পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిసెషి সে বুঝিতে পারিতেছিল এ যেন ঠিক সে যাহাকে চায়, সে নয় । কিন্তু আর কে কোথায় আছে ? ভালবাসে সে, কিন্তু প্রভাস ভিন্ন আর কাহাকে সে ভালবাসিতে পারে ? তাহাদের মিলন যদি হয়, তাহ হইলে স্বর্গগত জননীর আশীৰ্ব্বাদ সে লাভ করিবে, তাহার আরাধ্য দেবদেবীসকলের প্রসন্নত সে লাভ করিবে, ধৰ্ম্মচ্যুতির ভয় আর তাহার থাকিবে না । সে জানিত তাহার বাবা এ বিবাহ দিতে চাহিবে না । পিসীমার কাছে সে শুনিয়াছে, নিয়ঞ্চন কোন এক বিলাতফেরৎ ব্যারিষ্টারের সঙ্গে তাহার বিবাহ দিবার চেষ্টা করিতেছেন । পিসীমার মতও সেইদিকেই । সে একল৷ কেমন করিয়া নিজের বিবাহের ব্যবস্থা করিবে ? হিন্দুর মেয়ের এ সকল বিষয়ে চিস্তা করা বা অগ্রসর হওয়া যে অত্যন্ত অন্যায় তাহ মায়ার দৃঢ় ধারণ ছিল। না ভাবিয়া সে পারিত না, কিন্তু কাৰ্য্যত: কিছু করা তাহার সাধ্যায়ত্তও ছিল না, এবং উহার চিস্তামাত্রেই তাহার মন সভয়ে পিছাইয়া যাইত। কিন্তু সে স্থির হইতেও পারিতেছিল না। পাছে তাহার অমতেই নিরঞ্জন জোর করিয়া অন্ত কাহারও সহিত তাহার বিবাহ দিয়া বসেন, এই দুর্ভাবনা তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল। বিবাহ না করিয়া যে হিন্দুর মেয়ের গতি নাই, ন হইলে সে বেশ চিরকুমারী থাকিয়৷ যাইতে পারিত । এমনিতেই তাহার বয়স যেন অনেক হইয়া গিয়াছে বলিয়া বোধ হয় । গ্রামে থাকিলে এতদিনে সকলে খোটা দিয়া তাহাদের অস্থির করিয়া তুলিত । মায়ার খুব ইচ্ছা করিত, এই-সব বিষয়ে ইন্দুর সহিত সে আলোচনা করে, কিন্তু লজ্জা আসিয়া বাধা দিত। পিসীমা হয়ত মনে করিবেন মেয়ে বিবাহের জন্য ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে । অথচ কোনোদিক হইতে কোনো সাড়াশব্দ না পাইয়া সে ক্রমেই অস্থির হইয়া উঠিতেছিল। সেদিন প্রভাসকে উপরে উঠতে দেখিয়া সত্যই সে দরজার আড়ালে দাড়াইয়া ছিল তাহাদের কি কথা হয় শুনিবার জন্য । ইন্দু যে প্রভাসকে কোনো মতে বিদায় করিয়া দিতে ব্যস্ত, তাহ। সে বেশ বুঝিতে পারিতেছিল এবং মনে মনে পিসীর উপর বেশ খানিকট চটিয়া প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড উঠিতেছিল। এবাড়ীতে সবাই যেন মায়ার শত্ৰু, সে নিজে যাহা চায়, তাহার উলট পথে জুহাকে জোর করিয়া লইয়া যাইতে সকলেই ব্যগ্র । কে এখানে মায়াকে একটু সাহায্য করিবে ? প্রভাস যখন এত ব্যস্ত হইয়া তাহার খবর লইতেছে তখন নিশ্চয় তাহার মায়ার প্রতি খানিকট। মনের টান আছে, এবং বিবাহের প্রস্তাব করিলে সে নিশ্চয়ই রাজী হয় । কিন্তু কেই ব) সে ভাবনা ভাবিতে বসিয়াছে ? প্রভাস নামিয়া যাইতেই ইন্দু আবার মায়ার ঘরে ফিরিয়া আসিল । দেখিল মায়। অত্যন্ত অপ্রসন্ন মুখে এককোণে বসিয়া আছে। ইন্দু তাহার বিরক্তির কারণ ততট। ভাল করিয়া বুঝিতে পারিল না, জিজ্ঞাসা করিল, “কি রে, অত মুখ হাড়ি করে বস্লি যে ?” মায়া বলিল, “মুখ হাড়ি আবার করলাম ?” ইন্দু বলিল, “মনে হচ্ছে যেন ভয়ানক চটে গিয়েছিল, হয়েছে কি ?” মায়া কি যেন বলিতে গিয়া থামিয় গেল, তাহার পর বলিল, “মাখাট। কেমন যেন ভার ভার লাগছে ।” ইন্দু বলিল, “শুয়ে থাক খানিকক্ষণ, রোদট। পড়ে গেলে বাগানে বেড়িয়ে আসিস্ ।” মায়া বলিল, “য চারিদিকে তোমাদের বন্ধুবান্ধবের ঘট, কোথাও কি এক পা বাড়াবার জে৷ আছে ?” ইন্দু তাহার ঝণক দেখিয়া হাসিয়া বলিল, “আমাদের বন্ধুবান্ধব আবার কোথায় ? তোমারই বন্ধু বরং দু-চারজন আসে ।” মায় বলিল, “হা, আমার বন্ধুতে ত ঘর ভোরে উঠেছে। তোমরা ত যা বা দুই একজন আছ, পারলে তাদের ঝাটা মেরে বিদায় করে দাও।” ইন্দু এতক্ষণে ব্যাপারখানা বুঝিতে পারিল । প্রভাসের সঙ্গে হয়ত মায়ার কথাবাৰ্ত্তা বলিতে ইচ্ছা করে । কিন্তু তাহার সমস্ত মন যেন বিদ্রোহ করিয়া উঠিল, ন, ন, ইহা । হইতে দেওয়া যায় না। প্রভাস এখান হইতে চলিয়া গেলে সত্যই যেন আপদ বিদায় হয় । মায়াকে এখন কি যে এক সৰ্ব্বনাশের নেশ পাইয়া বসিয়াছে, সে তাহার কোথায়