পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বহবারম্ভ ১৭৭ তারপর বহুক্ষণ চুপচাপ কাটিয়া গেল। কতক্ষণ এ ভাবে দুজনে দাড়াইয়া থাকিত বলা যায় না, মধ্যাহের উত্তপ্ত রৌদ্র প্রথরতর হইয়া বাহা জগতের চৈতন্য আনিয়া দিল। জন্মের শোধ শেষ দেখা দেখিয়া দুটিতে পরস্পরে দৃষ্টির বাহিরে চলিয়া গেল। রসময় সহসা নিস্তব্ধ হইয়া গেল। একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস তাহার বুক ঠেলিয়া উঠিয়া সকলকে সচকিত করিয়া দিল। সকলে বক্তার মুখের পানে চাহিয়া দেখিল—নয়নে তাহার দুটি অশ্রুবিন্দু পতনের আবেগে টলটল করিতেছে। হরিশ বলিল,—তা হ’লে এ উপন্যাসের নায়ক তুমি স্বয়ং। রসময় বিহবলদৃষ্টিতে তাহার পানে চাহিয়া শুদকণ্ঠে কহিল, হঁ। —আমনি সমবেত বিস্ময়বিমূঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন উঠিল,—গল্পটা যে মাঠে মারা গেল। তারপর, কোথায় ব। গেল সেই তরুণী— রসময় বলিল,--তা ত জানি না । রমেন বলিল,—কি নাম তার ? — তা ও জানি না । সকলে হো-হে করিয়া হাসিয়া উঠিল । রসময় তাড়াতাড়ি কহিল,—নাম না জানলেও স্মৃতি তার অক্ষয় হয়ে আছে, জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত পয্যন্ত ত৷ খুঁকি বে--- ভূপেন বলিল,—কিন্তু সেই চিরুণী--কাটা— পকেট হইতে কাগজের একটি মোড়ক বহির করিয়া সে বিছানার উপর রাখিল । সকলের সম্মুখে সেই মুঠৰ্ত্তে বাদলধারা ভেদ করিয়া একটি জীবন্ত কাহিনী যেন ফুটিয়া উঠিল ; একটি তরুণীর মোহময় মুখ,—চক্ষের বিলাসবিহ্বল অৰ্দ্ধবিকশিত দৃষ্টি, অধরের ক্ষাগ্র কম্পন ও পুষ্পসারের অলক-গন্ধবাহী সৌরভ । সকলই সা গ্রহে মোড়ক খুলিয়া ফেলিল। বাহির হইল একটি ছোট চিরুণী ও দুটি কাটা । ঘরের স্নান আলোকেও তাহা চক্চক্ করিয়া উঠিল । হরিশ বলিল,-এযে নতুন রে,—একদম । দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া রসময় বলিল,—একদিন মাত্র সে *বহার করেছিল । ভূপেন চিরুণীখান হাতে তুলিয়া লইয়া কহিল,— কিন্তু এখানা বড় ছোট দেখাচ্ছে যে ! বোধ হয় ন-দশ বছরের মেয়ের মাথার । বোমা-ফাটার মত শব্দ করিয়া ক্রুদ্ধ রসময় বলিল,— চুপ ষ্টুপিড। আমার পবিত্র স্মৃতির এমনভাবে অপমান করিস না । এবং পরমুহূৰ্ত্তেছো মারিয়া আমাদের হাত হইতে জিনিষ কয়টি কাড়িয়া লইয়। দ্রুতপদে আপনার কক্ষে চলিয়া গেল । এমনভাবে রাগিতে কেহ তাহাকে কোনদিন দেখে নাই । সকলেই স্তম্ভিত হইয়া রহিল। বুঝিল আঘাতটা যেমনই অতর্কিত, তেমনই নিৰ্ম্মম হইয়াছে। ভূপেনকে সকলে তিরস্কার করিতে লাগিল । ভূপেন তাহাতে একটুও দমিল না। কহিল, - আচ্ছা দাড়াও, এ রহস্য যদি ভেদ না করি ত আমার নাম ভূপেন নয়। ওর আষাঢ়ে গল্পের না কিছু করেছে – বলিয়া বাহির হইয় গেল । এমনভাবে বাদলার আনন্দটা মাটি হইয়া যাওয়ায় সকলেরই মন কেমন যেন ভারাক্রাস্ত হইয়া পড়িল । চুপচাপ যে যাহার সীটে পড়িয়া রসময়ের দুঃখময় জীবনের কথাই ভাবিতে লাগিল । পরদিন প্রাতঃকালে এক ব্যক্তি আসিয়৷ জিজ্ঞাসা করিল,— রসময় এখানে থাকে ? ভূপেন কলতলায় মুখ ধুইতেছিল, অগ্রসর হইয়। আগন্তুকের সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিল । বস্তৃক্ষণ ধরিয় তাহারা তালাপ করিল। অবশেষে ভদ্রলোককে লইয়। হরিশের ঘরে ঢুকিয়া ভূপেন সমবেত চা-পান-নিরত যুবকবৃন্দের পানে চাহিয়া মুছ হাসিয়া বলিল,—ইনি রসময়ের মেজদা । কালকের চিরুণী-রহস্য এর কাছ থেকেই শুনতে পাবে । সকলে তাহাকে সম্মান করিয়া বসাইল ও তাহার আগমনের উদ্দেশু জিজ্ঞাসা করিল। তিনি বসিয়া বলিলেন,--যাক সন্ধানটা পেলুম নিশ্চিন্ত ! ছোড়া এমনি ভাবিয়ে তুলেছিল । ভদ্রলোকের কাছে অপমান আর কি ? সকলে জিজ্ঞাসা করিল,-কেন ?