পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা } পূজা করে, কৈলাস-পৰ্ব্বতের আকৃতি অনেকটা সেইরূপ ; এই কারণেই বোধ হয় এই পৰ্ব্বতটির সহিত মহাদেবের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয় । কিছুদূর অগ্রসর হইলেই রাক্ষস-তাল ও তষ্মধ্যস্থ দ্বীপগুলি দৃষ্টিপথে পড়ে। একটি দ্বীপে স্তুপীকৃত শ্বেত পদার্থ দেখিলাম। লোকে বলে ঐগুলিই পূৰ্ব্বকালের রাজহাসের ডিমের ভাঙ্গা খোলস । আমরা চলিতে চলিতে চারিদিকের ঝোপ হইতে খরগোসগুলিকে নিভীকৃভাবে বিচরণ করিতে দেখিলাম। এই পুণ। তীর্থে কেহ উহাদিগকে মারিবার চেষ্টা করে না বলিয়াই উহারা মানুষ দেখিয়া ভীত হয় না। লোকে এখানে আসিয়া অহিংসাপরায়ণ হয়, শুধু খাদ্যের একান্ত অভাবে মেষ বধ করে। এখানে ডাকাতের ভয় আছে । এই পশ্চিম তিব্বতে Ֆ8:ծ আমরা গোস্থল মঠের অৰ্দ্ধমাইল দূরে তাবু খাটাইলাম। আমাদের দ্বিভাষী, দুগ্ধ, বন্যহাসের ডিম ও জালানী কাঠ আনয়ন করিল। পরদিনও আমরা এই অপরূপ হ্রদতীরে বাস করিলাম। এই হ্রদের পদ্মফুল সম্বন্ধে অনেক কিম্বদন্তী আছে। হ্রদের মধ্যে পদ্মফুলের স্তায় একপ্রকার পীতাভ পুষ্প দেখিতে পাইলাম। জলে আরও নানা প্রকারের ফুল দেখিলাম। পৰ্য্যটক স্বেনৃ হেডিন তাহার ভ্রমণ-বৃত্তান্তে এই সুন্দর হ্রদটির বিশদ বর্ণনা করিয়াছেন। প্রাচীন হিন্দুগণ এই হ্রদ দেবতাদিগের লীলাস্থল বলিয়া নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। স্কন্দপুরাণে মানস-সরোবরের উৎপত্তি সম্বন্ধে একটি আখ্যান আছে । ব্রহ্মার পুত্রগণ কৈলাস-পৰ্ব্বতে তপস্যা করিতেছিলেন । তাহারা দেহশুদ্ধির জন্য জলাশয় খুজিয়া না পাওয়ায় ব্রহ্মা মনে মনে মানস-সরোবর জনশূন্ত প্রদেশে পেশাদার ডাকতের দল বাস করে না। কোন কোন ব্যবসায়ী ও মেষপালক এই উপায়ে নিজেদের উপার্জন বৃদ্ধি করে । অল্পক্ষণ চলিবার পর আমরা এই হ্রদটিকে বেশ পরিষ্কাররূপে দেখিতে পাইলাম । দূর হইতে পৰ্ব্বতবেষ্টিত হ্রদটিকে একটি জলপূর্ণ বাটির ন্যায় দেখা যাইতেছিল। হ্রদটির উত্তরে তুষারমণ্ডিত কৈলাস-পৰ্ব্বত, দক্ষিণে বিশাল গুরুলাপৰ্ব্বত। অপরাহ্ল ৪টার সময় হ্রদতীরে তাবু খাটাইলাম। আমি হ্রদে নামিয়া পড়িলাম। এখানে যেন শান্তি মূৰ্ত্তিমতী হইয়া বিরাজ করিতেছে। হ্রদে আধঘণ্ট। তৃপ্তিসহকারে অবগাহন করিলাম। ক্রমে দলের অষ্ট্য লোকেও হ্রদে নামিয়া স্নান করিতে লাগিল। হঠাৎ একদল লোককে আমাদের দিকে আসিতে দেখিলাম । আমাদের বন্দুকাদি দেখিয়া তাহারা চলিয়া গেল । এই হ্রদটি শুষ্টি করিলেন । এই কারণে হ্রদটির নাম মানস-সরোবর হইয়াছে । মানস-সরোবরের আক্লতি একটি ডিম্বের ন্যায় । ইহার আয়তন প্রায় ১৩৩ বৰ্গ-মাইল, পরিধি ৪৫ মাইল ও ব্যাস ১৬ মাইল । সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে হ্রদটি ১৫৩৯৮ ফুট উচ্চে অবস্থিত। স্বেন হেডিনের বর্ণনায় দেখা যায় যে হ্রদটির তলদেশ একখানি রেকণবীর আকৃতি ও একস্থানে ইহার গভীরতা ২৬৮৪ ফুট । মানস-সরোবরে কোন দ্বীপ নাই। অনেকগুলি নদী এই হ্রদে পতিত হইয়াছে। জলে অনেক বহু কুকুট সাতার কাটিতেছে দেখিলাম । হ্রদের তীরদেশে ৮টি মন্দির আছে । রাক্ষস-তাল দেখিতে আরও স্বন্দর । আঁকা-বীকা তীরভূমি ও মধ্যস্থিত দ্বীপগুলি তাহার শোভা বৰ্দ্ধন করিতেছে। কিন্তু ইহার উত্তরে ও দক্ষিণে পঙ্কিল ভূমি