পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o পরিগণিত ন হইতে পারে ; কিন্তু সাহিত্যের মত সাহিত্য যদি হুষ্টি হয়, তবে শত প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও তাহার একটি বিশিষ্ট স্থান থাকিবে । বুঝিতে হইবে তাহার অস্তরে অমৃতত্বের বীজ নিহিত রহিয়াছে, তাহীর মৃত্যু নাই ; এই পৃথিবীর অমৃত-পিয়াসী অমৃত, সন্তানগণ যুগে যুগে তাহার স্বধারস পান করিবার জন্য তাহার উপলবরণ খুণ্ডিবে । তেমনিতর ভাষা গ্ৰীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত । এই সব dead language মরিয়া ৪ অমর । সাহিত্য তাই খুবই বড় জিনিষ । বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে এই দাবী কবিবার অধিকার আমাদের নাই, একজন সদাশয় ইংরেজ অধ্যাপকের উদ্ধত উক্তিতে আমরা যেন এই সভ্য বিস্মৃত ন হই । উক্ত অধ্যাপক মহাশয়ের ঐ মত মানিয়া লইলে মনে হয় যে, বাংলা ভাষার বৈভব তাহার একশত বৎসরের ইতিহাস লইয়। কারণ, তৎপূৰ্ব্ববৰ্ত্তী বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু নাই, যাঠার তুলনায় তুলসীদাস, সুরদাসও কবীরের হিন্দুস্থানী, বা অসংখ্য আলোয়াড়-সেবিত তামিল, নরসিংহ মেহতা ও বহু বহু ভক্তের গুজরাতী সাহিত্য একেবারে সাহিত্য নামের অযোগ্য হইয়া যায়। বাংলা ভাষার সম্পদ এই একশত বৎসরের সাহিত্য । এক শত বৎসর জাতির জীবনে বা ভাষার জীবনে খুব দীর্ঘকাল নয়। কিন্তু গত একশত বৎসর পৃথিবীর জীবন্ত ভাষাগুলির জীবনে এক কল্প। স্ত করিয়াছে । সেই তুলনায় এই একশত বৎসর পরে ও ংলা সাহিত্য নিতান্ত স্বল্প-পরিসর । যে বাল। সাহিত্য লইয়া আমরা গৰ্ব্ব করি ও গৌরব বোধ করি তাহার প্রবাহ সঙ্কীর্ণ ও অপরিসর—এতই অপরিসর থে নিতান্ত সন্ধানী লোক ন হইলে এই বিসর্পিত রজতরেথ। কোনও বিদেশীর চোখে পড়িবার কথা নয়। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যে বাংলা সহিত্যের পত্তন হয় তাঙ্গর ভাব উৎস ইংরেজী-সাহিত্যে উদ্বুদ্ধ বাঙালীর কল্পনা-বৃত্তি । বাংলার যে সাহিত্য ECER VEfSl imaginative literature–zergī, f(";"; করিয়া খ গু কবিতা, কথা সাহিত্য ও কতকাংশে নাট্য সূচিত প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড সাহিত্য । প্রায় শত বৎসর হইতে চলিঃ, কিন্তু যে প্রতিভা নব-নব খাদ কাটিয়া বাংলা সাহিত্যের সেই প্রথম প্রবাহকে সুপরিসর করিয়া তুলিবার কথা, বাঙালীজাতির মধ্যে তাহার আবির্ভাব সম্ভব হয় নাই । রসসাহিত্যের বাহিরে বাংলা সাহিত্যে যাহ রচিত হয়, তাহাতে প্রাণরসের স্পর্শ নাই, তাহা অতি সামান্য ও নগণ্য । দৃষ্টান্ত দেওয়া বোধ হয় নিম্প্রয়োজন, কিন্তু সকলেই লক্ষ্য করিবেন যে, বাংলায় সত্যকারের প্রবন্ধ-গ্রন্থ, আলোচন, সমালোচনা, বাদ প্রতিবাদ, জীবনী, জীবনস্মৃতি, রোজনাম্চ, চিঠি-পত্র, ভ্রমণ-কাহিনী, দেশবিদেশের পরিচয়-কথা, প্রাচীন ইতিহাস, সমসাময়িক ইতিহাস, ধৰ্ম্মতত্ত্ব, পুরাণ, দর্শন, নীতিশাস্ব, মনোবিজ্ঞান, বিভিন্ন বিজ্ঞানের নব-নব জয়-লেখা, অর্থবিজ্ঞানের আলোচনা, শিল্প-জগতের উত্থান-পতনের সমস্যা, জীবনযাত্রার পট-পরিবর্তন, আধুনিক চির-পরিবর্তমান রাষ্ট্রনীতি, প্রাচীন ও আধুনিক চিত্রকল, ভাস্কয্য ও স্থাপত্যের পরিচয়, শিশু-সাহিত্য, শিক্ষা-সাহিত্য, সঙ্গীত-সাহিত্য, সমর-বিদ্যার সাহিত্য,—সাহিত্যের এই সব শত শত বিভিন্নরূপের কোন নিদর্শনই মিলে না। অথচ, এই সব বিযয় আমরা যে নিতাস্ত গৌণ মনে করি, তাহা ও যিনি ইংরেজীভাষার প্রসাদে বঞ্চিত ও বাংল। নয় } সাহিত্যই যাহার একমাত্র খোরাক, তাহার প্রতি আমাদের অবজ্ঞ অপরিসীম। বাংল। সাহিত্য 〔项 অবজ্ঞেয় আমাদের এই মনোভাবই কি তাহার প্রমাণ নয় ? সাহিত্যের সহস্রদ্ধারী মন্দিরের কত দুয়ার যে আজও আমাদের নিকট রুদ্ধ রহিয়াছে তাহ বুঝিতে পারিতাম যদি ইংরেজীর চাবিকাঠি কেহ আমাদের হাত হইতে হঠাং ছিন ইয়া লইয়া যাইত । তাহা হইলে দেখিতাম আমাদের সাহিত্য-সরস্বতীর পাদপদ্ম মাসিকপত্রের ধে পুষ্পদলের উপর স্থাপিত রহিয়াছে তাহা ও বাংল। মাসিকপত্র আয়তনে অতিকায় হইয়াছে, কিন্তু তাহদের সংখ্যায়, বিষয় নির্বাচনে, বা ক্ষেত্রের পরিধিতে কোথাও ঐশ্বৰ্য্যের শতদল নয় ।