পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাস্ত বৃষ্টির জন্য প্রায়ই খারাপ হয়ে থাকে, অনেক জায়গায় ঝিলমের ‘গজ’ হাজার দেড়হাজার ফিট নীচে ; সামান্য একটু ভুল হ’লেই ঝিলমে সমাধিস্থ হতে হয়। অনেক দুর্ঘটনায় মোটর বা মোটর আরোহীদের চিহ্ন পৰ্য্যন্ত পাওয়া যায়নি । কিন্তু বিপদের ভয় যেখানে বেশী প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্যসম্ভার সেইখানেই সাজিয়েছেন বেশী করে । বাস্তার এক একট। বাক যেই চোখে পড়ে মনে হয় যেন একথান দৃশ্যপট বদলে গেল, কোনটা বেশী সুন্দর বলা । কঠিন হয়ে ওঠে । বরসাল থেকে উরি ডাকবাংলোয় চারপাচ ঘণ্টায় পৌছানো যায়। এই রাস্তার বাংলোতে জনপিছু তিন ঘণ্টার জন্য ০, ২৪ ঘণ্টার জন্য এক টাকা ভাড়া দিতে হয় । তা ছাড় ডিনার বা লাঞ্চ প্রভৃতির চাজ স্বতন্ত্র। উর হতে ৯ মাইল দূরে মাছরায় ইলেক্ট ক্যাল পা ওয়ার হাউস, এইখানে কাঠের নলের ( flume ) মধ্যে দিয়ে বিলমের জল ছ’ মাইল দূরে নিয়ে প্রপাতের সৃষ্টি করে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করা হয় এবং ৫৩ মাইল দূরে শ্রীনগর এই শক্তিতেই আলোকিত হয় । এর পর রাস্ত বিলমের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে, একবার পাশে আসে আবার দূরে চলে যায়। দেড় ঘণ্টায়, বারমুল্লায় পৌছানে৷ যায় । কাশ্মীর উপত্যকার আরম্ভ এইখানে, উন্মাদিনী ঝিলম এখানে শাস্তমূৰ্ত্তি। তাই বারমুল্ল হ’তে থানেবল ১০২ মাইল ঝিলমে নৌকা চলে। অনেকে এইখানেই হাউস বোট নেন এবং উলার হ্রদের মধ্য দিয়ে শ্রীনগরে b- প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড পৌছান। নৌকাপথে দুই-তিন দিনেই শ্ৰীনগর পৌছান যায়। বারমুল্লা থেকে দেখা যায় ৩৫ মাইল দূরে হরমুখ পৰ্ব্বত ও ৭০ মাইল দূরে তুষারশীর্ষ বিরাট নাঙ্গ পৰ্ব্বত। শ্ৰীনগরের ৫ মাইল দূর থেকে দেখা যায় চারিদিকে বাধ জলের মাঝে মাঝে উইলো গাছ । শ্রীনগরের আয়তন দৈর্ঘ্যে, প্রায় ৫ মাইল । ঝিলমের বামে বসতি কম, দক্ষিণে বসতি খুব বেশী। এই যদি শ্ৰীনগর, তবে না জানি বিশ্ৰী নগর কি ? শ্রীনগর দেখলেই মনটা দমে যায় । ইংরেজের অম্বুবাদ করেন City of the Sun ৷ শী কোথায় স্বৰ্য্য হয়েছেন আমার জানা নেই। শ্রী হলেন তন্ত্রদেবী, যেমন শীক্ষেত্র । এ নগর ও খে এককালে তন্ত্রক্ষেত্র ছিল, তা সহজেই অল্পমান করা যায়। চিত্রে ছাড়া শ্রীনগরের আর কোথাও সৌন্দৰ্য্য নেই। তবে নদীর উপর সু-একখানা বাড়ী মাঝে মাঝে দেখা যায়, যাতে কাঠের উপর কারুশিল্পের কিছু নিদর্শন আছে । এখানকার বাড়ী অতি পলক, ভিত পাথরের, কাঠের ফ্রেমে ইট বসান, ছোট ছোট দরজা ও জানালা ; তিনচার তলা বাড়ীই বেশী। এই শহরে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের বাস। জাপানের মত একটা ভুমিকম্পে শহরট। যদি ভূমিসাং হয়ে যায় তবেই শ্ৰীনগর সত্যিকার শ্রীনগরে পরিণত হইতে পারে। এমন আদর্শ নোংরা শহর পৃথিবীতে আর কোথাও আছে কি ন সন্দেহ । প্রশ্ন উঠবে তবে মানুষ এখানে আসে কেন ? শ্রীনগর কাশ্মীর নয় ব’লে ! শ্রীনগরকে বাদ দিয়ে “যে দিকে ভণকাই ষ্ট্ৰাখি তোমার মহিমা দেখি ” কাশ্মীরের আকাশে বাতাসে, তৃণে-লতায়, জলে-স্থলে এমন সৌন্দর্য্য যে, বিশ্বে তার তুলন। নেই । ক্যামের সঙ্গে এনেছিলাম, দেখলাম একজন্মে ছবি তোলা শেষ হবে না, কারণ প্রকৃতি এখানে তার সমস্ত সৌন্দৰ্য্যসম্ভার নিঃশেষে উজাড় করে দিয়েছেন। এদেশের সৌন্দয্য-বর্ণনায় মানুষের অত্যুক্তি অলঙ্কার পরাজিত, নতশির। ব্রহ্ম সম্বন্ধে ঋষির বলেছেন, "যতে বাচো নিবৰ্ত্তস্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ,” কাশ্মীর সম্বন্ধেও সেই কথাই খাটে। এ দৃশ্য দেখলে আত্মা তৃপ্ত হয়, আনন্দে প্রাণ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।