পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বহুবারস্তু ১৭৩ অতুলনীয়। সে সম্বন্ধে সমালোচনা যাহা করিত, তাহা যে-কোনো সবজাস্ত মাসিক সমালোচনার চেয়ে কঠোর ও তাহার মতে পক্ষপাতশূন্ত । শোকে-মুখে হাসিতেকান্নায় গানে-গল্পে সৰ্ব্বক্ষণই সে সকলের পাশটিতে অকুষ্ঠিতভাবে দাড়াইয়া সহানুভূতির প্রলেপ মাথাইতে দক্ষ ছিল । বাড়ী তাহার এই কলিকাতারই অপর প্রাস্তে । কলেজ দূর বলিয়া এবং সেখানে হটগোলের মধ্যে পড়াশুনার অসুবিধা হয় বলিয়া সে মেসে আশ্রয় লইয়াছে । বিমলের সঙ্গে তাহার ভাবটা হইয়াছিল কিছু বেশ । এই কম-বেশীর কথা লইয়া অনেক দিন অনেক তর্ক হইয়াছে । সে বলিয়াছে—তাহার উদার অন্তরে ভালবাসিবার ধারাটুকু কখনও কোনো তীর ঘেষিয় যায় নাই, এবং তীরের শামল শস্তসম্ভারের শতে মুগ্ধ হইয়। সে স্রোত মুঠৰ্ত্তের তরেও নিশ্চল হইয় দাড়ায় নাই । তাহ চলিয়াছে –আপন ভুলিয়া—তটিনীর দুটি তীরে সম্পদ রচনা করিয়া সকলকে সমানভাবে পরিতৃপ্তি বিলাইয়। অবিরাম অশ্রাস্ত গতিতে । কিন্তু বিমলের টেবিলে উপহারের মাত্রাধিক্য দেখিয়৷ সকলে স্থিরনিশ্চয় করিয়াছিল,—এখানে নদীর স্রোতট। কিছু প্রবল এবং ভগ্নাতটের ক্রোড়ে যে এতটুকু স্থান রচনা করিয়াছে তাহার মধ্যে কুলুকুলু ধ্বনিটুকু আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে । মেসে সকলেরই স্বতন্ত্র একটা মত থাকে এবং তাহা লই অবসর-মুহূৰ্ত্তে তুমুল তর্কের স্বষ্টি হইয় থাকে। রসময়ের কোনো স্বতন্ত্র মত ছিল না, অথচ যে-কোনো বিষয় লইয়া সে কয়েক ঘণ্টা অনর্গল তর্ক করিতে পারিত। কেবলমাত্র বিবাহ-প্রসঙ্গে সে কোনো তর্ক করিত না । নিজের আর্থিক অবস্থ। বিষয়ে মুখে যে কথা বলিত, কৰ্ম্মক্ষেত্রে অনেকস্থলেই তাহার ব্যতিক্রম দেখা যাইত । হয়ত কোনোদিন সতীর্থের নিকট আসিয়া চুপি চুপি কহিত,--আজ ছুটে টাকা ন দিলেই নয়। বাড়ী থেকে খরচ আসতে দেরী হয়ে গেছে, জামার দোকানে— ইত্যাদি । সে দিত । এবং কয়েক ঘণ্টা পরে সারা মেসটিতে نگا۔ --سے ہتا • প্রচার হইয়া পড়িত-রসময়ের সদ্যক্রীত ফাউণ্টেন পেনটি অমুককে উপহার প্রদত্ত হইয়াছে। ঋণদাতা যদি আড়ালে ডাকিয়া বলিত,—এই তোমার জামার দোকান ? সে শশব্যস্তে বলিত,—চুপ চুপ ? উনি শুনলে দুঃখু পাবেন। কদিন থেকে বলছিলেন কি না, না দিলে কি মনে করবেন । সকলকে সন্তুষ্ট করিবার এই প্রয়াস তাহার মজ্জাগত হইয়া গিয়াছিল । সেদিন সকালেই বুষ্টি নামিয়াছিল । এমন দিনে বাতায়নে বসিয়| বিরহী যক্ষের কল্পনা করায় তৃপ্তি আছে ও মেসের মধ্যে অলকার কল্পনা-প্রসার ও বেশ বাড়িয়া চলে। বাতায়ন-বাহিরে অবিরাম ধারা বর্ষণে ধূম্রাকার মেঘের মধ্যে অ-দেখা প্রিয়ার মূৰ্ত্তিখানি অস্পষ্টপ্রায় হইয়। জাগিলেও, মনটাকে এক মুহূৰ্ত্তে উদাস করিয়া ফেলে। ইচ্ছা হয় সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া ছুটিয়া যাই সেই একটি প্রিয় গৃহকোণে এবং মুখোমুখী বসিয়া এই ধারার সঙ্গে মনের উল্লাস মিশাইয়া দিয়া কয়েকটি মুহূর্তের স্বর্গ হষ্টি করি । হরিশের ঘরে জনকয়েক জড় হুইয়া রসময়কে ধরিয়া বসিল, এমন বাদলার দিনে একটি মুখরোচক গল্প ন৷ হ’লে মানায় না, যা হয় কিছু বল । কে একজন বলিল, —যা হয় কিছু নয়, ওর সঙ্গে রোমান্স থাক চাই । রসময় বলিল,—একটি রোমান্সের কথা মনে আছে । তবে তাকে ঠিক রোমান্স বলা চলে না, কেন-না বাঙ্গালীর জীবনে ওটার একান্ত অভাব । সকলে বলিল, - মধু অভাবে গুড় । তাই যথেষ্ট। বল । রসময় যাহা বলিল— কলিকাতারই একটা গলি । এ-পার ও-পার দুখান৷ বাড়ী। একটির অধিবাসীরা বহুদিন হইতে এখানে বাস করিতেছে, অন্যটির প্রায়ই ভাড়াটিয়া বদল হইয়া থাকে । কারণ ভাড়ার হারটা কিছু অত্যধিক । লোকে মাথ৷ গুজিবার জন্য প্রথমে দু-এক মাস এখানে আশ্রয় লয়— পরে সুবিধা বুঝিয়া অক্ষত্র চলিয়া যায়। সুতরাং ঐ বাড়ীর