পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌতমের গৃহত্যাগ স্তন্ধ আষাঢ় পূর্ণিমা রাত নিথর নিঝুম—করছে সাস ! কোন অভলে তলিয়ে গেছে ধরার ধ্বনি, ধরার ভাষা ! শাস্তি নিবিড়, শাস্তি অটল, শাস্তি কঠোর মৃত্যু যেন! কেবল ঝিঝির ডাক শোনা যায় বিশ্ব-প্রাণের রণন হেন। কেবল চাদের চোখটা জলে, তাও সে ক্ষণে পড়ছে ঢুলে । মত্ত মানুষ ধরায় আছে-একথা মন যায় যে ভুলে’ ! চাদের আলোয় নিদ্ৰা ঝরে, নিদ্রা-নিবিড় জ্যোৎস্না-রীতি । শুদ্ধোদনের রাজপ্রাসাদে জলছে নাকে একটি বাতি । স্তব্ধ পুরী,—হাস্যধ্বনি, বন্দনা-গান, নৃত্য, কথা, মন্ত্রণালাপ, শঙ্খ-আরবি, নৰ্ত্তকীদের উচ্ছলতা, আরতি-সাম,—সকল নীরব, সব ডুবেছে কোন গভীরে ! ঘরে ঘরে স্বপ্ত জনের জাগছে আরাম-নিশাস ধীরে । ধরার বুকে নেইক ধ্বনি, রাজ-প্রাসাদে নেইক সাড় — শয্যা পরে কে ঐ নড়ে, কে ঐ নড়ে নিদ্রাহারা ! .অগাধ ঘুমায় যশোধরা, বক্ষে ঘুমায় ছোট ছেলে, তারই পাশে গৌতম ও যে নিদ্রাবিহীন চোখটি মেলে’ ! কি ব্যথা তার বাজছে বুকে ? কিসের দুখে রাত্রি জাগে ? কি ভাবনায় ক্ষিপ্ত ও মন ? নিত্রী কেনই তুচ্ছ লাগে ?— জুখের ব্যথা, শোকের ব্যথা, দৈন্য-ব্যথা, জরার ব্যথা ঐ বুকে তার ভিড় করেছে সব বেদন ও কাতরতা । বক্ষে যেন বাণ লেগেছে ছটফটিয়ে উঠছে পাখী ! নিদ্রা নাহি নিদ্রা নাহি, ব্যাকুল যুবক থাকি থাকি । উঠ ল যুব, প্রাণ যে জলে, বসল উদাস শয্যা পরে, গুপ্ত বেদন আজকে ভীষণ ব্যাকুল করে চেতন করে ! জান্‌লা দিয়ে দেখল যুবা আকাশ-গায়ে জলছে তারা,— অসীম দেশের আভাস দিয়ে ভাঙতে কি রে বলছে কারা ? ঘুমায় শিশু দেখল যুব, অ'কৃড়ে তারে যশোধরা,— একটি শিশু হেথায় স্বথে, লক্ষ শিশু হোথায় ধরা ঃখে ক্লেশে পিয ছে নিতি, তাদের হোথা দেখবে কেবা ? এই শিশুরি সমান মুঢ় রইল ধরায় অজ্ঞ ষেবা, পথ দেখাবে কে রে তারে, হাতটি ধরে তুলবে তারে, দুঃখ-ভরা জগৎ হতে লবে তারে জুখের পারে ? ঝড় উঠেছে, ঝড় উঠেছে, ধরার সাগর দুলছে ঝড়ে, মাতুষ-তরী ডোবে ডোবে,--রাখবে কে তায় হালটি ধরে ? বেদন-নত ভূতলশাস্ত্রী লক্ষ জনার ক্ষুব্ধ কানে মুক্তি-অভয়কে দেবে রে ?—উঠবে সবাই সবল গ্রাণে । বাজে বাজে বিষম বাজে বক্ষে ব্যথায় ডাঙশ হানে ; দাড়ায় যুব শয্যা-পাশে, উদাস হেরে আকাশ পানে । পুরীর পাষাণু প্রাচীর ভেদি ডিঙিয়ে এসে স্বর্থ-নিগড়ে, জায়ার প্রতি ছাপিয়ে ঢেকে, নৰ্ত্তকী-গান চুর্ণ করে’ কেমন করে সকল ব্যথা ঐ বুকেতে লাগল এসে ?-- গোপন ব্যথা গোপন কঁদিন এল কি হায় হাওয়ায় ভেসে ? পায়নি কি ঠাই, পায়নি রে বাস এই এ যুবার বক্ষ বিনে ? হাজার হাজার বরষ ধরে খুজছিল কি রাত্রে দিনে এই বুকেরি শীতল আবাস ?—বুকটি আজি কেন্দ্র সম সব বেদনা আকড়ে ধরে,—নমনীয় পরম কম। চোখ ছেপে তার অশ্র আসে, বুক ছেপে তার কাদন দোলে, বেদন-উতল দাড়িয়ে যুবা নিথর নিশার শাস্ত কোলে ! যৌবন এই, প্রেমের লীলা, যশোধরার মধুর হাসি, এই যে দোহার অটুট বাধন - জরায় সবি ফেলবে গ্রাসি ; যশোধরার দীপ্ত রূপে জরার আঁধার ফেলবে ছায়া, এই যে সবল শক্ত আমি কুইয়ে যাব কুজ-কায়া ! মৃত্যু শেষে আসবে কঠোর টানবে ধরে সবার কেশে ; কেউ রবে না, কেউ পারে না জিন্‌তে তারে সর্বনেশে ! হাসে মাছুষ হর্ষ করে, জানে না সে হাসির পিছে লুকিয়ে আছে বিষম কাদন, মুখ যা বলে সে যে মিছে! সেই কাদনের বেদন পিয়ে বেদন-জয়ী মুক্তি-গাথা কে দেবে রে ক্লিষ্ট ধরায়, কে হবে রে ক্লেশের ত্রাতা ? জাগল যুবার ক্লিষ্ট মনে শায়ক-বেঁধা সেই সে পার্থী জীর্ণ বুড়ার হইয়ে চলা, বস্ত্রে শবে নে যায় ঢাকি? — গিরগিটি খায় পিপৃড়ে ফড়িং, গিরগিটিরে সাপ সে গিলে, সেই সাপেরে কামড়ে খেল দৌড়ে এসে একটা চিলে ; মানুষ মারে ছাগ ও মাছে,—এই ত ধরা —হিংসা-নীতি চলছে কঠোর ; নেইক দয়া, নেই বরুণ, নেইক প্রতি"।