পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭২ এই বার থেকে সে যখন আসিয়াছে, আর কোনও কষ্ট হইতে দিবে না। অপু বলিল—দ্যাথো, আজ রাত্রে মায়ের কথা বড় মনে হয়—-মা যদি আজ থাকৃতো ? অপর্ণ শান্ত সুরে বলিল—ম সবই জানেন, যেখানে গিয়েচেন, সেখান থেকে সবই দেখ চেন । পরে সে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয় চোথ তুলিয়া স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—দাখো, আমি মাকে দেখেচি । অপু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে চাহিল । অপর্ণার মুখে শান্ত,স্থির বিশ্বাস ও সরল পবিত্রত ছাড়া আর কিছু নাই । অপর্ণ বলিল দ্যাখো, একদিন কি মাসটায়, তোমার সেদিন চিঠি এল দুপুর বেলা, বিকেলে আঁচল পেতে পান্‌চালার পিড়েতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েচি—সেদিন সকালে উঠোনের ঐ লাউগাছটাকে পুতেচি, কঞ্চি কেটে তাকে উঠিয়েচি,খেতে অনেক বেলা হয়ে গিয়েচে, বুঝলে ? স্বপ্নে দেখ চি একজন কে দেখতে বেশ স্বন্দর, লালপেড়ে শাড়ীপরা, কপালে সিঁদুর, তোমার মুখের মত মুখের আদল, আমায় আদর করে মাথার চলে হাত বুলিয়ে বলচেন, ও আবাগীর মেয়ে, অবেলায় শুয়ো না, ওঠে, অমুখবিসুখ হবে আবার ? তারপর তিনি তার হাতের সি দুরের কোটো থেকে আমার কপালে সি দুর পরিয়ে দিতেই আমি চম্কে জেগে উঠলাম—এমন স্পষ্ট আর সত্যি বলে মনে হোল যে তাড়াতাড়ি কপালে হাত দিয়ে দেখতে গেলাম সি দুর লেগে আছে কি ন—দেখি কিছুই না— বুক যেন ধড়াস ধরে উঠল—চারিদিকে অবাকু হয়ে চেয়ে দেখি সন্দে হয়ে গিয়েচে —বাড়ীতে কেউ না - খানিকক্ষণ না পারি কিছু কর্ত্তে—হাত পা যেন অবশ–তার পরে মনে হল এ মা,—আর কেউ না, ঠিক মা । মা এসেছিলেন এয়োতির সি দুর পরিয়ে দিতে । কাউকে বলিনি, আজ বললাম তোমায় । বাহিরে বর্ষ্যধারার অবিশ্রান্ত রিমঝিম্ শব্দ। একটা কি পতঙ্গ বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে তান রাখিয়া একটানা ডাকিয়া চলিয়াছে, মাঝে মাঝে পূবে হাওয়ায় দমৃক, অপর্ণার মাথার চুলের গন্ধ । প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭ পুলুদার মুথে সে শুনিয়াছে। যা হইবার হইয়া গিয়াছে, [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড জীবনের এইসব মুর্ত বড় অদ্ভুত। অনভিজ্ঞ হইলেও অপু তাহা বুঝিল । হঠাৎ ক্ষণিক বিদ্যুৎ চমকে যেন অন্ধকার পথের অনেকখানি নজরে পড়ে। এমন সব কথা, এমন সব চিন্তা মনে আসে, সাধারণ অবস্থায়, সুস্থ মনে সারা জীবনেও সে সব চিন্তা মনে আসিত না ।. কেমন একটা রহস্ত · জন্ম মৃত্যু...আত্মার অদৃষ্টলিপি. একটা বিরাট অসীমতl. কিন্তু পরক্ষণেই অপুর চোথ জলে ভরিয়া আসিল । সে কোনো কথা বলিল না । কোন মন্তব্য প্রকাশ করিল না, কেহই কোনো কথা বলিল না । খানিকট পরে সে বলিল, আর পড়ে—শুনি বরং— একট কবিতা অপর্ণ বলিল—তুমি একটা গান করে— অপু রবিঠাকুরের গান গাহিল একটা, দুইট, তিনট । তারপরে আবার কথা, আবার গল্প। অপর্ণ হাসিয়া বলিল—আর রাত নেই কিস্তু—ফসর্ণ হ’য়ে এল— —ঘুম পাচ্ছে ? —না। তুমি একটা কাজ করে না ? কাল আর যেও ন}— —আপিস কামাই চলে ? করবো ? তা কি কখনো ভোর হইয়া গেল । অপর্ণ উঠিতে যাইতেছিল, অপু কোন সময় ইতিমধ্যে র্তাহার আঁচলের সঙ্গে মিজের কাপড়ের সঙ্গে গিঠ বাধিয়া রাখিয়াছে, উঠিতে গিয়া টান পড়িল । অপর্ণ হাসিয়া বলিল—ওমা তুমি কি ! আচ্ছা দুষ্ট, তো ?...এখুনি হারাণের ম কাজ কত্তে আসবে – বুড়ী কি ভাববে বলে দিকি ? ভাববে এত বেলা অবধি ঘরের মধ্যে—মাগো মা ছাড়ো, আমার লজ্জা করে-ছিঃ—অপু ততক্ষণে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়া শুইয়া পড়িয়াছে। --ছাড়ে, ছাড়ে, লক্ষ্মী-ছিঃ—এথ খুনি এলো বল বুড়ী-পায়ে পড়ি তোমার, ছাড়ো— অপু নিৰ্ব্বিকার । এমন সময়ে বাহিরে হারাণের মায়ের গলা শোন গেল । অপর্ণা ব্যস্তভাবে মিনতির স্বরে বলিল—ওই