পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ এই নে, এই কাপড়, জামা তোর পছন্দ হয় ?” মায়। বলিল, “আচ্ছা দাও।” ইন্দুর সাহায্যে কাপড়চোপড় বদলাইয়া সে খাটে উঠিয়া শুইল । ইন্দুর আদেশে বুড়ী আয় মেঝের পাতা বিছানাটা উঠাইয়া লইয়া গেল। ( ગr ) প্রভাস রেজুনে আসিয়া মহা ফাফরে পড়িয়াছিল । ষে কাজের জন্য আসিয়াছিল, তাহা হওয়া এখন অসম্ভব । মায়া এখন পর্য্যস্ত সারিবার কোন লক্ষণই দেখায় নাই । ইন্দু একদিন প্রভাসকে উপরে লইয়া গিয়াছিল, কিন্তু তাহার নাম শুনিবামাত্র মায় মুখ লাল করিয়া পিছন ফিরিয়া বসিল, কিছুতেই তাহাকে প্রভাসের দিকে ফিরান গেল না । অগত্যা প্রভাস নামিয়া আসিল, তাহার পর আর মায়ার সঙ্গে দেখা করিবার চেষ্টা করে নাই। নিরঞ্জন তাহাকে মায়ার গাড়ীখানা ছাড়িয়া দিয়াছিলেন । সে খাওয়া-শোওয়া বাদে বাকী সব সময়টাই বেড়াইয়া কাটাইয় দিত। কিন্তু ইহাও তাহার বিশেষ ভাল লাগিত না, একলা একলা আর কাহাতক ঘোরা যায় ? সঙ্গে যাইবার কেহ নাই, বাড়ীর সকলেই বিষণ্ণ, বিব্রত, গল্প করিবার সময় পর্য্যন্ত তাহাদের নাই । অঙ্গয় দু-একবার প্রভাসের সঙ্গে গিয়াছিল বটে, কিন্তু তাহারও পরীক্ষার বৎসর, বেশী সময় সে নষ্ট করিতে সাহস করিত না । চলিয়। যাইতেও প্রভাস পারিতেছিল না। কিছু কাছের দেশ নয়, একবার ফিরিয়া গেলে আবার কবে যে আদিতে পারিবে, তাহার কিছুই ঠিক-ঠিকানা নাই। অথচ মায়ার এই ইচ্ছাটা কার্য্যে পরিণত করার উপরে তাহার সমস্ত মন পড়িয়াছিল । অন্য অনেক গ্রামে সে এই সকল জনহিতকর অনুষ্ঠান করিয়া বেড়াইয়াছে, নিজেদের গ্রামেই এতদিন অর্থের অভাবে কিছু করিয়া উঠিতে পারে নাই। এমন একটা সুযোগ তাই চট করিয়া ছাড়িয়া দিতে তাহার মন উঠতেছিল না । মাসখানেক ছুটি তাহার ছিল, যদিই ইহার মধ্যে মায়া সারিয় ওঠে, এই ভরসাই সে করিতেছিল । আজ শুক্রবার, কলিকাতার ডাক্তার আসিবার কথা । প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড নিরঞ্জন চা খাইয়া, তাহীকে আনিতে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিলেন। ইন্দু বসিয়া তাহাকে খাওয়াইতেছিল । প্রভাস চা খায় না, সে জলযোগ শেষ করিয়া বসিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছিল। ছোকৃরা এমন সময় আসিয়া খবর দিল, “হুজুর, ব্যারিষ্টার সাহেব ।” নিরঞ্জন বলিলেন, “এই কাম্রামে লে আও।” ইন্দু তাড়াতাড়ি উঠিয়া যাইবার জোগাড় করিতেছে দেখিয় নিরঞ্জন বলিলেন, “তুই যাস্নে, ছেলেটি আমাদের আত্মীয় হবার খুব সম্ভাবনা আছে, যদি ভগবান দয়া করেন ।” বিবাহের নামগন্ধ পাইলে কৌতুহলী না হয় এমন নারী জগতে দুর্লভ। ইন্দু আবার বসিয়া পড়ি । প্রভাস নিরঞ্জনের কথায় খবরের কাগজ হইতে মুখ তুলিয়া তীক্ষ দৃষ্টিতে আগন্তুককে দেখিতে লাগিল । ই, দেখিবার মত চেহারা বটে, রূপে অন্ততঃ মায়ার উপযুক্ত পাত্রই হইবে । দেবকুমার নিকটে আসিতেই নিরঞ্জন বলিলেন, “এই যে । কাল সারাদিন এসনি যে ?” দেষকুমার বলিল, “বড় কাজের চাপ পড়েছিল, সেই জন্তে আসতে পারিনি। বাবার আবার জর এল, তাকে দেখবার কেউ ছিল না ।” নিরঞ্জন বলিলেন, “আজ কেমন আছেন ?” দেবকুমার বলিল, “এখন ত বেশ ভালই দেখে এলাম।” w নিরঞ্জন ইন্দুকে দেখাইয়া বলিলেন, “এই মায়ার পিসী, মঙ্গলবারের ষ্টীমারে এসেছেন।” দেবকুমার যদিও সাহেব সাজিয়াই আসিয়াছিল, তবু তাড়াতাড়ি উঠিয়া গিয়া ইন্দুকে অবনত হইয়া প্রণাম করিল। ইন্দু তাহাকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া বলিল, “বেঁচে থাক বাবা, যেমন রাজপুত্তরের মত চেহারা, তেমনি কপাল হোক। তুমি আমাদের আপনার জন হবে শুনে বড় আনন্দ হচ্ছে, এখন ঠাকুরের রূপায় মেয়েট শীগগির শীগগির সেরে উঠলেই হয়।” দেবকুমার একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল,“বিশেষ ভাল আশীৰ্ব্বাদ করলেন না, পিসিমা, আজকালকার দিনে রাজপুত্রদের যা কপাল, তা বেশী লোভনীয় নয়।”