পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وان سGb দেখিতে পাই, পৃথিবীর সমুদয় ধৰ্ম্মের উদ্ভব এশিয়াতে হইয়াছে ; অস্তান্ত দেশ ও মহাদেশ তাহীদের ধৰ্ম্ম এশিয়া হইতে গ্রহণ করিয়াছে । অতএব আমরা বাঙালীর। যদি এশিয়াবাসীর প্রধান বিশেষত্ব রাখিতে চাই, তাহা হইলে আমাদিগকে বাহিরের জিনিষের মোহে-আসক্তিতে ভুলিয়া থাকিলে চলিবে না ; আমাদিগকে ভিতরের ঐশ্বৰ্য্যে, অস্তরের কল্যাণে, হৃদয়মনের উৎকর্ষে, আত্মার আনন্দে ও মনেনিবেশ করিতে হইবে । আমি কাহাকেও সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী হইতে বলিতেছি না। বাহিরের জিনিষের প্রয়োজন আছে । আত্মার কল্যাণ বিকাশ স্মৃত্তি ও আনন্দের জন্যও বাহিরের অমুকুল অবস্থার একান্ত প্রয়োজন আছে । কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, বাহিরের যাহা কিছু তাহা ভূত্য মাত্র, সহায় মাত্র, পরিচারক মাত্র; অন্তরাত্মাই প্রভু। বাহির তাহার সেবা করিবার মাত্র অধিকারী ; উহা প্রভুর আসন দখল করিতে পারে না ; করিলে অকল্যাণ হয় । আমরা ভারতবর্ষীয়। অতএব ভারতবর্ষের একটি বিশেষত্বের কথাও বলি । পৃথিবীর আর কোনও দশ নাই, যেখানে ভারতবর্ষের মত হিন্দু জৈন বৌদ্ধ জরথুস্ত্রীয় ইহুদী খৃষ্টীয় মুসলমান প্রভৃতি সমুদয় ধৰ্ম্ম ও সভ্যতার একত্র সমাবেশ দেখা যায় । আমাদের দেশে সংঘর্ষ সংগ্রাম মারামারি কাটাকাটি আগে হইয়া গিয়াছে, এখনও হয় ; কিন্তু মোটের উপর আমরা যতটা পরমতসহিষ্ণুতা ও ঔদার্য্য অবলম্বন করিয়া সকলের মধ্যে যেরূপ সামঞ্জস্য বিধান করিবার চেষ্টা করিয়াছি, পৃথিবীর কোন দেশে কোন জাতি তাহ করে নাই । আমার বিশ্বাস, জাতিতে জাতিতে সভ্যতায় সভ্যতায় মৈত্রীও সামঞ্জস্ত-বিধান-সমস্তার সমাধান ভারতবর্ষই করিবে ; ভারতবর্ষ তাহ না করিলে আর কেহ পরিবে বলিয়। এখন মনে হইতেছে ন—ভবিষ্যতের গর্তে কি আছে কেহ বলিতে পারে না । আমরা বাঙালীরা ভারতবষীয় বলিয়া, জাতিতে জাতিতে সভ্যতায় সভ্যতায় মিলনসাধনের এই মহৎ প্রচেষ্টায় আমাদেরও স্থান এবং কৰ্ত্তব্য রহিয়াছে । প্রবাসী —ফাঙ্কন, Seరి ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড

  • শেষ কথা, বাঙ্গালীর বিশেষত্ব সম্বন্ধে । ধোগ্য তা ও সময়ের অভাব বশতঃ আমাদের সমুদয় বিশেষত্ব নিৰ্দ্ধরণের চেষ্টা আমি করিব না । দুই একটি কথা মাত্র বলিব ।

জীব ও জড়ের একটি প্রধান প্রভেদ এই যে, জীব আত্মরক্ষার জঙ্ক অবস্থাভেদে ব্যবস্থাভেদ করিতে পারে, পরিবেষ্টন বা পারিপার্থিক অবস্থার সহিত নিজের সামপ্রস্ত বিধান করিতে পারে, জড় তাহ পারে না । যে জীব যে পরিমাণে নিজেকে পরিবেষ্টক অবস্থার সহিত যতটা খাপ খাওয়াইতে পারে, সে তত বাচিবার উপযুক্ত হয় । এই খাপ খাওয়াইবার শক্তি ভারতবষীয় অন্ত কোন জাতির নাই বলিতেছি না ; কিন্তু কোন কোন দিকে বাঙ্গালীর আছে ইহাই বলিতেছি । পাশ্চাত্যের সহিত যখন সংস্পর্শ ও সংঘর্ষ উপস্থিত হইল, তখন বাঙ্গালী পাশ্চাত্যের শিক্ষণ ও সভ্যতার হযোগ अश्१ করিতে এবং তাহার সহিত আপনাকে সমঞ্জসীভূত করিতে বিরত থাকে নাই ; ভারতের অন্য কোন কোন জাতি ও সম্প্রদায় বিরত ছিল। অবশু, আমরা যে এক সুমন্ত্রে অতিরিক্ত পাশ্চাত্যভাবাপন্ন হইয়াছিলাম, তাহ আতিশয্য-দোষ । এরূপ ভুল ও দোষ পরিবর্তনের যুগে সব দেশেই হয় বটে, তাহ হইলেও ইহা বর্জনীয়। কোন কোন বিষয়ে আমরা পাশ্চাত্যের সহিত সংস্পর্শ ও সংঘর্ষের উপকার এখনও যথেষ্টরূপে লাভ করিতে পারি নাই—যথা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ে, এবং দৈহিক শ্রমের গৌরব বোধে । এই এই বিষয়ে আমরা ক্রমে উন্নতি করিতেছি । স্বস্থ সবল মানুষের লক্ষণ এই, যে, সে নিজের দেহমনের পুষ্টির জন্য উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া তাহা নিজের দেহ-মনের অঙ্গীভূত করিতে পারে। অস্বস্থ মামুষের দৈহিক ও মানসিক অজীর্ণত হয়, গ্রহণ ও নিজস্বীকরণের ক্ষমতা তাহার কম থাকে । পাশ্চাত্য যখন জোর করিয়া আমাদের দ্বারে ধাক্কা দিল, তখন তাহার মধ্যে যাহা ভাল তাঙ্কা লইবার জন্য বাঙ্গালী প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু বাঙ্গালীর শিরোমণির ভিখারীর মত লইবার জন্ত ব্যগ্র হন নাই ; মুস্থ সবল মানুষের মত লইতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন । দৃষ্টান্তস্বরূপ