পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>b" খানিক রাত্রে নববধূ ঘরে ঢুকিল । সঙ্গে সঙ্গে অপুর মনে আর এক দফা একট। অবাস্তবতার ভাব জাগিয়া উঠিল । এ মেয়েটি তাহারই স্ত্রী ?...শ্ৰী বলিতে যাহা বোঝায় অপুর ধারণ ছিল, তা যেন এ নয়...কিংবা হয়ত স্ত্রী বলিতে ইহাই বোঝায়, তাহার ধারণা ভুল ছিল । মেয়েটি দোরের কাছে ন ধধৌ ন তস্থে অবস্থায় দাড়াইয়া ঘামিতেছিল—অপু অতি কষ্ট্রে সঙ্কোচ কাটাইয়া মৃদুস্বরে বলিল—আপনি—তু—তুমি দাড়িয়ে কেন ? এখানে এসে বসে~ -- বাহি&ে বহু বালিকাকণ্ঠের একটা সম্মিলিত কলহাস্যধ্বনি উঠিল। মেয়েটিও মৃদু হাসিয়া পালঙ্কের একধারে বসিল—লজায় অপুর নিকট হইতে দূরে বসিল । এই সময় প্রণবের ছোট মামী-মা আসিয়া বালিকার দলকে বকিয়া ঝকিয়া নীচে নামাইয়া লইয়! যাইতে অপু অনেকটা স্বস্তি বোধ করিল । মেয়েটির দিকে চাহিয়! বলিল— তোমার নাম কি ? মেয়েটি মৃদুহুরে নতমুখে বলিল—শ্ৰীমতী অপর্ণ দেবী --সঙ্গে সঙ্গে যে অল্প একটুখানি হাসিল । যেমন স্বন্দর মুখ, তেমনি স্থদের মুখের হাসিটি–কি রং! কি গ্রীবার ভঙ্গি ! চিবুকের গঠনটি কি অপরূপ—মুথের দিকে চাহিয়৷ উজ্জ্বল বাতির আলোয় অপুর যেন কিসের নেশা লাগিয়া গেল । দুজনেই পানিকক্ষণ চুপ। অপুর গল। শুকাইয় আসিয়াছিল । বুজা হইতে জল ঢালিয়া একগ্লাস জলই সে খাইয়া ফেলিল। কি কথা বলিবে, সে খুজিয়া পাইতেছিল না, ভাবিয়া ভাবিয়। অবশেষে বলিল— আচ্ছা আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়াতে তোমার মনে খুব কষ্ট হয়েচে–না ? বধু মৃদু হাসিল । —বুঝতে পেরেচি ভারি কষ্ট হয়েচে-তা অামার-- এই প্রথম কথা, তাহাকে এই প্রথম সম্বোধন ! অপুর সারণদেহে যেন বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল, অনেক মেয়ে তো ইতিপূৰ্ব্বে তাহার সঙ্গে কথা বলিয়াছে, এরকম তো কখনো হয় নাই!” প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড দক্ষিণের জানাল দিয়া মিঠ। হাওয়া বহিতেছিল, চাপাফুলের সুগন্ধে ঘরের বাতাস ভরপূর । অপু বলিল-রাত দুটো বাজে, শোবে না ? ইয়ে— এখানেই তো শোবে ? মা ও দিদির সঙ্গে ভিন্ন কখনও অন্ত কোনো মেয়ের সঙ্গে এক বিছানায় সে শোয় নাই, এক একঘরে এতবড় অনাত্মীয়, নিঃসম্পৰ্কীয় মেয়ের পাশে এক বিছানায় শোয়৷ —সেট কি ভাল দেখাইবে ? কেমন যেন বধিবাধ ঠেকিতেছিল। একবার তাহার হাতখানা মেয়েটির গায়ে অসাবধানতাবশত ঠেকিয়া গেল—সঙ্গে সঙ্গে সারা গ৷ শিহরিয়া উঠিল। কৌতুহলে ও ব্যাপারের অভিনবতায় তাহার শরীরের রক্ত ধেন টগবগ, করিয়া ফুটিতেছিল— ঘরের উজ্জ্বল আলোয় অপুর স্বন্দর মুখ রাঙা ও একট; অস্বাভাবিক দীপ্তিসম্পন্ন দেখাইতেছিল । হঠাৎ সে কিসের টানে পাশ ফিরিয়া মেয়েটির গায়ে ভয়ে ভয়ে হাত তুলিয়া দিল । বলিল—সেদিন যখন আমার সঙ্গে প্রথম দেথা হ’ল, তুমি কি ভেবেছিলে7. মেয়েটি মৃদু হাসিয়া তাহার হাতখান আস্তে আস্তে সরাইয়া দিয়া বলিল--আপনি কি ভেবেছিলেন আগে বলুন ?. সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের স্থঠম, পুষ্পপেলব হাতপানি বাতির আলোয় তুলিয়া ধরিয়া হাসিমুখে বলিল— গায়ে কাটা দিয়ে উঠেচে – এই দেখুন কাট দিয়েচে– কেন বলুন না ?..কথা শেষ করিয়া সে আবার মৃদু হাসিল । এতগুলি কথা একসঙ্গে এই প্রথম ! কি অপূৰ্ব্ব রোমান্স এ ..ইহার অপেক্ষা কোন রোমান্স আছে আর জগতে, না চিনিয়া, ন বুঝিয়া সে এতদিন কি হিজিবিজি ভাবিয়া বেড়াইয়াছে জীবনের, জগতের সঙ্গে এ কি অপুৰ্ব্ব ঘনিষ্ঠ পরিচয়!..তাহার মাথার মধ্যে কেমন যেন করিতেছে, মদ খাইলে বোধ হয় এরকম নেশা হয়, ঘরের হাওয়া যেন ঘরের মধ্যে যেন আর থাকা যায় না... বেজায় গরম । সে বলিল—একটু বাইরের ছাদে বেড়িয়ে আসি, খুব গরম, না ? আসূচি এখুনি— বৈশাথের জ্যোংস্কা রাত্রি-রাত্রি বেশী হইলেণ্ড বাড়ীর লোকে এখনও ঘুমায় নাই, বৌভাত কাল এখানেই হইবে, নীচে তাহারই উদ্যোগ আয়োজন চলিতেছে ।