পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] বেলাকার ডানপিটেমি প্রভৃতি। তারপর খানিকট তার রূপবর্ণনা । কি সুন্দর অলোককে দেখতে – যেন রাজপুত্তর। ঠোটের ওপর বাদামী সরু সরু গোফ, চোখে প্যাসনে, মাথায় বাবরি। বিনোদ বললো—অলোক বি-এ পাস করে বিলেত থেকে ব্যারিষ্ঠার হয়ে আসবে। ওকি একটা কম ছেলে রে, আর আমি ওরই বন্ধু, বুঝলি উমা ! বিনোদের চোখদুটো উৎসাহে বেরিয়ে আসে-গল্প ক’রে তার আশা মেটে না । উমা মুগ্ধ হয়ে শোনে— দাদা যেন রূপকথা বলছে । দাদার গৌরবে উমার বুক আনন্দে ভরে যায়। অনেক কথা তার বিশ্বাসই হয় না, বলে- সত্যি, দাদা ? রান্নাঘরে কাজের মধ্যে উমার কল্পনায় মল্লিকদের সম্বন্ধে নানা ছবি ফুটে ওঠে । উমা ভগবানের উদ্দেশে অসংখ্য প্রণাম জানায়। আর প্রণাম জানায় সেই অদৃষ্ঠ ধনী যুবকের উদ্দেশে যার অমুকম্পায় তার বাবা-মীর মুখে হাসি ফুটেছে । যিনি তার দাদাকে ছোট ভাবেন নি, ঘুণ করেন নি বরং তাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছেন । অলোকের প্রতি শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায় উমার মাথা যেন মাটিতে লুটতে চায়। শুধু অলোক নয়, অলোকের মাও বিনোদকে মেহের চক্ষে দেখেছেন । ধনীর গৃহিণী গরীবের সমস্ত কাহিনী শুনে নিয়েছেন । ও বাড়ীতে বিনোদের প্রায়ই নেমস্তন্ন। মা’র অসুখ শুনে তিনি প্রায়ই বিনোদের হাতে রোগীর পথ্য, আঙ্গুর বেদান প্রভৃতি পাঠিয়ে দেন। চাকরের হাতে একদিন একঝুড়ি আম পাঠিয়ে দিলেন, তার সঙ্গে এলে মা’র জন্যে লালপেড়ে শাড়ি । বাবার মুখে হাসি ধরে না। রোহিণী বলে—বিহু, টিকে থেকে বাবদ রাগ ক’রে ছেড়ে দিও না যেন— ওঁরা ধনী লোক । উমা এসে বললো—দাদা, পাচ সিকে দিতে হবে, সত্যনারাণের সিগ্নী দেবে। বিনোদের আপত্তি নেই কিছুতেই। এখন সে বড় লোক-কত খরচ করবে কর । উমা ভাইয়ের কল্যাণের জন্যে উপোস করে, মার গ্রহ-শাস্তির জন্তে উপোস করে, বাবার বাতের জন্তে উপোস করে—তার হাতে মাদুলি পরায় । আর উপোস করে, নিজের সৌভাগ্যের জন্তে — সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি কিছুদিন অপেক্ষা করতে রাজী হয়েছেন ব’লে | একদিন রাত্রে বিনোদ এসে বললে –ওরে উমা, কাল মাকে একজন বড় ডাক্তার দেখতে আসবে রে। অলোকই পাঠাচ্ছে—ওদের বাড়ির ডাক্তার। উমার আনন্দ ধরে না, এবার মা সেরে উঠবেন। পঞ্চদশী রোহিণী বললে,- ডাক্তার তো আনছো বিস্তু, কিন্তু টাকা 8X (t কোথায় পাবে ? —অলোকই পাঠাচ্ছে বাবা, ওর মা সবই জানেন কি না । রোহিণী কপালে দুটি হাত ঠেকিয়ে বললো--ভগবান তুমিই ধন্য...হ্যা বড়লোক বলে একেই। পরদিন উমা রাত থাকৃতে উঠলো। চারিদিকে গঙ্গাজল ছিটোলো এবং ভোরের প্রথম সূৰ্য্য-রশ্মিটিকেও প্ৰণাম করে ঘরে নিলে। তারপর ঘরদোর ঝাট দিয়ে ফিট-ফাট করে ফেললে । বাড়িতে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির আগমন—সে কি সাধারণ কথা ! যথাসময়ে হর্ণ বাজিয়ে ডাক্তার এলেন। বিনোদ ডাক্তারকে আনতে এগিয়ে গেলো। উমা রান্নাঘরে নিজের কাজে নিযুক্ত, কিন্তু তার মন ছিল বাইরে—ডাক্তার মাকে দেখে কি জানি কি বলবেন । বাড়ি তো একটুকুরো—খান-দুয়েক মাত্র ঘর। তার একটাতে মা থাকেন শুয়ে ; আর একটাতে বাবা দাদা এবং কুচে ছেলেরা শোয় । উমা রাতে মার কাছেই থাকে। রান্নাঘরে বসেই উমা সব শুনতে পায়। ডাক্তার আসছেন— রান্নাঘরের জানল ভেজিয়ে একটু ফাক করে উমা দেখলে । মামুষের সামনে বেরুতে তার ভয়ানক লজ্জা । বুড়ে মেয়ের বেহায়াপনা বাবা সহ্য করেন না । হঠাৎ দাদার স্পষ্ট কথাগুলি উমার কানে গেল-আরে অলোক যে ! তুমিও এলে যে, ভাই ? কাল তো কিছু বল নি । চল, ভেতরে চল—আম্বন ডাক্তারবাবু— উমা চমকে উঠলো—অলোক-বাৰু ? মল্লিকদের ছেলে ? সে উদগ্রীব হয়ে দেথছে যেন ভৌতিক কিছু একটা ঘটছে। গরীবের কুটীরে রাজার ছেলে । উমা যেনচোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, কিন্তু সত্যই আলোক এসে হাজির । ডাক্তারের পিছনে একটি সুন্দর প্রিয়দর্শন ছেলে— কি নিটোল তার স্বাস্থ্য, যেন পাথরে থোদ মূৰ্ত্তি। চোখে চশমা এবং মাথার চুলগুলি কোকড় বটে, কিন্তু অলোকের বেশে কোনো বাহুল্য নেই। মুখের হাসিটি তার আরও মিষ্টি । আলোক হেসে বললো—বেশ যাহোক, কেন, তোমার বাড়িতে ব'লে আসতে হবে নাকি ? তাছাড়া ডাক্তারবাবু বাড়িটা চেনেম না কি না. কৃতজ্ঞতায় শ্রদ্ধায়ু বিনোদের মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বললো—এসে এসো ভাই, বাইরে দাড়িয়ে কেন ? বিনোদ বাবাকে ডাকলো—বাবা আছেন রে উমা ? রোহিণীর বিশেষ ওঠবার সামর্থ্য নেই, কিন্তু জলোকের নামে স্থাপিয়ে উঠেছিল। ভিতর থেকে বললো-বিঘ্ন