পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆ్నూ^్న মাধবীর কৌতুকোজ্জল মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বিমানবিহারী কহিল, “না না হোমিওপ্যাথিকে অতটা অবহেলা করা চলে না, আপনি বড় বাড়াবাড়ি করছেন।” বিমানবিহারীর কথা শুনিয়া তারান্বন্দরী মৃদ্ধ হাস্তে কহিলেন, “তুমি ওর কথা শোন কেন বাবা ? হোমিওপ্যার্থী ভিন্ন অন্য কোনও ওষুধ স্বরেশ এক ফোটা খায় না। শুধু মাধবীকে ক্ষ্যাপাবার জন্ত ও-সব কথা বলছে!” তৎপরে তারান্বন্দরী একে একে বিমানবিহারীর ও তাহার সংসারের পরিচয় লইতে লাগিলেন এবং তদবসরে মাধবী স্বরেশ্বরের হস্ত ধৌত করিয়া ব্যাণ্ডেজ বাধিয়া ग्निल । বিমানবিহারী তারামুন্দরীর সহিত কথোপকথন করিতেছিল কিন্তু তাহার দৃষ্টি ও মনোযোগ ছিল মুরেশ্বরের হস্তের প্রতি। যেরূপ পরিচ্ছন্নভাবে মাধবী ক্ষত ধৌত করিয়া দিল ও যেরূপ নিপুণতার সহিত ব্যাণ্ডেজ বাধিয়া দিল তাহ দেখিয়া বিমানবিহারী বিস্মিত হইল এবং নিজের কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও কিছু পূৰ্ব্বে এই কার্ধ্যের জন্ত স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া অগ্রসর হইয়াছিল ভাবিয়া মনে মনে লজ্জিতও হইল । সে প্রশংসমান চক্ষে সম্মিতমুখে কহিল, “এগ্লন আমি বুঝতে পেরেছি স্বরেশ্বরবাবু, এ-কাজের জন্তে ডাক্তার ডাকৃবার দরকার ছিল না। কোনো ডাক্তারই এর চেয়ে বেশী কিছু করতে পাবৃত না।” স্বরেশ্বর মাধবীর আকুক্ত মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া সহস্তে কহিল, “তবে আর কি মাধবী, এত বড় সার্টিফিকেট পেলি, এখন বিমান-বাবুকে কিছু খাবার আর এক গ্লাস ঠাণ্ড জল খাইয়ে দে।" বিমান ব্যস্ত হইয়া কহিল, “না, না, খাবারের কোনে দরকার নেই,-- আমি খেয়ে বেরিয়েছি, অনর্থক ব্যস্ত হবেন না।” তারামুন্দরী কহিলেন, “ব্যস্ত কি বাবা ? আজ "প্রথম বাড়ীতে এলে একটু মিষ্টিমুখ করবে বই কি। মাধৰী ঘরে থাবার তৈরী করে রেখেছে, তাই একটু थोंe ।” বিমান মৃদ্ধ হাসিয়া কহিল, “মিষ্টিমুখ করা যদি সম্পর্ক পাতানর একটা বিধি হয়, তা হ’লে নিশ্চয়ই মিষ্টিমুখ প্রবাসী—জাঘাঢ়, ১৩৩০ [ २e* ऊां★, $म १७ করব । ছেলে-বেলাতেই যে হতভাগ্য মা হারিয়েছে, মা-পাওয়ার অম্বষ্ঠানে সে বিন্দুমাত্র খুৎ রাখতে রাজী নয়। কিন্তু মা, নিয়মপালন ধেন নিয়মপালনের বেশী কিছু না হয়।” বিমানের মাতৃহীনতার এইটুকু সকরুণ মৰ্ম্মস্পর্শী উল্লেখে স্নেহশীলা তারামুন্দরীর নিতোদ্যত মাতৃহৃদয় চকিত হইয়া উঠিল ; এবং স্বরেশ্বর ও মাধবী তাহাদের অতৃতীয়-ভাজ্য মাতৃস্নেহে বিমানকে এমন নিৰ্ব্বিকল্প অধিকার সঞ্চার করিতে দেখিয়া অনাস্বাদিত আনন্দে সপুলকে চাহিয়া রহিল। কলিকাতার গৃহাভ্যস্তর হইলেও আলোকে ও বাতাসে শরৎকালের অনাবিল মাধুৰ্য্য এমন একটা অকুকুল অবস্থা রচনা করিয়াছিল যাহার মধ্যে দেখিতে দেখিতে এই সদ্যস্থাপিত সম্পর্কের চেতন মনোরম ও বন্ধন দৃঢ় হইয়া উঠিল এবং কিছু পরে জলযোগ করিয়া বিমান যখন তারাস্বন্দরীকে প্রণাম করিয়া বিদায় প্রার্থনা করিল, তখন তারাসুন্দরীর হৃদয় নব-নিষিক্ত বাৎসল্যরসে আপ্নত হইয়া গেল । [ & অপরাহ্লে এক পশলা বৃষ্টি হইয়া আকাশ নিৰ্ম্মল ও বায়ু শীতল হইয়া গিয়াছিল। তরুপল্লব-বিরল কলিকাতা সহরেরও আকৃতি, প্রথমে বর্ষাজলে স্নাত, পরে রৌদ্রকরে উদ্ভাসিত হইয়া, সিক্তনেত্রপল্লব কিন্তু হাস্যোৎফুল্লমুখ বালকের মত বিচিত্র হইয়া উঠিয়াছিল। প্রমদাচরণ র্তাহার বসিবার ঘরে, একটা ইজি-চেয়ারে শয়ন করিয়া লাল নীল পেন্সিলের দাগ কাটিয়া গীতা অধ্যয়ন করিতেছিলেন, এবং পত্নী জয়ন্তী অদূরে একটা চেয়ারে বসিয়া সম্ভবতঃ কোনও বাংল। উপন্যাসকাহিনীতে নিবিষ্ট হইয়াছিলেন, এমন সময়ে স্বরম প্রবেশ করিয়া কহিল, “বাবা, স্বরেশ্বর-বাবুর খবর ত আজ একবারও নেওয়া হ’ল না। ঠাকুরপো সকালে গিয়েছিলেন কি না তাও জানা গেল না ।” প্রমদাচরণ ধীরে ধীরে নাসিকা হইতে চশমা খুলিয়া খাপের মধ্যে ভরিয়া রাখিয়া স্বরমার দিকে চাহিয়৷ কহিলেন, “বিমান কি আজ সকালে আসেন নি ?