পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০ না মঙ্গলময়ের চরণে আত্মনিবেদন করিয়া থাকেন । কিন্তু হায়! মাহুষের ক্ষুদ্র আশার বৰ্ত্তিক কি অদৃষ্টের আকাশে চিরদিনই এমনি অনুজ্জল । ভবিষ্যতের লেখ পাঠ করিবার আলোটুকুও তাহা হইতে নিঃস্তত হয় না। কমলের চিন্তাচ্ছন্ন মুখের পানে চাহিয়া পরেশ কহিল, “জ্ঞানি, জানি আমি, তা কেউ পারবে না । এস আমার সঙ্গে, দেখবে হাজার হাজার লোক এই আমোদটুকুকে আশ্রয় ক’রে বেঁচে আছে । তার দরিদ্র, তার। রিক্ত, তাই আমোদও তাদের এমন অপযশপ্ত । আরে ছা, তুমি যে ভাবতেই লাগলে ? থাক তবে ।” বলিয়া কোণ হইতে ছড়ি লইয়। ঘুরাইতে খুরাইতে শিস দিতে দিতে বাহির হইয়া গেল । পাশ্বের ঘর হইতে হরিবাবু হাকিলেন, “কে যায় ? পরেশ বুঝি ? ছোড়া একেবারে গোল্লায় গেছে। চলেন রাত দুপুরে এখন নটীর বাড়ী ! একটু লজ্জা সরমও নেই গা ?” শঙ্কর বাবু হাবিলেন, “ছ তিন নয়, ছ তিন নয় ? তার পরেই উচ্চহাস্তের এই ছ তিন নয় ।” রোল উঠিল । い。 দুঃখের মধ্য দিয়াই দুটি বৎসর চলিয়া গিয়াছে । কমলের ভগ্ন মেসে পূৰ্ব্ব ব্যবস্থাই বহাল আছে। পুরাতন দু-একজন গিয়াছে, নূতন কেহ বা হাসিয়ঃছে, কিন্তু সকলের অদৃষ্টই একস্থত্রে গাথা । সেই অভাব-অনটন, দেনাৰঞ্জ, একঘেয়ে দুঃখ-ক্লেশের ইতিহাস শুনিতে শুনিতে মনে হয়, বাছিয়া বাছিয়া বিধাত ভারতবর্ষের মাটিতেই ইহাদের ছাড়িয়া দিয়াছেন জীবনভোর যন্ত্রণ সহিবার জন্ত ! পরেশ তেমনি উচ্ছঙ্খল। মেসে নামমাত্র সিট আছে, কোথায় থাকে, কি করে, কোন ঠিকানা নাই । মাঝে মাঝে বাড়ী হইতে মায়ের মিনতিভরা পায় আসে এবং ভাঙা টিনের তোরঙ্গটার এক পাশে শুধুই আবৰ্জ্জনার স্ত পে জমা হইয় উঠে । পরেশ হয় ত জানে না তার সব কথানির কথা। . হাসিয়া বলে, “জানি সব । আমার প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড সুখকেন্দ্রে খোচ দেবার জন্য ওতে দুঃখের ਾਂ তীর লুকিয়ে আছে, তাই পড়তে ভয় হয় ।” কমলের মাও চিঠি দেন । তাহাতে দুঃখকষ্ট্রের নামমাত্রও থাকে না। থাকে শুধু প্রবাসী পুত্রের কুশলকামনা, স্নিগ্ধ আশীৰ্ব্বাদ, আর সাবধানে থাকিবার স্নেহসতর্ক উপদেশ । বাড়ী গিয়া সে স্বচক্ষে সেখানকার অভাব দেখিয়| যদি অতুযোগ করে, "ই মা, তোমার কাপড় যে ছিড়ে গেছে, একথা লেখনি কেন ? মা হাসিয়া বলেন, ‘পাগল ছেলে ! এখনও ছ মাস চলবে ওতে । আরও একখানা তোলা আছে, “পরি না।’ কিন্তু সেই কাপড়থানি চিরকালই বাক্সবন্দী হইয় থাকে এবং মাও পুত্রকে নিঃশঙ্ক করিবার জন্য হাসিমুখে প্রতিবারেই ওই কথার উল্লেখ করিয়া থাকেন। সেদিন কিন্তু একখানি পত্রে দিদি অন্যা কথার পর লিথিয়াছেন--- তোমার বোধ হয় মনে আছে, অরুণ এবর ম্য{f ট্রক দেবে। সেজন্য ফীয়ের টাকা জমা দিতে হবে । মা ভেবেছিলেন একথা তোমায় জানাবেন না, তার একখানা গহন বন্দক দিয়ে টাকাটার যোগাড় ক’রবেন । কিন্তু ভাই, এমনি অদৃষ্ট সিন্দুক খুলে দেখা গেল, চার-পাচথান গহনার মধ্যে একথানাও নেই। মা বুঝতে পারলেন— কার কাজ এ ! কিন্তু উপায় ত নেই। কাজেই বললেন,— কমলকে আর লিখিস না কিছু, ঘটীবাটি বাধা দিয়ে টাক কটার যোগাড় কর । কিন্তু ভাই, তুমি আমাদের উপাৰ্জ্জনক্ষম অভিভাবক ; তোমায় না জানানো আমার মতে ভাল নয়, তাই লিখলুম। যদি কোন রকমে যোগাড় করতে পার, ভালই, নইলে ঘটীবাটি ত আছেই । তারপর কুশল প্রশ্নে ও আশীৰ্ব্বাদে পত্রের সমাপ্তি । কমল ভাবিতে ভাবিতে অপিস চলিয়। গেল । মেসের সকলের অবস্থাই সমান । অফিসে টাকা কট মিলিলেও মিলিতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত হারে সুদ দিয়া আসল ঋণ ত কোনকালে শোধ করিতে পরিবে না ? তবে উপায় ?