পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ মেয়েটি আবার পড়াতে মন দিলে । ট্রেন চলতে স্থর করেছিল, ক্রমেই তার বেগ বাড়তে লাগল । মেয়েটির আর কিছু দেখ, ধায় না, শুধু কপালটি আর চুল আচড়াবার সহজ ভঙ্গীটি। চুলটা ভাল করে আঁচড়াবার কোনো চেষ্টাই চোখে পড়ে না, সামনের দিকে টেনে খোপ। বাবা । মেয়েটির মুখটিও যেমন মারহাটি মেয়েদের মত, চুলও সেই রকম টেনে বাধা। মুখের ভাবের নির্ভীকতাও ঠিক মারহাটি মেয়েদের সঙ্গে খাপ খায়—মেয়েটি মারহাটিই ময় তো ? মারহাটি হ’লে তে কথা কইবার... ? কনক য। হিন্দী জানে তাতে তো কোনে। ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ করা চলে না । হাম্ তুম্‌ করে চাকরদের সঙ্গে কোনো রকমে কথা চালাতে পারা যায়। এই অবধি—তাও একট, কিছু কথা চাকরদের বোঝাতে হ’লে হিন্দী ভাষার চেয়ে হাত পা নাড়াই তার কাজে লাগে বেশী । মেয়েটি মারহাটি হ’লে তো... ? কিন্তু হ’লেই বা তার কি ? কনক তো আর মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠত করবার অভিপ্রায়ে এখানে ওঠে নি। মারহাটি হোক, হিন্দুস্থানী হোক তাতে কনকের কি ? একটি অসহায় মেয়ে একল। যাচ্ছে, তাকে আগলাতেই এ গাড়ীতে আসা—মেয়েটির গোত্র বর্ণের খোজে তার দরকারই বা কি ! কিন্তু মন উস্থুস করে। কেবলি মনে হয় মেয়েটি কে ? কি ওর দরকার ! কোথায় যাবে ? একলা কেন যাচ্ছে ? যে বাড়ীতে যাচ্ছে কে আছে সেখানে ? কথাই-ব বলা যায় কি করে ? কেবল কপালটির দিকে তাকিয়েই যে সময় চলে গেল—কে জানে কোন ষ্টেশনে কথন নেমে পড়বে হঠাৎ । কিছুই জানা হবে না । কিন্তু কি বলা যায় ? “জানলাটা খুলে দেব কি ?” আর “পাখাট বন্ধ করে দেব কি ন৷” এই দুটি মাত্র সম্ভবপর প্রশ্ন কনকের মনে এলো, তার মধ্যে কোনট বলা যায় ? মেয়েটি যে-বেঞ্চিতে বসেছিল সে দিকের ছ ট। জানল। বন্ধ ছিল। কিন্তু বাইরে যা রোদ, গরম হাওয়াও বোধ হয় চলছে—জানলা খুলতে যাওয়াট। কি ঠিক সময়োপযোগী হবে ? কিন্তু পাথাট বন্ধ কপূব কি না যে জিগেসই করা যায় না। এই প্রবাসা—পৌষ, ১৩৩৭ { ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড দুপুর রোদ, আগুন গরম । মনে হচ্ছে আরও দুটে পাখা থাকলে সে দুটোও খুলে দিতে পারলে ভাল হ’ত । এমন সময়ে পাখী বন্ধ করব কি না জিজ্ঞাস করলে মেয়েটি তাকে আস্ত পাগল ভাববে ষে। ত:হ’লে ঐ একটি প্রশ্নই বাকি রইল, জানলাটা খুলে দেব কি ?’ ও ছাড়া আর উপায় নেই । কনক প্রশ্নটা মুখে আনবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু এমন ও বিপদ ! কত বড় বড় জটিল প্রশ্ন এ জীবনে কনক কতবার কত লোক-ক জিজ্ঞাসা করেছে ; কিন্তু এই অত্যন্ত একটা মামুলি কথা ‘জানলাটা খুলে দেব কি এইটে আর গল দিয়ে 巧をGシiびマ চায় না । বসল, মাথার চুলট। হাত দিয়ে টেনে টেনে পেছন দিকে চালিয়ে দিল, কোটের সাম্নের দিকটা ধরে টেনে সোজা করে দিয়ে বেশ শক্ত হয়ে বসে প্রাণপণ চেষ্টায় কেমন ধেন অস্বাভাবিক জোরে বলে উঠল, "জানগাট খুলে দেব কি ? মেয়েটি চম্কে উঠল। প্রশ্নটা হয়ত ভাল করে বুঝতেই পারে নি। নিজের উচ্চ কণ্ঠস্বরে অপ্রতি ভ হয়ে তাড়াতাড়ি সংশোধন করে নেবার অভিপ্রায়ে কনক বিনীত স্বরে বলল, “আপনার দিকের জামলা দুটে বন্ধ রয়েছে, হয়ত গরমে আপনার কষ্ট হচ্ছে । কোনোট খুলে দেব কি ?’ মেয়েটি অত্যন্ত সহজভাবে উত্তর দিল, ‘হ্যা বেশ তো, দিন না । কনক খুশী হয়ে দুটে৷ জানলা খুলে দিয়ে স্বস্থানে এসে বসল। মেয়েটি মৃদুস্বরে ধন্যবাদ দিয়ে আবার পড়ায় মন দিলে । আবার সব চুপচাপ। কনক হতাশ হয়ে পড়ল, আর তো কথা চালাবার কোনো পথই নেই। জানলাট। শুধু খুলে দিয়ে কি-ই বা হ’ল ? মেয়েটি বাঙালী, বাংলা জানে ও সহজভাবে বাংলায় উত্তর দেয়, এ ছাড়া, আর তো কিছুই জানা গেল না। তার যে আরও কত কি জানবার লি । ট্রেনট একটা ঝাকানি দিলে । মেয়েটির হাত থেকে কাগজখানা ছটকে নীচে পড়ে গেল । কনক শশব স্তে সেট তুলে নিতেই মেয়েটি মৃদ্ধ হেসে বললে ধন্যবাদ । কনক বইখানি মেয়েটির হাতেই ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু দেখলে বড় ধুলো লেগে গেছে, ঝেড়ে তবে তো দেওয়া উচিত। নিজের রুমাল বের করে ঝাড়তে বেরোতেই কনক নড়েচড়ে