পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামনদাস বসু - শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ১৮৪৯ খ্ৰীষ্টাব্দে পঞ্চাবে ইংরেজ-রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবার কিছু পরে তামাচরণ বহু নামক একটি বাঙালী যুবক লাহোরে উপস্থিত হন। সেকালে রেলগাড়ী না থাকায় র্তাহাকে অন্ত যানে পঞ্জাব যাইতে হয়। কলিকাতা হইতে লাহোর যাইতে র্তাহার কয়েক মাস লাগিয়াছিল। বৰ্ত্তমানে খুলন। জেলার অন্তঃপাতী টেংরা-ভবানীপুর নামক একটি গ্রামে তাহার জন্ম হয় । তিনি সেখানে কিছু লেখাপড় শিখিয়া কলিকাতায় ডাফ সাহেবের বিদ্যালয়ে কয়েক বৎসর অধ্যয়ন করেন । লাহোর পৌছিয়। তিনি প্রথমে দুই বৎসর একটি মিশনরী বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ করেন। তাহার পর ১৮৫২ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি কমিশনারের আফিসে কাজে নিযুক্ত হন । যখন পঞ্জাবে শিক্ষাবিভাগ প্রথম খোলা হয়, তখন তিনি উহার ডিরেক্টরের প্রধান কেরানী নিযুক্ত হন । এই পদে থাকিয় তিনি পঞ্জাবে শিক্ষাকার্য্যের স্থব্যবস্থা করেন। এই সুব্যবস্থার জন্য ডিরেক্টর যে স্থখ্যাতি লাভ করেন, তাহার অনেক অংশ বস্তুত: যে শ্ৰামাচরণ বস্তু মহাশয়েরই প্রাপা, তাহ ইংরেজ-সম্পাদিত তখনকার "ইণ্ডিয়ান ওপিনিয়নে” স্বীকৃত হইয়াছিল। ১৮৬৭ সালে ৪০ বৎসর বয়সে অকালে তাহার মৃত্যু হয় । তিনি সুশিক্ষিত, সচ্চরিত্র, কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠ এবং স্থযোগ্য লোক ছিলেন । ধৰ্ম্মে তিনি বৈদান্তিক ছিলেন। স্ত্রী-শিক্ষার বিস্তৃতি ও উন্নতি সাধনে তাহার বিশেষ উৎসাহ ছিল। সেকালে পঞ্জাবে জিনিষপত্র সস্তা ছিল । এই জন্য যদিও তাহার বেতন দুইশত টাকা হইতে আরম্ভ করিয়া মাত্র তিন শত পর্য্যন্ত হইয়াছিল, তথাপি তিনি মৃত্যুকালে বিষয়-সম্পত্তি বেশ রাখিয়া গিয়াছিলেন। কিন্তু বন্ধু নামে পরিচিত কোন কোন লোকের বিশ্বাসঘাতকতায় তাহার মৃত্যুর অল্পকাল পরেই তাহার বিধবা পত্নী শ্ৰীমতী ভুবনেশ্বরী দেবী প্রায় নিঃস্ব হইয়া পড়েন, এবং নিজের অলঙ্কারগুলিই একটি একটি করিয়া বিক্রয় করিয়া নিজের ও চারিটি সন্তানের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করিতে বাধ্য হন। র্তাহীদের নিজের বাড়ী অন্যের হস্তগত হইয়া যাওয়ায় তিনি মাসিক ৮০ বার আন ভাড়ার একটি কুটীরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই সময়ে তাহদের কম্মি নামক একজন বিশ্বস্ত পুরাতন ভূতা তাহদের একমাত্র সহায় ছিল। কাম্ম যতদিন বাচিয়াছিল, ততদিন বয়পরিবারের সেবা করিয়াছিল এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার পুত্ৰ নেহাল তাহাদের পরিচর্য্যা করিয়াছিল । এই কামুই বার আন ভাড়ার বাড়ীটি ঠিক করে এবং তাহারই হাত দিয়া ভুবনেশ্বরী দেবী একটি একটি করিয়া অলঙ্কার বিক্রয় করিতেন । বামনদাস বস্থ শুlামাচরণ বস্তু মহাশয়ের ও ভূবনেশ্বরী দেবীর কনিষ্ঠ পুত্র। পিতার মৃত্যুর সময় তাহার বয়স ছিল পাচ মাস মাত্র। র্তাহীদের চারি ভাই বোনের মধ্যে এক ভগিনী সকলের বড় ছিলেন। একমাত্র তিনিই এখনও জীবিত আছেন। বামনদাসের জ্যেষ্ঠ ভ্রাত। স্বপণ্ডিত ও মহামুভব শ্রীশচন্দ্র বস্ব বিদ্যার্ণব তাই অপেক্ষ ছয় বৎসর কয়েক দিনের বড় ছিলেন । র্তাহার কনিষ্ঠ ভগিনী ছিলেন শ্ৰীমতী জগৎমোহিনী দাস । বামনদাস সকলের ছোট । র্তাহাদের মাতা ভুবনেশ্বরী দেবীর স্থশীলতা, বুদ্ধিবিবেচনা ও কশ্মিষ্ঠতার গুণে শ্ৰীশচন্দ্র ও বামনদাস শৈশবে পিতৃহীন হইয়াও মাচুর্য হইতে পরিয়াছিলেন–শিক্ষিত, চরিত্রবান, স্থপণ্ডিত ও দেশভক্ত বলিয়া পরিচিত হইয়াছিলেন । র্তাহারাও সাতিশয় মাতৃভক্ত ছিলেন । শুনিয়াছি, তাহাদের শৈশবে ও বাল্যকালে ভুবনেশ্বরী দেবী মাসিক দশ টাকা ব্যয়ে সংসার চালাইতেন । শ্ৰীশচন্দ্র প্রবেশিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া মাসিক ১৫২ টাকা বৃত্তি পাইবার পর তাহার মাতা বার আন ভাড়ার কুটীরটি ছাড়িয়া মাসিক দেড় টাকা ভাড়ার অন্য একটি * বাড়ীতে উঠিয়া যান। তিনি সাধারণ রকমের বাংলা