পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(సి 8 আলস্য কিম্বা উভয়ই আছে । আমরা হয়ত ভাবি, যে, যেহেতু আধুনিক বাংলা সাহিত্য আধুনিক অন্য ভারতীয় সাহিত্য অপেক্ষ কোন কোন দিকে উৎকৃষ্ট, অতএব অন্য প্রদেশের আগেকার ভারতীয় সাহিত্য হইতেও আমাদের কিছুই লইবার নাই । কিন্তু বহুঐশ্বৰ্য্যশালী ইংরেজী সাহিত্যের জন্য যদি হিন্দী গুজরাতী মারাঠী উছু পঞ্জাবী তেলুগু তামিল হইতে অনুবাদ করিবার যোগ্য জিনিষ ইংরেজ পাইয়া থাকেন, তাহা হইলে এইসব দেশী ভাষা হইতে বাংলায় অমুবাদ করিবার যোগ্য জিনিষ নিশ্চয়ই আছে। তাহ বাছিয়া অতুবাদ করিবার স্বযোগ ও ক্ষমতা প্রবাসী বাঙালীদের আছে। নানক কবীর দাদু তুলসীদাস রবিদাস গরীবদাস প্রভৃতি বহুংখ্যক মধ্যযুগের সাধুসন্তের বাণী বাংলায় অনুবাদিত হইলে বাঙালী জাতি বিশেষ উপকৃত হইবে। উত্তর ভারতের উপকথা, গাথা, বারব্রত কথা, আলহী খণ্ডের মত যুদ্ধকাব্য, প্রভৃতি বাংলা ভাষায় নিবদ্ধ হওয়া উচিত । অবশ্ব দক্ষিণের তুকারামের অভঙ্গ, প্রভৃতি যে অনুবাদিত হইয়াছে, তাহা উত্তরভারতীয় এই সম্মিলনে কেবল উল্লেখ করিলেই চলিবে । কেবল লেখকেরাই যে জাতীয় জীবন ও জাতীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন, তাহা নহে। মানবজীবনের যতপ্রকার কাজে মামুধের যতপ্রকার চেষ্টা উদ্যম অধ্যবসায় ধৈর্য্য:সাহস সহিষ্ণুতা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায়, সকলের দ্বারাই জাতীয় জীবনের উদ্যম, আশা, ব্যাপ্তি, গভীরতা, বৈচিত্র্য, বিশালতা, শক্তি, সাহস, ক্ষুৰ্বি, আনন্দ, বৃদ্ধি পায় । ইংলণ্ডের ইতিহাসে এলিজাবেথের যুগেব বণিকুর, নাবিকরা, যোদ্ধারা, ভৌগোলিক আবিষ্কৰ্ত্তারা, সকলে সাহিত্যিক অমর কীৰ্ত্তি রাখিয়। যান নাই । কিন্তু রাণী এলিজাবেথের যুগের ইংরেজী সাহিত্যের উৎকর্ষ, বিশালতা, গভীরতা ও শক্তি যে সেই যুগের ইংরেজ-জীবনের ব্যাপ্তি বৈচিত্র্য উদ্যম সাহস ও শক্তির পরোক্ষ ফল, তাহীতে সন্দেহ কি ? তখনকার ইংরেজ লেখকরা ত শুধু নিরাশ প্রণয়ের হাস্থতাশের, শিশু নায়ক-নায়িকার প্রেমের, কাব্য লিখিয়া যান নাই। এক শেক্সপীয়রের নাটকগুলিতেই কি প্রবাসী—ফাস্তুন, ১৩৩০ [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড আশ্চৰ্য্য চরিত্র-ও-ঘটনা-বৈচিত্র্য । ইংরেজ জাতি তখন নানা কাজ, নানা চিন্তা, নানা উদ্যম, নানা আবিষ্কার করিয়াছিল, নানা অাদর্শের কথা ভাবিয়াছিল, অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য তাহদের হইয়াছিল ; এইজন্য তখনকাব ইংরেজী সাহিত্য এত সমৃদ্ধ ও বিচিত্র । ভিক্টোরিয়ার যুগের সাহিত্যও এবম্বিধ কারণে সমৃদ্ধ । জাতীয় জীবনের সহিত জাতীয় সাহিত্যের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ । জাতি বড় হইলে সাহিত্য ও বড় হয় । আবার ভগবৎক্লপায় প্রতিভাশালী লেখক কোন জাতির মধ্যে আবিভূত হইলে, তিনিও নিজের জাতিকে উদ্বুদ্ধ করিতে পারেন, বড় করিতে পারেন। - নানা দেশে নানা সমাজে নানা কাজে নিযুক্ত থাকিয়া যদি কোন জাতি বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করে, যদি তাহাদের উদ্যমশীলতা বাড়ে, তাহা হইলে পরোক্ষভাবে তাহাদের সাহিত্যও বড় হয়, লাভবান হয়। ইহার একটি দেশী দৃষ্টান্ত দিতেছি। ভারতবর্ষের এক কোটি আটষট্টি লক্ষ লোক গুজরাতী ভাষায় কথা বলে ; কোনন-কোন রকমের হিন্দী ভাষায় আট কোটির উপর লোক কথা বলে। অথচ আধুনিক গুজরাতী সাহিত্য আধুনিক হিন্দী সাহিত্য অপেক্ষ সমৃদ্ধ। শুধু কি তাই ; আধুনিক গুজরাতীতে এমন কোন কোন রকমের বহি আছে, যাহা বাংলা সাহিত্যেও নাই। অথচ বাংলা ভাষায় কথা বলে চারিকোটি তিরাশি লক্ষ লোক— গুজরাতীর চারিগুণেরও বেশী । গুজরাতীদের এই সাহিত্যিক কৃতিত্বের একটি কারণ এই, যে, গুজরাতীভাষী পারসী ভাটিয়া বোরা প্রভৃতি বণিক্‌ ও অন্যবিধ লোকেরা ভারতবর্ষের সর্ববত্র এবং অনেক বিদেশেও যাতায়াত ও বিষয়কৰ্ম্ম করে । এই বিশেষত্বটির উল্লেখ করিয়া গুজরাতী স্থলেখক শ্ৰীযুক্ত কৃষ্ণলাল মোহনলাল ঝাভেরী মহাশয় “The Wandering Gujarati’ “Hooft guarà"শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। বাঙালীরাও যত দেশে যত রকম কাজে যাইবে, তাহাদের সাহিত্যও তত বড় হইবে। প্রবাসী বাঙালীর এইপ্রকারে সাক্ষাৎ ও পরোক্ষভাবে তাহাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করিতে পারেন।