পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] দ্বীপময় ভারত আহার সেরে এলুম। বাকে-দম্পতী অতি পূৰ্ব্বেই কবির সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন । আহার চুকিয়ে, যে দরদালানে শবাধার রাখা হ’য়েছে, তারি আঙিনায় গিয়ে উপস্থিত হ'লুম। পূজার মাচায় বসে এক পদগু-শিব আর এক পদণ্ড বুদ্ধ—শিবের আর বুদ্ধের পুরোহিত—খুব ঘটা ক’রে পূজো আরম্ভ ক’রে দিয়েছেন । মাচার পাশে একটা আটচালার মতন, তার উচু দাওয়ায় শপ বিছানো, সেখানে কি পাঠ হ'চ্ছে—সেখানে গিয়ে দাড়ালুম। Lontar ‘লোস্তার’ বা তালপাতার পুথির পাতা তুলে ধ’রে স্বর ক’রে ক’রে একজন কি প’ড়ছে, আর কালে কোট গায়ে একজন বুদ্ধ, তার মাথায় ঝুট তাতে ক’রে বুঝলুম তিনি হ’চ্ছেন একজন শৈব-পদণ্ড, এক একটা শ্লোক বা পদ পড়বার পরে তার ব্যাখ্যা ক’রে সকলকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন । ছোট্রে। আটচালাটীতে কতগুলি ভদ্রলোক চুপ ক’রে বসে বসে শুনছেন। গিয়াঞ্চারের রাজাও সেখানে এসেছেন দেখলুম-তিনি আমায় ডেকে সেথানে শ্রোতাদের মধ্যে স্থান ক’রে বসালেন । ধা পাঠ হ’চ্ছিল, অকুমানে আঁচ করছিলুম যে রামায়ণই পাঠ হ’iচ্ছল । ব্যাখ্যাত। বুদ্ধ খানিক পরে নিরস্ত হ’লেন, পিতলের সরু চোঙের মতন হামানদিস্তায় পানস্বপারী পুরে একটা সরু পিতলের ডাটি নিয়ে ঐ পান-সুপারী ছেচে থেতো করতে লেগে গেলেন । তখন একটী অল্পবয়সী লোক তারপরে ব্যাখ্যাত হ’ল ৷ কি Iাঠ হ’চ্ছে আমি জিজ্ঞাসা করলুম। শুনলুম, রামায়ণ পাঠ হ’চ্ছে, প্রাচীন বলিদ্বীপীয় ভাযায়, পালা হ'চ্ছে অশোকবনে সীতার সঙ্গে হনুমানের সাক্ষাং, লঙ্কায় হনুমানের ক্রিয়াকলাপ । এই রামায়ণ পাঠের আসরে একটা প্রবীণবয়সী পদণ্ডের সঙ্গে আলাপ হ’ল। বেঁটেখাটো চেহারার লোকটা, পরণে একখান। 'বাতক’-এর রঙীন কাপড়, কোমরে একখানা বেগুনে রঙের জরীর বুটাদার উত্তরীয়। ভাঙা ভাঙা মালাইয়ে দু এক কথার পরে আমাকে নিয়ে গেলেন পূজামঞ্চে-যেখানে পদণ্ড ছজন পাশাপাশি বসে পূজো করছেন। এই পদগুদের পূজা খানিকগণ ধীরে দেখলুম। পদগু-শিব কোনও মূৰ্ত্তি ૨8"> নিয়ে বসেন নি, খালি তার সামনে কাঠের একপায়! গোল চৌকির উপরে একটী অষ্টদল সাদা ফুলের মধ। দিয়ে, তালপাতার ছোটে একটী শিবলিঙ্গের মতন দেবপ্রতীক সজ্জিত রয়েছে। পদগু-বুদ্ধ কিন্তু পিতলের ছোটো ছোটে৷ ই তিনট মূৰ্ত্তি সামনে রেখে দিয়েছেন—দাড়ানো মূৰ্ত্তি, কোন কোন দেবতার তা বুঝতে পারলুম না, সুবিধা ক’রে কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারলুম না। প্রচুর জল ছিটিয়ে আর ফুল ছড়িয়ে, আর বিড় বিড় ক’রে মন্ত্র, আউড়ে, আর দুহাতের আঙুল দিয়ে নানা রকমের মুদ্র। করে পদণ্ড দুজন একমনে পূজা ক’রে যাচ্ছেন। যে বৃদ্ধ পদগুটী আমায় এবার উপরে নিয়ে এলেন, তাকে অষ্টদল ফুলটার উপরে তালপাতার দেবতা প্রতীকটা কি তা জিজ্ঞাসা ক’রতে, তিনি উৰ্দ্ধ আর অধ; নিয়ে দশ দিকের সঙ্গে শিবের দশটা রূপের নাম ব’লতে লাগলেন—‘ঈংসন’ বা ঈশান, ‘হারা’ বা হর, সাবৃউঅ’ বা শৰ্ব্ব, ইত্যাদি ; তার পরে আর কি কি মালাই মিশ্র বলিদ্বীপীয় ভাষায় বললেন, তা ধরতে পারলুম না,—তার মধ্যে মধ্যে ‘অংকস বা ‘আকাশ, ‘বুম' বা "ভূমি এই রকম বিকৃত উচ্চারণে দু একটা সংস্কৃত শব্দ কানে এল । তান্ত্রিক পূজার কোনও মণ্ডল ব্যাখ! ক’রে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা ক’রছেন ব’লে মনে হ’ল । অষ্টদল ফুলটার আটটা পাপড়া ভিন্ন ভিন্ন নামে আট দিকের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারূপে কল্পিত অষ্টমূৰ্ত্তি শিবের প্রতীক, এইটেই যেন তার বলবার উদ্বেগু । তারপরে পদগুটী মুদ্র সম্বন্ধে আমায় প্রশ্ন করলেন, আমি কি কি মুদ্র জানি । এই ব'লেই সাধা হাতে অবলীলাক্রমে নানা মুদ্র। ক’রে আমায় দেখাতে লাগলেন । আমি এই বিষয়ে অতি সহজেই পরাজয় স্বীকার করলুম—ব ললুম যে আমি সামান্ত ব্রাহ্মণ মাত্র, পুরোহিত বা পদগু শ্রেণীর পূজা আচারে দক্ষ ব্রাহ্মণ নই, স্বতরাং মুদ্রা করতে শিখিনি । এই পদগুটি অামায় পাঠ করতে দেখেছিলেন,—বিদেশ লোক, হঠাৎ একদিনের জন্য পুঙ্গবের কাছে এতটা থাতির পেয়েছি তাও দেখেছিলেন—আর বোধ হয় সেট এ ভালো লাগেনি । মুদ্রা বিষয়ে আমার অজ্ঞতা ধরা পদে যাওয়ায় এখন বোধ হয় ভদ্রলোক মনে মনে এপ *