পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«&yხ• বিম্বপুষ্পের স্বগন্ধের সঙ্গে, নির্জন পল্লী প্রান্তের শান্তি ও নীরবতার সঙ্গে, অদৃশ্ব মাতৃ-আশীৰ্ব্বাদ যেন মিশাইয়৷ আছে । সে আজ কাহাকেও ইচ্ছা করিয়াই খবর দেয় নাই, ভাবিয়াছিল--মা যখন বরণ করে নিতে পারলে না আমার বোঁকে, অত সাধ ছিল মার—তখন আর কাউকে বরণ করতে হবে না, ও অধিকার আর কাউকে বুঝি দেবো ? - 寝 豪 寝 寝 তেলিদের বাড়ীতে কেউ ছিল না, তিন চার মাস হইতে তাহার কলিকাতায় আছে, বাড়ীতে তালাবন্ধ, নতুবা কালরাত্রে ইহাদের কথাবাৰ্ত্তা শুনিয়া সে-বাড়ীর লোক আসিত। সকালে সংবাদ পাইয়া ও-পাড়া হইতে নিরুপমা ছুটিয়া আসিল । অপু কৌতুকের স্বরে বলিল— এসো এসো, নিরুদিদি, এখন মা নেই, তোমরা কোথায় বরণ করে ঘরে তুলবে, দুধে-আলতার পাথরে দাড় করাবে, তা না তুমি এখন সকালে পান চিবুতে চিবুতে এলে । বেশ যা হোক্‌ ! নিরুপমা অমুযোগ করিয়া বলিল— তুমি ভাই সেই চোদ্ধ বছরে যেমন পাগলটি ছিলে, এখনও ঠিক সেই আছ। বেী নিয়ে আসচে। তা একটা খবর না, কিছু না। কি কোরে জানবো তুমি এ অবস্থায় একজন ভদ্রলোকের মেয়েকে এই ভাঙ্গা ঘরে হুপ করে এনে ভুলবে ? ছি ছি, দ্যাখে তো কাওখান ! * রাত্রে ধে রইলে কি করে এখানে, সে কেবল তুমিই পার। নিরুপমা গিনি দিয়া বৌ-এর মুখ দেখিল । অপু বলিল—তোমাদের ভরসাতেই কিন্তু ওকে এখানে রেখে যাবে নিরুদি । আমাকে সোমবার চাকুরীতে যেতেই হবে। নিরুপমা বেী দেখিয়া খুব খুলি, খলিল-আমি আমাদের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে রেখে দেবো বেীকে এখানে থাকৃতে দেবো না ! অপু বলিল—তা হবে না, অামায় মায়ের ভিটেতে সন্দে দেবে কে তা হ’লে ? রাত্রে তোমাদের ওখানে শোবার জন্যে নিয়ে যেও। নিরুপমা তাতেই রাজী। চৌদ্দ বছরের ছেলে যখন প্রথম চেলী পরিয়া তাহাদের বাড়ী পূজা করিতে গিয়াছিল, তখন হইতে সে অপুকে সত্যসত্য স্নেহ করে, তাহার দিকে টানে। সৰ্ব্বজয়ার মৃত্যুর সময় সে এখানে ছিল না, শ্বশুরবাড়ী হইতে আসিয়া সব

প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড শুনিয়া ভারী দুঃখিত হইয়াছিল, আরও দুঃখিত হইয়াছিল অপুর ঘরবাড়ী ছাডিয়া চলিয়া যাওয়ায়। মেয়ের গতিকে বোঝে না, বাহিরকে বিশ্বাস করে না, মানুষের উদ্দাম ছুটিবার বহিমুখী আকাঙ্ক্ষাকে শান্ত সংযত করিয়া, তাহাকে ঘর গৃহস্থালী পাতাইয়া, বাস বাধাইঘার প্রবৃত্তি নারীমনের সহজাত ধৰ্ম্ম, তাহদের সকল মাধুর্য্য, স্নেহ, প্রেমের প্রয়োগ-নৈপুণ্য এখানে। সে শক্তিও এত বিশাল, যে খুব কম পুরুষই তাহার বিরুদ্ধে দাড়াইয়৷ জয়ী হইবার আশা করিতে পারে। অপু বাড়ী ফিরিয়া নীড় বাধাতে নিরুপমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিল । কলিকাতায় ফিরিয়া অপুর আর কিছু ভাল লাগে না, কেবল শনিবারের অপেক্ষায় দিন গুণিতে থাকে। মনে হয় বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যারা নব-বিবাহিত, তাহাদের সঙ্গে কেবল বিবাহিত জীবনের গল্প করিতে ও শুনিতে ভাল লাগে। কোনো রকমে এক সপ্তাহ কাটাইয়া শনিবার দিন সে বাড়ী গেল। অপর্ণার গৃহিণীপনায় সে মনে মনে আশ্চৰ্য্য না হইয়া পারিল না। এই সাত আট দিনের মধ্যে অপর্ণ বাড়ীর চেহারা একেবারে বদলাইয়া ফেলিয়াছে ! তেলি বাড়ীর বুড়ীঝিকে দিয়া নিজের তত্ত্বাবধানে ঘরের দেওয়াল লেপিয়া ঠিক করাইয়াছে। দাওয়ায় মাটি ধরাইয়া দিয়াছে, রাঙা এলমাটি আনিয়া চারিধারে রঙ করাইয়াছে, নিজের হাতে এখানে তাক্, এখানে কুলুঙ্গি গাঁথিয়াছে, তক্তপোষের তলাকার রাশীকৃত ইদুরের মাটি নিজের হাতে উঠাইয়৷ বাহিরে ফেলিয়া গোবর-মাটি লেপিয়া দিয়াছে। সারা বাড়ী যেন ঝকৃ ঝকৃতকৃতকৃ করিতেছে। অথচ অপর্ণ জীবনে এই প্রথম মাটির ঘরে পা দিল। পূৰ্ব্ব গৌরব যতই ক্ষুঃ হউকৃ, তবুও সে ধনীবংশের মেয়ে, বাপ-মায়ের অাদরে লালিত, বাড়ী থাকিতে নিজের হাতে তাহাকে কখনো বিশেষ কিছু করিতে হইত না । মাসখানেক ধরিয়া প্রতি শনিবারে বাড়ী যাতায়াত করিবার পর অপু দেখিল তাহার যাহা আয়, ফি শনিবার বাড়ী যাওয়ার খরচ তাহাতে কুলায় না। সংসারে দশ বারো টাকার বেশী মাসে এ পর্য্যন্ত সে দিতে পারে নাই। সে বোঝে ইহাতে সংসার চালাইতে অপর্ণাকে