পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& So প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড সন্ন্যাসী মহাশয় বলতে স্বরু করলেন,“আমি গৃহত্যাগী আজ ত্রিশ বৎসর তা আপনাকে বলেছি। জীবনে আমি কখনও বিবাহ করিনি। আমার ছাত্রজীবন একটু একটু ক’রে আমার অজ্ঞাতসারে কবে সন্ন্যাসী জীবনে পরিণত হয়ে উঠেছিল, তা আমার মনে পড়ে না । কেশব সেন যখন রামকৃষ্ণ পরমহংসের দলে স্বায়া-আসা আরম্ভ করলেন তখন আমাদের–মানে ছাত্রদের কাছে, পরমহংসের থ্যাতি হঠাৎ বড় বেড়ে উঠলো। সেই থেকেই আমি পরমহংসের ভক্ত। কিন্তু প্তার জীবদ্দশায় তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করবার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমি দীক্ষা নিলাম তার মৃত্যুর পর মা-ঠাকুরুণের কাছে।” আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “ম ঠাকুরুণ-” "পরমহংসের স্ত্রী। দীক্ষা নেবার পর সংসার ছেড়ে দিলাম। চোখের সাম্নে কোনো আদর্শ খাড়া করে তাই পাবার জন্তে সংসার ছেড়ে দিয়েছিলাম ব’লে মনে হয় মা । একদল লোক আছে, যারা সংসারের বোঝা বইবার উপযুক্ত নয়। সংসারকে তারা ভয়ে দূরে রেখে দেয়। আমি এই দলভুক্ত সন্ন্যাসী, তুচ্ছ লোক । যাই হোক, দীক্ষামন্ত্র সম্বল করে জগতের একটা অপেক্ষকুত জনবিরল পথে যখন বেরিয়ে পড়লাম তখন আমার বয়স খুব বেশী নয়। তরুণ মনের ভাব ও কল্পনাগুলোকে ধুনির আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে বিরুত ক’রে ফেললাম। দেখুন, একাজ বড় বিপজ্জনক, অনেকটা জুয়াখেলার মত। আপনি তো বিজ্ঞান পড়েছেন । হীরা কি ক’রে তৈরি হতে পারে তার থিওরী ত জানেন ? কার্বণ একটা নির্দিষ্ট উত্তাপ আর চাপ পেলে দানা বেঁধে হীরা হ’তে পারে বটে, কিন্তু নকল হীরা তৈরি করতে গেলে সেই নির্দিষ্ট চাপটুকুর অভাবে তা হয়ে পড়ে কালে কয়লা । দৈবাৎ কোনো বৈজ্ঞানিকের ভাগ্যে নির্দিষ্ট চাপটুকু জুটে গেলে তার কার্বণ হয়ত দানা বেঁধে হীয়া হ’য়ে যেতেও পারে, কিন্তু সে-ই যে বললাম জুয়াখেলার মত। আমাদের ভাগ্যে, অনেকদিন ধরে ধুনির আগুনে পুড়লাম বটে, কিন্তু দানা বাধবার সময় দেখলুম বাধলে কালে কয়লার। আশপাশের এক আধজন ভাগ্যবান গৃহত্যাগী ভ্রাতা হীরা হয়ে জমে গেলেন কিনা সেই রাগে তার সন্ধান পৰ্য্যস্ত রাখলাম না-- হিংসা ।” - “ধাকৃ, এই ত্রিশ বছরের ইতিহাস আমার খুব অদ্ভুত। এর বেশীর ভাগ শ্মশানে শ্মশানে কেটেছে। ভয় জিনিষটাকে দূর করে দিয়েছিলাম। ক্ষুধাতৃষ্ণাকে অনেকটা হাতের মুঠার মধ্যে নিয়ে এসে ফেলেছিলাম । শীতগ্রীষ্মও গ্রাহ করিনি। বনের কালে কচু জানেন ? অরন্ধনের দিন যার ডাটা সিদ্ধ করে থান । এই ত্রিশ বৎসরের জীবনে অনেক দিন ঐ যে কচুর ডাট আমার একমাত্র খাদ্য ছিল । বিনা মসলায় খেয়েচি, হন তেলও না দিয়ে, শুধু সিদ্ধ করে। ভোগের আকাঙ্ক্ষা জিনিষটা ক্ষুধার মত । ক্ষুধা যেমন মরে যায়, ও জিনিষটাও তেমনি আহুতি না পেলে মরে যায় । কাজেই এ—” আমি বললুম, “এর সত্যতা তর্কসাপেক্ষ।” সন্ন্যাসী মহাশয়ের মুখে একটু মুছ হাসি দেখা দিল । আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না। তারপর বলতে লাগলেন,— “সেবার কাৰ্ত্তিক মাসে যশোর জেলায় অত্যন্ত কলেরার মড়ক হ’ল । অনেক গ্রাম একেবারে জনশূন্ত হয়ে পড়লো। গবৰ্ণমেণ্ট ওষুধ ও ডাক্তার পাঠিয়ে অনেক জায়গায় ডাক্তারখানা খুলিয়ে দিলেন। শীতের মাঝামাঝি, শীতটা যেই একটু বেশী করে পড়লো, এদিকে মড়কও ক্রমে কমে গেল । যেই শীতকালের শেষে চৈত্রমাসের প্রথমে আমি যশোর জেলায় ঘুরতে ঘুরতে বাজিতপুরের শ্মশানে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। বাজিতপুর জানেন ? যশোর জেলায়—নবগঙ্গার ধারে ঠিক বলা যায় না, কারণ গ্রাম থেকে নদী প্রায় তিন পোয় পথ । নবগঙ্গা খুব বড় নদী নয়, জায়গায় জায়গায় টোক পান। আর জল ঝাজির দামে একেবারে ভরে গিয়েছে । বাজিতপুর গ্রামের প্রায় দুই মাইল দূরে এই নদীর ধারে খুব বড় একটা তেঁতুল গাছ আছে। এই তেঁতুল গাছ কতদিনের তা কেউ বলতে পারে না । এর ভালপালা অনেকদূর জুড়ে থাকে। এরই আশেপাশে নীর