পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] কবি రిలిa বিনয় হাত-পাখাটা উঠাইয়া লইয়া কহিল, "হাওয়া করুব পরিমল ? —‘দরকার নেই, বিমুদা।" একটুক্ষণ নিঃশব্দে কাটিল। তারপর পরিমল বাহিরের আলোকোৎসবের পানে একবার চাহিয়া দেখিয়া ধীরে ধীরে কহিল, ‘আজ কোন তিথি বিমুদ পূর্ণিমা ? --"না, আজ একাদশী ।” পরিমল মুগ্ধ চোখে বাহিরের দিকে তাকাইয়া রহিল । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করিয়া ঠিক ছেলেমানুষের আবারের স্বরে কহিল, ‘বিহুদী দাওনা খুলে একবার জানলা দুটো, জ্যোৎস্না একেবারে ভিড় ক’রে আস্থক । বিনয় কহিল, ‘ন, ন, ওটা খুললে শেষে তোমার ঠাগু লাগবে । ওটা বন্ধই থাকৃ।’ পরিমল কোন আপত্তি করিল না। ও-পাশ ফিরিয়া জ্যোৎস্বার দিকে মুখ করিয়া শুইয়া পড়িল । হষ্টেলের কোন একটি ছেলে তখন বঁাশীতে রাতের স্বর তুলিয়াছে তাহাই তাদের কানে আসিয়া পৌছিতেছিল । স্বযুপ্ত রাতের কেমন একটা শব্দ শোনা যায় । দেওয়ালে মাঝে মাঝে টিকটিকিগুলি শব্দ করিতেছে । কখনও কখনও বা এক-একটা নিশাচর পার্থী ডাকিয়া উঠিতেছে । --‘বিজুদা ? —‘কি ?” —‘বাইরের জগৎ আজ কি মধুর হয়ে উঠেছে, বিমুদ, পৃথিবী যেন কবিতা পড়ে যাচ্ছে। আজ ছাড়া কি অস্থখ আর আমার কোনদিনই হতে পাৰ্বল না ? —“কি করবে, ভাই ?’. —‘না বিমুদ, কিছু তো করবার নেই জানি। কিন্তু চৈত্র মাসের এই রাতগুলির অাশায় আমি যে কতদিন ধরে দিন গুণছি। আশা ব্যর্থ হ’লে৷ এই দুঃখ বিমুদ । বিনয় চুপ করিয়া রহিল। পরিমলের গলার স্বর গভীর হইয়া আসিল । জ্যোৎস্না রাতটা ব্যর্থ হইয়া সত্যই যেন একটা বেদনায় পরিমলের বুকখানা ভরিয়া গিয়াছে। ইহাকে উপহাস করিতে তাহার রুচি হইল না। —‘আজ আমার অস্থখ না হ’লে কি কবুতুম জানো fરજમા —“কি কবৃতে, ভাই ? —জান্‌লা দিয়ে অজস্র জ্যোৎস্না এসে যখন মেঝেতে লুটিয়ে পড়ত, আমি তারই ভেতর পা ছড়িয়ে বসে সার রাত ধরে কবিতা লিখতুম। হয়ত দক্ষিণের বাতাস এসে গায়ে চন্দনের পরশ বুলিয়ে যেত, হয়ত রজনীগন্ধার স্ববাস ভেসে আস্ত । তোমার কি মনে হয় না বিহুদা, চাদের আলোয়, পাতার মৰ্ম্মরে, ফুলের গন্ধে জড়িয়ে কবিতা আমার সরস হয়ে উঠত ? " —“হঁ্য, মনে হয় বই কি ?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া তেমনি মৃদু গলায় পরিমল কহিল, "কিন্তু সে শুভলগ্ন ব্যর্থ হ’লো, বিমুদা ।” বিনয় তাহাকে ঘুমাইবার চেষ্টা করিতে কহিল । কিন্তু সে ঘুমাইল না। করুণ-চোখে বাহিরের পানে তাকাইয়া রহিল। একটু আগে কোন এক ঘড়িতে বারোটার ঘণ্টা বাজিয়াছে। রাস্তার বিরল যানবাহন বিরলতর হইয়া আসিয়াছে । হয়ত মাঝে মাঝে রিক্স’র টুংটং শোনা যায়, দু-একটা মোটর সে। সে করিয়া, ছুটিয়া চলে। নিঝুম রাত্রির একটা প্রশাস্তি যেন এখন স্পশ পর্য্যস্ত করা চলে । পরিমল অনেকক্ষণ পৰ্য্যস্ত নিঃসাড়ে পড়িয়াছিল । একবার নীরবতা ভাঙিয়া ডাকিল, ‘বিচুদা !’ —“কি ভাই, মাথায় যন্ত্রণা হচ্চে ? —'না ।" —“তবে ? —‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাই না বিমুদা ? বিনয় চুপ করিয়া রহিল। রোগী কি ষে বলিতে চাহে সে-ই জানে। পরিমল একটু চুপ থাকিয় কহিয়৷ গেল, এই যে জ্যোৎস্না ওঠা, হাওয়ার-হাওয়ায় গাছের পাতার ঝিরঝিরাণি, ফুলের গন্ধ,-মাহুধ না থাকলে এদের কিই বা আদর হ’ত, কেই-বা সম্মান দেখাতে, কেই-বা কবিতা লিখতো ! মানুষের অঙ্গভূতি আর কল্পনাতেই তো এদের সত্যিকারের দাম, সত্যিকারের · রূপগুণ ? - —“তা তো ঠিক, ভাই ।” পরিমল খুশী হইয়া যেন একটু উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল, - ***, *