পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ম সংখ্যা ] প্রত্যয়-যোগে বিশেষণে পরিণত করার শক্তি বাংলা ভাষা কল্পনা করিতে পারে না । বাংলা এক মাত্রার শব্দেরও ইংরেজীর মত জোর নাই । বাংলা ভাষা শব-সঙ্কোচও করিতে পারে না (যথা, ইংরেজীর ফ্লু, বাস্থ, ভ্যান প্রভৃতি) ; আবার বহু শব্দকে এক সংঙ্ক্ষেপ সাঙ্কেতিক শব্যে ও পরিণত করিতে পারে না (যথা ইংরেজীর ‘ডোর) । বিদেশী বস্তুকে আত্মসাৎ করা বাংলা ভাষার পক্ষে সহজ নয় । বাংলা ভাষা সংস্কৃতের সস্তান হওয়াতে বড়ই ছুংমাগী, উহা প্রোসেলিটাইজিং ভাষা নয়, তাই স্লেচ্ছ শব্দ তাহার উপর চাপিয় বসে। উহা ঠিক হিন্দুসমাজের মত, এতটা দৃঢ়ত নাই যে বাহিরের বস্তুকে ঠেকাইয়া রাখিবে, এতটা নমনীয়তাও নাই যে বাহিরকে নিজের করিয়া লইবে । তাই বাংলা ভাষা লাঞ্ছিত হয়, পরিপুষ্ট হয় না । এইখানেই পৃথিবীর বড় বড় জীবন্ত ভাষার সঙ্গে Fiহার প্রভেদ । তাহার নিজের ঘরে নিজের জাতিধৰ্ম্ম লইয়া থাকিতে পারিলেই যেন সে নিঃশ্বাস ফেলিয়া বঁাচে । কিন্তু এযুগে এমন করিয়া বাচিয়া থাকিবার উপায়ও তাহার আর নাই । বাংলা ভাষার সার্থকতা বাংলাভাষার গাথুনির দিকটা দেখা গেল ; এইবার তাহার সার্থকতার দিকটি বিশ্লেষণ করা যাইতে পারে। ব’লা ভাষার সার্থকত বাঙালী জাতির জীবন-যাত্রাকে অথণ্ডভাবে প্রকাশ করার মধ্যে । বাংলা ভাষা কি পরিমাণে বাঙালীর কাজকৰ্ম্মের, ব্যবসা-বাণিজ্যের, জীবন-যাত্রার, শনের চিস্তার, প্রাণের অনুভূতির ও আত্মার ঐশ্বয্যের বাহন হইয়াছে, বাঙালীর ভাবী জাতীয় জীবনের riবীই বা এই ভযা কি পরিমাণে মিটাইতে পারিবে,-- হার উপর বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিভর করিবে । সংখ্যার দিক দিয়া দেখিলে বাংলা পুথিবীর সপ্তম বা অ8ম ভাষা ;—ইংরেজী, উত্তর চীন, রুষ, জামান, স্পেনীয় ও জাপানীর নিম্নে, এবং ফরাসী, ইতালীয় প্রভূতির উৰ্দ্ধে বাংলার স্থান । ৪ কোটি ৯০ লক্ষ লোকের ংহ মাতৃভাষা, ‘ঘরের ভাষা ;’—ইহা কম উপযোগিতার নয়। কিন্তু, ইহা কি এই ৪ কোটি ৯০ লক্ষ বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ ףשא লোকের সকল কাজের ভাষা হইবার উপযোগী ?--বড় হইতে হইলে ইহাকে তাহাই হইতে হইবে। উনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্য্যন্ত বাংলা দেশের জীবন দূর পল্লীগ্রামের বাশবনের আড়ালে, ছায়াবটের তলায়, নদীর তীরে, আন্দোলিত ধান ক্ষেতের মধ্যে শান্তিতে বহিয়া গিয়াছে। বাংলা ভাষা . চণ্ডীমণ্ডপে রাজপ্রাসাদের আদরিণী নন, নগর-সভ্যতার লীলা-সহচরীও নন । তাই বাংলা ভাষার ঘাহা আসল পুজিপাট। তাহ একটি প্রাচীন পল্পীজীবনের বস্তু-আড়ম্বরহান ও হ’ব :১4.jইন সংস্কৃতির পক্ষে বিশেষ উপযোগী । আজও বাংলার সেই নিজস্ব সহজ জীবন একেবারে লুপ্ত হয় নাই, বাংলা ভাষ! তাহার একমাত্র বাহন । কিন্তু মনে রাখা উচিত, বাঙালীর এই সহজ সরল জীবনের উপর খুতু-ছায়। ঘনাইয়া আসিতেছে । বাংলা ভাষা যদি এই ঘর-ভাঙার দিনেও সেই ঘরকেই আশ্রয় করিয়া ঘরোয় ভাস থাকিয়া যাইতে চায়, তবে বাংলা ভাষার বদ্ধিতা, অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন নয় । * - -, বাংলার বর্তমান জীবন খুব সচল নয় । ইহাতে সবে মাত্র ডাম্মমুখর পশ্চিম মহাসমুদ্রের ক্ষীণ তরঙ্গাঘাত আসিয়া লাগিতেছে, কিন্তু তাহাতেই বাংলার জীবনে অকল্পিত আলোড়ন আরম্ভ হইয়াছে । যুগ-সভ্যতার এই ফেনায়িত বস্তুপুঞ্জ, ইহার নব-নব আবষ্টিত ভাব ও প্ন বাংলার পূর্বতন জীবনের পক্ষে ধারণাতীত, বাংলার সরল ভাষায় প্রকাশের পক্ষেও সাধ্যাতীত । বাংলা ভাষা কি বাঙালী জীবনের এই প্রথম বিস্ময়, প্রথমে চেতন, প্রথম জিজ্ঞাসাকেই সুস্পষ্ট করিয়া বাণী দিতে পারিতেছে ? বিংশ শতাব্দীর বাংলা দেশের ইতিহাসের যে একটি কথা বা একটি আইডিয়া সম্বন্ধে ভাবী কাল ভুল করিবে ন—তাহ বাঙালীর জাতীয়তার উন্মেষ । আজও নিতাস্ত নিকটের জিনিষ হওয়ায় উহার খে;" সত্য বটে, মিথ্যাচার, তাহা নিমেযে-নিমেষে আমাদের চোখ বড় হইয়৷ ঠেকিতেছে । কিন্তু একটু দূর হইতে দেখিলেই দেখিতে পাইব যে, বাঙালীর জীবন ও সাধনায় যাহ। কিছু সত্য, যাহা কিছু নিত্য, যাং কিছু