পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] “ভারী লাঠি চাপ ত তুমি ! বেশ বেশ—এমনি ত চাই । আবার আস্ছ ত শনিবারে ?” কমল বিযঃ মুথে জবাব দিল, “না।” ---“কেন কেন ?” কমল বলিল, “যা দেখে গেলুম এখানে, সে শিক্ষ আমি জীবনে ভুলব না । এও একটা নেশা । অন্যান্য কু-নেশার মত মামযের মহুষ্যত্ব পর্য্যন্ত নষ্ট ক’রে দেয়। জোচ্চোরি !” অনিলবার হাসিলেন। বলিলেন, “ছোকরা, এই নিয়ে দুনিয়া চলছে । তোমার গলায় ছুরি চালিয়ে আমি পকেট ভক্তি করছি, আবার আমায় ঠকিয়ে তুমি সংসার চালাচ্চ । যে বেশী নিরীহ, সংসারে ক্ষত বিক্ষত হয় সে-ই বেশী । ভেবে দেখ দেখি—জোচ্চোর কে নয় ? পৃথিবী জুড়ে মারামারি, কাটাকাটি শুধু এই জোচ্চোরির খেল । মনটাকে শক্ত কর, ছোকরা, শক্ত কর, নইলে কঠিন সংসার, এক তিলও টিকে থাকতে পারবে না।” কমল বলিল, “আমরা জাত-হিসেবে এত ছোট কেন জানেন ? শুধু গড্ডলিক প্রবাহে ভেসে চলি ব'লে। আয়ের চেষ্টা এমনি ফাকি দিয়ে করি, রাতারাতি বড়লোক হ’য়ে সব দুঃখ দূর করতে চাই, তাই এ অধঃপতন । এই ফাকি দিয়ে বুদ্ধিমান হবার, লাভ কববার চেষ্টাই আমাদের অসাধু অবিশ্বাস ক’রে তুলেছে, অনিলবাবু।” সাম্নেই বাসওয়াল fর, শ্যামবাজার ।” আনিলবাবু তাড়াতাড়ি কহিলেন, “গোটা-দুই টাকা দ1৪ ত ধার, কালই দেব। রোগা ছেলের দুটো বেদান, ময়দা, চিনিও বোধ হয় ফুরিয়েছে, কিনতে হবে। আর দেখ না বাসভাড়া এখান থেকে বরানগর—” কমল তাহার হাতে দুটি টাকা দিয়া সাগ্রহে কহিল, “আপনি বরানগরে থাকেন ? পারেন ?” অনিলবাবু ততক্ষণে বাসে উঠিয়। জানাল দিয়া খবর ?” হাকিতেছিল, “শ্যামবাজার, একটা খবর দিতে বসিয়াছেন । মুখ বাড়াইয়৷ বলিলেন,—“কিসের রাজমাতা ૨6 —“শশধর বাড়য্যেদের বাড়ীর সকলে কেমন আছেন ?” “সে আমাদের বাড়ী থেকে অনেকটা দূর । আড়া, কাল সকালে জেনে এসে ব’লবে । গুড নাইট ।” —“গুড নাইট " পরদিন অনিলবাবু আপিসে আসিতেই কমল বরানগরের সংবাদ জিজ্ঞাস করিল । - আনিলবাবু বলিলেন, “তারা সকলেই ভাল আছেন। বাড়ীতে দেখলুম সামিয়ান টাঙানো হয়েছে, শুনলুম-বে।” কমল বলিল, “বিয়ে ? কার বিয়ে ?” আনিলবাবু বলিল, “শুনলুম ত বড়ছেলের। পরশু গায়ে হলুদ হ’য়ে গেছে । হা, এবার দ্বিতীয় পক্ষ। তবে পদের বাড়ীর একটা বিশেষ বদনাম শুনে এলুম।” কমলের মুখে আর প্রশ্ন করিবার ভাষা যোগাইল না। সে চিত্রাপিতের মত অনিলবাবুর পানে চাহিয়া রহিল । তিনি বলিতে লাগিলেন, “ওরা বউকে না কি জালা-যন্ত্রণ দেয় খুব । প্রথম পক্ষেরটিকে বিয়ে ক", এনে অবধি বাপের বাড়ী পাঠায় নি । কওঁ, গিল্পী এমন কি ছোট ছেলেট। পর্য্যন্ত গাল দিয়ে বেত মেরে বেীটির সার দেহে কালশিটে পাড়িয়ে দিয়েছিল । ভগবান তাকে শান্তি দিয়েছেন, বেঢ়ি মরে জুড়িয়েছে।” কমলের চোখের সামনে দপ, করিয়া মুহূৰ্ত্তে পৃথিবীর আলো নিভিয় গেল । পায়ের তলায় যেন ঘরের মেঝেট কাপিয়া উঠিল এবং অবলুপ্ত চৈতন্তের মধ্যে শুধু একটি করুণ ক্ৰন্দনের রেশ আসিয়া কানে বাজিতে লাগিল, “আমায় নিয়ে যাবি ত ভাই, নিয়ে যাবি ত ?” হায় অভাগিনী দরিদ্র বাংলার মেয়ে ! তোমার লাঞ্ছনা—তোমার বেদন কি পরপ্রত্যাশ অস্তরে একটুও বাজে না ? তোমার ভীরু আশা—অতৃপ্ত ক্ষুদ্র কামনা কি অত্যাচারে জর্জরিত হইয়। এমনই মধ্যাঙ্গের তীব্র রৌদ্রে শুকাইয়া যায় ?... তার পর, জ্ঞান যখন ফিরিয়া আসিল, তখন কমল একা। সেই ভগ্ন মেসের ক্ষুদ্র গৃহে মলিন শয্যায় শুইয়। আছে । শরীর অবসন্ন—মস্তকে দারুণ যন্ত্রণ, সমস্ত অঙ্গ