পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোভিয়েট রাশিয়ার শিক্ষ-ব্যবস্থা জীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর も ব্রেমেন ষ্টীমার অতলান্তিক কল্যাণায়েষ্ণু মুরেন, রাশিয়া থেকে ফিরে এদে আজ চলেচি আমেরিকার ঘাটে । কিন্তু রাশিয়ার স্মৃতি আজও আমার সমস্ত মন অধিকার করে আছে । তার প্রধান কারণ অন্যান্য যে সব দেশে ঘুরেচি তার। সমগ্রভাবে মনকে নাড়া দেয় না । তাদের নানা কৰ্ম্মের উদ্যম আছে আপন আপন মহলে । কোথাও আছে পলিটিক্স, কোথাও আছে হাসপাতাল, কোথাও আছে বিশ্ববিদ্যালয়, কোথাও আছে মুজিয়ম—বিশেষজ্ঞরা তাহ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে সমস্ত দেশটা এক অভিপ্রায় মনে নিয়ে সমস্ত কৰ্ম্মবিভাগকে এক স্বায়ুজালে জড়িত করে এক বিরাট দেহ, এক বৃহৎ ব্যক্তিরূপ ধারণ করেচে। সব কিছু মিলে গেছে একটি অখণ্ড সাধনার মধ্যে । যে-সব দেশে অর্থ এবং শক্তির অধ্যবসায় ব্যক্তিগত স্বার্যদ্বার। বিভক্ত, সেখানে এ-রকম চিত্তের নিবিড় ঐক্য অসম্ভব । যখন এখানে পঞ্চবাধিক যুরোপীয় যুদ্ধ চলছিল তখন দায়ে পড়ে দেশের অধিকাংশ ভাবনা ও কাজ এক অভিপ্রায়ে মিলিত হয়ে এক চিত্তের অধিকারে এসেছিল, এটা হয়েছিল অস্থায়ীভাবে-কিন্তু সোভিয়েট রাশিয়ায় যে কাণ্ড চলুচে তার প্রকৃতিই এই—সাধারণের কাজ, সাধারণের চিত্ত, সাধারণের স্বত্ব ব’লে একটা অসাধারণ সত্তা এরা স্বষ্টি করতে লেগে গেছে। উপনিষদের একটা কথা আমি এখানে এসে খুব স্পষ্ট করে বুঝেছি—‘মাগৃধ:', লোভ কোরে না। কেন লোভ করবে না ? যে হেতু সমস্ত-কিছু এক সত্যের দ্বারা পরিব্যাপ্ত-ধ্যক্তিগত লোভেতে করেই সেই একের উপলব্ধির মধ্যে বাধা জানে। 'তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথা: সেই একের থেকে যা আস্চে তাকেই ভোগ করে। এর আর্থিক দিক থেকে সেই কথাট। বলচে । সমস্ত মানবসাধারণের মধ্যে এরা একটি অদ্বিতীয় মানবসত্যকেই বড় বলে মানে—সেই একের যোগে উৎপন্ন যা-কিছু এরা বলে তাকেই সকলে মিলে ভোগ করে।–“ম গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনং’-কারো ধনে লোভ করে। ন। কিন্তু ধনের ব্যক্তিগত বিভাগ থাকলেই ধনের লোভ আপনিই হয়। সেইটিকে ঘুচিয়ে দিয়ে এরা বলতে চায় ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথী: ’ যুরোপে অন্ত সকল দেশেরই সাধনা ব্যক্তির লাভ, ব্যক্তির ভোগ নিয়ে । তারই মন্থন আলোড়ন খুবই প্রচণ্ড, আর পৌরাণিক সমুদ্রমস্থনের মতোই তার থেকে বিষ ও স্বধা দুইই উঠ চে । কিন্তু স্বধার ভাগ কেবল একদলই পাচ্চে, অধিকাংশই পাচ্চে না—এই নিয়ে অমুখ অশান্তির সীমা নেই। সবাই মেনে নিয়েছিল এইটেই অনিবাৰ্য্য— বলেছিল মানবপ্রকৃতির মধ্যেই লোভ আছে—এবং লোভের কাজই হচ্চে ভোগের মধ্যে অসমান ভাগ করে দেওয়া । অতএব প্রতিযোগিতা চলবে এবং লড়াইয়ের জন্তে সৰ্ব্বদ। প্রস্তুত থাক চাই । কিন্তু সোভিয়েটর যা বলতে চায় তার থেকে বুঝতে হবে মানুষের মধ্যে ঐক্যটাই সত্য, ভাগটাই মায়া, সম্যক চিন্তা সম্যক চেষ্টাদ্বারা সেটাকে যে মুহূর্তে মানবো না সেই মুহূর্তেই স্বপ্নের মত সে লোপ পাবে। রাশিয়ায় সেই না-মানার চেষ্টা সমস্ত দেশ জুড়ে প্রকাণ্ড করে চলচে । সব-কিছু এই এক-চেষ্টার অন্তর্গত হয়ে গেছে । এইজন্যে রাশিয়ায় এসে একটা বিরাট চিত্তের স্পর্শ পাওয়া গেল । শিক্ষার বিরাটপৰ্ব্ব আর কোনো দেশে এমন করে দেখিনি, তার কারণ অন্তদেশে শিক্ষা যে, করে শিক্ষার ফল তারই—“দুধুভাতু খায় সেই ’ এখানে প্রত্যেকের শিক্ষায় সকলের শিক্ষা। একজনের মধ্যে