পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৯৮ প্রবাসী—ফাঙ্কন, ১৩es [ ২৩শ ভাগ, ২য় খ • বেনো-জল বাইশ বিনয়-বাবুর বাড়ী ছেড়ে রতন পাগলের মতন বেরিয়ে এল । তখন বেলা তিনটে হবে । করছে । সমুদ্রের তীরের বালি তেতে আগুন হ'য়ে উঠেছে। কিন্তু সেই অগ্নিকণাচুর্ণের মতন বালুকারাশির উপর দিয়েই রতন হন-হন ক’রে এগিয়ে চলল— তার মনের অবস্থা তখন এমনি আশ্চৰ্য্য যে, কোনরকম জালা-যন্ত্রণাই সে বুঝতে পারলে না, বা আমলে আনলে না ! আনন্দ-বাবুর বাড়ীর সামনে এসে, অভ্যাসমত সে থমকে দাড়িয়ে পড়ল। বাড়ীর ভিতর থেকে একট। এস্রাজের স্বর ভেসে এল—রতন বুঝলে, পূর্ণিম বাজাচ্ছে । মিনিটখানেক সেইখানে দাড়িয়ে থেকে, আবার সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলল । সমুদ্রের ধারের সর্বশেষ বাড়ীখান যেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্তন্ধভাবে রোদ পোয়াচ্ছে আর নীল জলের অশ্রান্ত উচ্ছ্বাস শুনছে, রতন ক্রমে সেইখানে এসে পড়ল । বাড়ীখুনার অবস্থা দেখেই বোঝা গেল, অনেকদিন থেকেই সেখান খালি পড়ে আছে। তারই পিছনে গিয়ে রতন নিজের মোট নামিয়ে, তার উপরেই ধুপ ক'রে বসে পড়ল । একটা অভাবিত সত্য তার মনের ভিতরটা একেবারে ওলট-পালট ক’রে দিয়েছে ! আবহা, এর আগেও মাঝে মাঝে নানা কারণে এই সত্যটাই অস্পষ্ট আবছায়ার মতন তার মনের কোণে কোণে উকিঝু কি মেরেছে বটে, কিন্তু এমন নিশ্চিতভাবে সে তাকে আর কোনো দিন বুকের মাঝে অনুভব করেনি! আঞ্জ এখনো বারংবার সে মিজের পায়ের কাছে সেই ঘাতমী-বিকৃত অশ্র-সিক্ত মুখখানিকে দেখতে পাচ্ছে, জয় সেই আৰ্ত্তস্বয়ও তার কালের কাছে থেকে থেকে চারিদিকে রোদ বর্ণ-বf ধ্বনিত হ'ৰে উঠ ছে—“আমাকে ছেড়ে আপনাকে আমি কোথাও যেতে দেব না !” ভালোবাসে, ভালোবাসে,—সুমিত্রা তাকে ভালোবাসে । আর এ ভালোবাসা এমনি প্রবল যে তীর্ণ সঙ্গে সে পৃথিবীর সর্বস্ব ছেড়ে চলে আসতে পারে । এমন বিপুল ভালোবাসা তার ঐটুকু তরুণ প্রাণের মধ্যে কি ক’রে ধরল—সমুদ্রের উচ্ছ্বাস কি এতটুকু পাত্রের ভিতরে ধ’রে রাখা যায় ? এ প্রেমকে গ্রহণ করা ত দূরের কথা—ধারণ করার শক্তিও যে তার নেই! তাই সে স্থমিত্রার স্বমুখ থেকে পাগলের মতন ছুটে পালিয়ে এসেছে ! কল্পনায় মুমিত্রা যা সহজ ভেবেছে, বাস্তব-জীবনে ত৷ কত অসম্ভব, কত অসঙ্গত ! সবে এই তার প্রথম যৌবন, নিশ্চিন্ত জীবনের মধ্যে সংসারের কঠোর দণ্ডের আঘাত কখনো সে স্বপ্নেও অতুভব করতে পারেনি, তাই মনের ঝোকে এত সহজে বলতে পারলে, তার সঙ্গে সে বাপ-মাকে ছেড়ে চ'লে আসবে ! সমাজকে যে চেনে সেই-ই জানে—এ কত বড় ভয়ানক প্রস্তাব ! এমন প্রস্তাবে সে কি রাজি হ’তে পারে ? পালিয়ে আসা ছাড়া তার পক্ষে উপায় কি ? রতন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলে, জীবনে আর কখনো সেন-পরিবারের ছায়াও মাড়াবে না। নিজের ব্যবহারের জন্য অমৃতপ্ত হ’য়ে বিনয়-বাবু যদি কোনদিন তাকে ফের আহবান করেন, তা হ’লেও সে আর ফিরে যাবে না। কারণ স্বমিত্রার সঙ্গে তার মিলন অসম্ভব ! স্বমিত্রা ধনীর মেয়ে, আর সে পথের ভিখারী ! কাঞ্চন-কৌলীন্যের মধ্যে প্রেম কি তার খেলাঘর বাধতে পারে ? এতে বিনয়-বাবুও রাজি হবেন না, সেও ময়। যে নিজের পেট চালাতে মা পেরে আত্মহত্যাকেও কামনা করে, বিবাহ যে তার পক্ষে কল্পনাতীত বিলাসিতা ! বালিকা স্বমিত্ৰা ! তার এ প্রেম প্রথম বসন্তের