পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(te আত্মপ্রসাদ লাভ ক’রলেন । তারপরে প্রশ্ন করলে,ন ‘মহাগুরু" অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই পূজার অল্পষ্ঠানের সব মুদ্রা করতে পারেন, আর নিশ্চয়ই তিনি এমন অনেক মুদ্রণ জানেন যা বলিদ্বীপের পদগুদের অজ্ঞাত । আস্তে আস্তে মালাই ভাষায় এই প্রশ্নটি আমায় বার দুই করা হ’ল ; আমি বুঝলুম তার জিজ্ঞাস্তটা কি । রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা ক’রে পূজার মুদ্রা সম্বন্ধে কিছু উপদেশ নেবারও ইচ্ছা প্রকট ক’রলেন । আমি ভাবলুম—এইবারে সাৰ্বলে ! আর একে সব কথা বোঝাই বা কি ক’রে ? এমন সময়ে আমেরিকান রুসভেন্টকে সেই আঙিনায় দেখে ইশারা ক’রে ডাকলুম । পূজার মাচার তলায় আসতে তাকে ব’ললুম —একটু দোভাষীর কাজ করুন। সে ব’ললে—আমার মালাইয়ের দৌড় অতদূর নেই– তবে একজন দোভাষী খুজে আনছি। এই ব’লে পাশের মহল থেকে তার পরিচিত একজন ডচ ছোকরাকে ডেকে নিয়ে এল । ছোকরা ইংরেজি বেশ জানে, ডচ সরকারে কি একটা মালাইও ভালো জানে। মুদ্র বিষয়ে আমাদের গভীর আলোচনা পূজারত পদগুদের বিরক্ত না ক’রে যাতে নির্বিববাদে হ’তে পারে সে জন্য এই পদগুটীকে নিয়ে পূজোর মাচা থেকে নেমে ডচ ছোকরাটির সঙ্গে একটু নিরিবিলি জায়গা খুজে নিয়ে আমরা বাসলুম— একটি আট-চালার রোয়াকে । একে তখন ব’ললুম— রবীন্দ্রনাথ যে ভাবে পূজাৰ্চনা করেন, তাতে তিনি মুদ্রার ব। আগমোক্ত মন্ত্রের প্রয়োগ করেন না। তবুও এ ছাড়বেন, একবার গিয়ে মুদ্র-সম্বন্ধে তার সঙ্গে আলাপ ক’রবে। আমি বললুম, আচ্ছা, সে পরে দেখা যাবে। তারপরে ভারতবর্ষের হিন্দুধৰ্ম্মের সম্বন্ধে কথা উঠল । এই পদগুটি ব’ললেন, আমাদের বলিদ্বীপের আচার-অনুষ্ঠান সব দেবতা আর ঋষিদের কাছ থেকে পাওয়া--অর্থাৎ সনাতন । মনে মনে পদগুটীর staunch অথাৎ তার এই কিছুতেই হঠবে-না এমন স্বদেশের মর্য্যাদা বোধটিকে প্রশংসা ন ক’রে থাকতে পারলুম না। ভারতবর্ষের দাবী কেন অত সহজে মানবে ? কোথাকার কোন দূর দেশ থেকে আমরা এসেছি; কাজ করে, patriotism প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড ডচ অফিসার থেকে পুঙ্গবের আর পদণ্ডের সকলেই আমাদের স্বীকার ক’রে নিচ্ছে ; একটু যাচাই হওয়া দরকার, আমরা ঠিক কি, আর আমাদের যোগ্যতা আর দাবীই বা কতটুকু। এই ব্যাপারটি নিয়ে আরও একটু তর্ক করবার ইচ্ছেয় পদগুটি আমাকে আর সঙ্গের ডচ. ছোকরাটাকে হাত ধ’রে টেনে নিয়ে গেল আর একটি মহলে। সেথানে দেখি, একটি ঘরের দাওয়ায় অন্য কতকগুলি পদণ্ড বসে আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের এই পদগুট দেশভাযায় কি কথাবাৰ্ত্তা করলে । আমি তখন ইংরিজিতে ডচ দোভাষী বন্ধুটিকে ওদের এই কথাগুলি অন্তরোধ করলুম।— আমি খানিকট খানিকটা ক’রে বলি, আর সে মালাইয়ে অতুবাদ ক’রে যায় —আমি বললুম—“আমি আসছি ভারতবর্ষ থেকে ; পথ সে দেশ ; আমাদের অনুষ্ঠানাদি আশচয্য ব’লতে অনেক দিনের দেশে যে ধৰ্ম্ম প্রচলিত, যেরকম আছে, বলিদ্বীপের সঙ্গে সে সব বিষয়ে মিল দেখা যায়। রামায়ণ মহাভারত আর পৌরাণিক কাহিনী, বেদ আর আগম আমাদের দেশে আছে ; পুরাণে আর ইতিহাসে বর্ণিত সব দেশ নগর নদী পৰ্ব্বত আমাদের দেশে এখনও বিদ্যমান ; মন্ত্রের ভাষা সংস্কৃত আর আমাদের ভাষাও এই সংস্কৃত থেকে হ’য়েছে । নানা দেরী হয় না যে বলিদ্বীপের সভ্যতা ধৰ্ম্ম রীতি নীতির মূল স্বত্রগুলি ভারতবর্ষ থেকেই এসেছে। এক সময়ে যবদ্বীপেও এই সভ্যতা অপর ধৰ্ম্মের জয়জয়কার ছিল ; আমরা এখনও চর্চা করি ; দিক থেকে বুঝতে এখন আর নেই, ওদেশের লোকের মুসলমান হ’য়ে গিয়েছে । ভারতবর্ষ থেকে যখন ধৰ্ম্ম সভ্যতা আর সংস্কৃত ভাষা এ অঞ্চলে আসে, সে হ’চ্ছে দেড় হাজার দু হাজার বছর পূৰ্ব্বেকার কথা । তার পরে প্রায় আট ন’ শ’ কি হাজার বছর ধ’রে ভারতবর্ষ আর বলিদ্বীপে কোনও যোগ ছিল না। এর মধ্যে আমাদের দেশে নানা ঝড় ব’য়ে গিয়েছে ; দু হাজার দেড় হাজার বছর আগে আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা যে রকমের ধৰ্ম্ম পালন করতেন, যে সব অকুষ্ঠান ফ’রতেন,—সেগুলি যে অবিকৃত ভাবে কোনও পরিবর্তন না ক’রে যথাযথ রূপে