পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 eb বামনদাস বস্ব মহাশয় বাঙালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সুতরাং বংশতঃ তিনি বাঙালী। কিন্তু জন্মের স্থান ও শিক্ষার স্থান লাহোর বলিয় তাহাকে পঞ্জাবী বলিতে পারা যায়। তাহার পর চাকরি উপলক্ষ্যে তিনি ভারতবর্ষের—বিশেষতঃ দাক্ষিণাত্যের— নান স্থানে বাস করিয়াছিলেন। অতএব তাহাকে মহারাষ্ট্রের ও গুজরাটের লোকও বলা চলে। সৰ্ব্বশেষে অবসর গ্রহণ করিয়া তিনি প্রয়াগের স্থায়ী অধিবাসী হন । সে হিসাবে তিনি হিন্দুস্থানী। তাহার ভ্রাতা ও তিনি সাতিশয় হৃদ্যতার সহিত হিন্দুস্থানী বন্ধুদের সহিত মিশিতেন । এই সব কারণে তিনি যে-অর্থে “ভারতীয়’, কম লোককেই সে-অর্থে ভারতীয় বলা যায় । তিনি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বাস করিয়াছিলেন বলিয়াই যে ভারতীয়, তাহা নহে । তিনি ভারতবর্ষের নানা প্রাচীন ও আধুনিক দেশভাষা জানিতেন । প্রাচীন ভাষার মধ্যে তিনি সংস্কৃত এবং আরবী ও ফার্স জানিতেন বলিয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সভ্যতার সহিত র্তাহার পরিচয় ছিল । আধুনিক ভারতীয় ভাষার মধ্যে, মাতৃভাষ। বাংলা ছাড়া, তিনি পঞ্জাবী, পশতে, সিন্ধী, কাশ্মীরী, হিন্দী, উৰ্দ্দ, নেপালী, গুজরাট ও মরাঠা জানিতেন এবং বলিতে পারিতেন। ভারতবর্ষের অনেক প্রদেশে তাহার বন্ধু ছিল। র্তাহাদের সহিত র্তাহাদের ভাষায় কথা বলিতেন । একবার দেখিলাম, তাহার একজন পুরাতন পাঠান-বন্ধুর সহিত পাঠানী রীতিতে করকম্পন করিয়া পশতো ভাষায় কথা বলিতেছেন । উত্তর-পশ্চিম সীমাস্তে কাজ করিবার সময় তিনি রক্ষী সঙ্গে না লইয়৷ একাকী পাঠান গ্রামে যাইতেন ও পাঠানদের কুটীরে বসিয়া গল্প করিতেন । র্তাহার ব্রিটিশ সহকৰ্ম্মীরা একাকী যাওয়ার বিপদের কথা বলিলে তিনি হাসিতেন । পাঠানেরাও ইংরেজদের এই ভয়ের কথা শুনিয়। হাসিত ; বলিত, “আপনার সঙ্গে ত আমাদের কোন বংশানুক্রমিক ঝগড়া নাই ; আপনার অনিষ্ট কেন করিব ?” মেজর বস্থ কখন কখন সামরিক কৰ্ম্মচারীদের পশতে ভাষার পরীক্ষক হইতেন এবং উহাদের উত্তরের কাগজ দেখিতেন । একবার উত্তরপশ্চিম সীমাস্তে এক ছোকরা ইংরেজ অফিসারের পশ তোর জ্ঞানের মৌখিক পরীক্ষা উপলক্ষ্যে তাহাকে একটি পশতে কথার মানে জিজ্ঞাসা করেন, যাহার অর্থ 'মানুষ । কিন্তু ছোকরাটি তাহাকে অপমানিত করিবার প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড জন্য উত্তর দেয়, “এর মানে কাল। অদমী" । বামনদাস বাবু শাস্ত ভাবে তাহার ভ্রম সংশোধন করিয়া বলেন, “ন, এর মানে শাদা ইতর লোক ।” তাহাতে সে চটিয়া স্থানীয় সেনাপতির কাছে নালিশ করিলে তিনি সকল বৃত্তাস্ত শুনিয়া তাহাকে বলেন,"তুমি মুখের মত জবাব পাইয়াছ।” তিনি সাৰ্ব্বজনিক কোন প্রচেষ্টায় যোগ দিতেন না বটে,কিন্তু দেশের পরাধীনতা ও অপমান তাহাকে মৰ্ম্মান্তিক যন্ত্রণা দিত। জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি অনেক রাত্রি ঘুমাইতে পারেন নাই। তিনি সাতিশয় স্বাধীনতাপ্রিয় ও স্বদেশপ্রেমিক ছিলেন । তিনি ১৯০৩ সালেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন, যে, দেশে গুপ্ত সমিতি এবং রাজনৈতিক হত্যা আদি হইবে, এবং প্রকাশ্য ভাবে সাধারণ কৃষকদিগের দ্বার। নিরুপদ্রব প্রতিরোধনীতি অমুস্থত হইবে । এই এই বিষয়ে তাহার মুদ্রিত লেখা আছে । কিরূপে সমগ্র মানবজাতির উন্নতি হইতে পারে, তিনি তদ্বিষয়ে চিন্ত করিতেন । এই বিষয়ে তাহার অনেক গুলি ইংরেজী প্রবন্ধ সাপ্তাহিক ও মাসিক কাগজে বাহির হইয়াছে । তিনি মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত হিন্দুসমাজভুক্ত ছিলেন । তাহার পিতা বৈদান্তিক ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা থিয়ুসফিষ্ট ছিলেন । র্তাহার ভগিনী শ্ৰীমতী জগৎমোহিনী ও ভগিনীপতি শ্ৰীযুক্ত তারণচন্দ্র দাস ব্রাহ্ম ছিলেন । র্তাহার ধৰ্ম্মমত উদার ছিল। তিনি শিখধৰ্ম্মে কখনও দীক্ষিত না হইলেও একজন সাধারণ শিখ সিপাহীকে গুরু বলিয়া মানিতেন । এই সিপাহী অতি ধাৰ্ম্মিক লোক ছিলেন। একটা যুদ্ধের পর লুটের অংশ লইতে অস্বীকার করায় তাহাকে চাকরি ছাড়িতে হয় । একজন সাধারণ সিপাহীকে গুরু বলিয়} মানায় বুঝা যায় বামনদাস বাবু মনুষ্য ত্বকেই মূল্যবান মনেকরিতেন, পলব্যাদাকে নহে। বামনদাস বাবু কাশীর ভাস্করানন্দ স্বামীকে খুব ভক্তি করিতেন, এবং স্বামীজীও তাহাকে স্নেহ করিতেন। বস্ব মহাশয় জাতিভেদ প্রথাকে হিন্দুসমাজের নানা দুৰ্গতির কারণ মনে করিতেন। তিনি পর্দা-প্রথার বিরোধী এবং স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু পাশ্চাত্য ফ্যাশানপ্রিয়তা অপছন্দ করিতেন । তিনি র্তাহার ভগিনী ও ভগিনীপতির নামে এলাহাবাদে “জগৎতারণ বালিক-বিদ্যালয়” স্থাপন করেন এবং ইহার জন্য কিছু টাকা দিয়াছেন । ইহাতে প্রবেশিকা পরীক্ষা পৰ্য্যস্ত পড়ান হয় । ইহা বিশেষ করিয়া বাঙালী বালিকাদের জন্ত স্থাপিত । ইহাতে সরকারী সাহায্য আছে ।