পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o, 3. “২য় সংখ্যা ] মহামায়া ২৩৩ নিরঞ্জন বলিলেন, “তা বটে। আচ্ছা দেবকুমার ভারি লাগিতেছিল, সে একটা ছড়ি হাতে করিয়া বোসো, আমি একবার হোয়াফে যাচ্চি, ডাঃ মিত্রকে আনতে। যদিও কি ক’রে তাকে চিনব জানি না, তিনিও আমাকে কখনও দেখেন নি ।” দেবকুমার উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “চলুন, আমি Yাপনার সঙ্গে যাচ্ছি। ডাঃ মিত্রকে আমি চিনি, বিলেত যাবার আগে বেশ আলাপ ছিল।” নিরঞ্জন ষলিলেন, “তা হ’লে ত ভালই হয় । প্রভাসের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়া হ’ল না ত। প্রভাস, এই ; আমাদের শিবচরণবাবুর ছেলে দেবকুমার, এখানে } গ্র্যাকটিস আরম্ভ করেছেন। দেবকুমার, ইনি আমাদের গ্রামেরই ছেলে প্রভাস গাঙ্গুলি, সোশ্বাল ওয়ার্কে খুব উৎসাহী। এর সাহায্যে মায়া গ্রামে একটা স্কুল করবে ঠিক করেছিল, সেই সম্বন্ধে কথাবার্তা কইতেই এর আসা । মায়া অস্থখ করে পড়াতেই মুস্কিল হয়েছে।” দেবকুমার প্রভাসকে নমস্কার করিয়া বলিল, “আজ বিকেলে এসে আপনার সঙ্গে কথা বলব। কাজগুলি আমার নিজের খুব ভাল লাগে, যদিও সুবিধার অভাবে কিছু করতে পারিনি । ওদেশে ঘুরে ঘুরে ওদের কাজের ধরণধারণ অনেকটা দেখে এসেছি ।” প্রভাস প্রতিনমস্কার করিয়া বলিল, “তাহ’লে আপনার কাছেই আমি অনেক নূতন কথা শুনতে পাব।” বেশী কিছু বলিতে তাঙ্গার ইচ্ছা করিল না। অন্য সকলে দেবকুমারকে দেখিয়া যতই উচ্ছসিত হইয়া উঠন, তাহার নিজের এই বিলাত-ফেরৎ যুবকটিকে মোটেই ভাল লাগিল না। রূপবান বটে, কিন্তু পুরুষমানুষের দাম ত , রূপের উপর নির্ভর করে না ? নিরঞ্জন দেবকুমারকে লইয়া বাহির হইয়া গেলেন । ইন্দু বলিল, “দিব্যি থাশ ছেলেটি, না প্রভাস ? ঘর আলো করা জামাই হবে। এখন মেয়ে সাৰ্বলে বাচি । যাই দেখি গিয়ে কি কবৃছে। আমি ধরে-বেঁধে না খাওয়ালে ত খাবেও না কিছু। তুমি কি এখন বেরুবে ?” প্রভাস বলিল, “দূরে কোথাও যাব না। এই লেকের ধারে একটু ঘুরে আসি।” অকারণেই তাহার মনটা বড় છઠે বাহির হইয়া গেল। ইন্দু ছোক্রাকে টেবিল পরিষ্কার করিতে আদেশ করিয়া উপরে চলিল । মায়া মুখ ধুইল, কাপড় ছাড়িয়া ঘরের কোণে চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। ইদুর সঙ্গে তাহার যে-সকল দেবদেবীর পট, পূজার সামগ্ৰী প্রভৃতি ছিল, সব এখন মায়া দখল করিয়াছে। ঘরের এক কোণে ঠাকুরের সিংহাসন পাতিয়াছে, সকালে অঞ্জলি, বিকালে আরতি প্রভৃতি স্বরু করিয়াছে। তাহার পুরাকালের যে সকল বাংলা সংস্কৃত বই ছিল সব বাহির করিয়াছে, মাঝে মাঝে সে সব খুলিয়া বসে। তবে মিনিট পাচ সাতের বেশী মন দিতে পারে না, আবার তুলিয়া রাখে। পোষাক-পরিচ্ছদেরও বিশেষ বদল হয় নাই, তবে পুরান ছেড়া কাপড়গুলি ত্যাগ করিয়া এখন আলমারীর কাপড়চোপড় ব্যবহার করিতে আরম্ভ করিয়াছে । মুখের ভাব পূর্বেরই মত, কিসের আঘাতে যেন তাহার চেতনা অৰ্দ্ধ-আচ্ছন্ন হইয়া আছে । ইন্দু ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “কি রে কিছু খাস্নি যে বড় ? সব ত দেখছি সাজানো রয়েছে।” মায়া নাক সিটকাইয়া বলিল, “যা সব নোংরা বাসনকোসন । ভাল করে মাজে না কিছু না, তেল ব্যাড়, ব্যাড় করছে। ওতে কি মামুষে খেতে পারে ?” ইন্দু জানিত মায়ার সঙ্গে এ অবস্থায় তর্ক করা বৃথা । তাহাকে নাওয়াইতে খাওয়াইতে হইলে তাহার মতে চলিতে হইবে । সুতরাং আর কথা না বলিয়া সে আবার নীচে নামিয়া গেল, এবং আলমারী খুলিয়া শ্বেত পাথরের রেকর্ণবী, বাটি, গেলাস সব বাহির করিয়া নূতন করিয়া খাবার গুছাইয়া উপরে লইয়া আসিল । ছোকৃর মহানন্দে আগেকার থাবারগুলি তুলিয়া লইয় চলিয়া গেল, এগুলি এখন তাহারই ভোগে লাগিবে। মায়া খাইতে বসিল । থাইতে খাইতে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিল, “পিসিম, তিনি কি এখনও আছেন নাকি ?” ইন্দু বলিল, “তিনিট কে আবার ? তোর বর ?” মায়। মুখ লাল করিয়া বলিল, “পিসিমা কি রকম ক’রে ষে কথা বল ।” -