোলাই গানের ছন্দের প্রতিজ্ঞ, সেজন্তেই গানের ছন্দের সাধনা কাব্যের ছন্দের চাইতে ঢ়ের বেশি বৃহত্তর ও মহত্তর । কথাকে একটা বিশেষ ভাবে দুলিয়ে দিয়ে তার ভিতরকার ভাবকে ঝঙ্কত করে” অনিৰ্ব্বচনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে দেওয়াই কাব্যের ছন্দের কাজ ; কিন্তু গানের ছন্দকে স্বরের স্বক্ষতম ধ্বনিম্পন্দনকেও যথাযথরূপে মুক্তি দিয়ে অথচ আকৃষ্ট করে’ মনের পরিধির মধ্যে এনে পৌছিয়ে দিতে হয়। সুতরাং গানের ছন্দে সুক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়, এমন কি সঙ্গীতের স্বরের যথার্থ স্বরূপটিকে বিশ্লেষণের বা হিসাবের সীমার মধ্যে আন অসম্ভব বললেই হয়। কিন্তু কাব্যের ছন্দে এত স্বক্ষতিস্থম্ম বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। যদিও কাব্যে ছন্দ ধ্বনিকে নব নব বিচিত্র উপায়ে তরঙ্গিত করে’ ভাবকে ওই ধ্বনিতরঙ্গের মধ্য দিয়ে লীলায়িত করে’ মনের স্তরে স্তরে স্পন্দিত করে তোলে, তথাপি কাব্যে ভাব বা বাগৰ্থই মুখ্য, ছন্দ বা বাগর্থের বাহন ধ্বনির নিয়ন্ত্রণরীতি গৌণ। কথাকে নড়াচাড়া করে তার ভাবকে ফুটিয়ে তোলাই কাবা-ছন্দের উদ্দেশ্য, এবং এই ভাবকে ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই তার সার্থকতার অবসান। কাজেই কাব্যে ধ্বনির নিয়ামক ছন্দ-শাস্ত্রের পরিধি সংকীর্ণ, ধ্বনিলীলার স্বক্ষাতিসূক্ষ্ম সমস্ত প্রক্রিয়াকে কাল তথা মনের গোচর করা কাৰ্য-ছন্দের উদেন্ত নয়। কিন্তু গানের ক্ষেত্রে ছন্দের পরিধি আর ধ্বনিলীলার পরি ; ধ্বনিলীলার সূক্ষ্মতম থেকে বাংলা ছন্দ ও সঙ্গীত 8¢ፃ AMAMAMAMAMAMAMAMAMAeS সৰ্ব্বপ্রকার প্রকাশকে ফুটিয়ে তোলাতেই গানের ছন্দের সার্থকত। সুতরাং গানের ক্ষেত্রে ছন্দশাস্ত্র ও ধ্বনিশস্ত্র সমপরিসর, এবং সেজন্তেই গীত-ছন্দের বিকাশভঙ্গী এত বিচিত্র ও অফুরন্ত । যা হোক, গীত-ছন্দের এই অফুরন্ত বিকাশভঙ্গীর আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। স্বক্ষতার দিক্ দিয়ে গানের ছন্দ কাব্য-ছন্দকে প্রথম সোপানেই ছাড়িয়ে গেছে বটে, কিন্তু এই প্রথম সোপামটিতেই একটি অতি ক্ষুদ্রপরিসর সামান্ত ভূমিতে এই দুই ছন্দ পরস্পরের সাযুজ্য লাভ করেছে। অথচ ঐ ক্ষুদ্র ভূমিটুকুর মধ্যেও ঐ দু’ছন্দের গতিলীলা কত বিভিন্ন দিকে তাই দেখাতে চেষ্টা করব । গানের ছন্দ স্বরের ক্ষীণতম ও স্বক্ষতম আবেগকেও ফুটিয়ে তুলতে চায়, সেজন্য গীত-ছন্দের বিভাগ উপবিভাগ অনেক এবং তার পারিভাযিক সংজ্ঞাও অল্প নয় । কাব্য-ছন্দের উদ্দেশ্য অত ব্যাপক ও গভীর নয় বলে তাব বিভাগ ও পারিভাষিক শব্দ গীত-ছন্দের তুলনায় অনেক কম। তথাপি পরস্পরের আংশিক সাদৃশু হেতু উভয় শাস্ত্রেই কতকগুলো সামান্য পারিভাষিক শব্দের ব্যবহার হয় । আমরা এ শব্দগুলির সংজ্ঞা নির্দেশ এবং উক্ত ছু শাস্ত্রে এদের অর্থগত তারতম্য ও সার্থকতা সম্বন্ধে একটু আলোচনা করেই কাব্য- ও গীত-ছন্দের আলোচনায় নিবৃত্ত হব। কাব্য ও সঙ্গীত উভয় ক্ষেত্রেই মাত্রা লয় যতি ও তাল এ ক’টা পারিভাষিক শব্দের ব্যবহার হয়। আমরা একে একে এ ক’টা পরিভাষার আলোচনায় প্রবৃত্ত হব। মাত্র ও লয় প্রথমেই মাত্রার কথা বলা প্রয়োজন। কবিতার মাত্র শব্দটি খুবই সাধারণ বা স্থলভাবে ব্যবহৃত হয় ; কবিতার মাত্রার খুব স্বক্ষ ংিসাব রাখা নিম্প্রয়োজন। কিন্তু গানে মাত্রার অতি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা একাত্ত প্রয়োজন ; তিলাৰ্দ্ধ ব্যতিক্রমেও গানের স্বরের ধারা বাধা পায়, কাজেই রস-ভঙ্গ হয়। কবিতার ধ্বনিরও কালের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত করার উদ্দেশ্যে মাত্রার হিসাব রাখতে হয় ; কিন্তু তদুপরি কবিতায় স্থায়িত্ব-ভেদে মাত্রার কোনো প্রকার-ভেদ নেই। কবিতায় সব মাত্রাই এক জাতীয়