পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা } সন্ন্যাসীর গল্প ☾ᎼᎼ ধীরে অনেকদূর পর্য্যস্ত বিস্তুত শ্মশান। চারিপাশের অনেকগুলো গ্রামের লোক এই শ্মশানে শবদাহ করতে আসে । - "সেবার চৈত্র মাসের প্রথমে আমি যশোর জেলায় ঘুরতে ঘুরতে এই বাজিতপুরের শ্মশানে গিয়ে ধুনি জাললাম। অত-বড় শ্মশান আমি আর কখনও দেখিনি | পাশ দিয়ে নবগঙ্গা বয়ে যাচ্চে, ছোট্ট মেয়েটির মত, তীরের বন ঝোপের সঙ্গে হাসিখেলা করতে করতে, সহজ সরল কীড়াশীল গতিতে । নদীর দক্ষিণ তীরে বিস্তীর্ণ জঙ্গল । তারই পেছনে আরও প্রায় দেড় মাইল দূরে গ্রাম। নিকটে কোনো দিকে কোনো লোকালয় নাই । গত মড়কের সময় লোকে শবদাহ করে উঠতে পারিনি বোধ হয়, নদীর ধার থেকে তাই বড় তেঁতুলগাছটার তল পর্য্যস্ত চারিধারে মড়ার মাথা ও কঙ্কাল ছড়ান পড়ে छिन ।' “সেদিন কোন তিথি তা আমার ঠিক মনে পড়চে না, মোটের ওপর সেদিন সন্ধার পরই অন্ধকার ভয়ঙ্কর ঘনিয়ে এল। আবলুস কাঠের মত কালো অন্ধকার । তেঁতুল গাছটার সর্বাঙ্গে, দূর জঙ্গলের বুকের মধ্যে সেই অন্ধকারে চারিপাশে, আকাশে বাতাসে কেমন একটা পাথরের মত কঠিন নিম্পদ নির্জনতা থম্ থম্ কবৃতে লাগলো। নদীর ওপারের গাছপালাগুলো দেখতে হ’ল যেন শুধু একরাশ জমাট-পাকানো অন্ধকার । তেঁতুলগাছটার সর্বাঙ্গে অসংখ্য জোনাকী পোক জলে সেই বিশাল অন্ধকার মাখানে গাছটার মূৰ্ত্তিকে আরও ভয়ানক ক’রে তুলেছিল। বিশাল আঁধারে শ্বাসরুদ্ধ প্রকৃতি কেবল একটু শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করছিল সেই জায়গাটুকু দিয়ে যেখানটায় নবগঙ্গার মাঝ-জল নক্ষত্রের ক্ষীণ আলোয় একটুখানি উজ্জল হয়ে উঠেছিল । “এ রকম জায়গায় কখনও কাটিয়েছেন ? এই রকম নির্জন, শব্দহীন স্থানে মনের কোন রুদ্ধ দ্বার আপনাআপনি খুলে যায়। লোকজন কেউ কোনদিকে নেই দেখে এই সব স্থানে লজ্জাকুষ্ঠিতা প্রকৃতিরাণী তীর, মুখের আবরং ধীরে অপসারিত করেন-ধে সে-সময় এখানে থাকে সে-ই তা দেখতে পায় । “প্রায় সমস্ত রাত কেটে গেল । শেষরাত্রের দিকে আমি বড় ক্ষুধা অনুভব করলাম। সেদিন সারাদিনমান আমি কিছুই খাইনি। ভিক্ষা করা অভ্যাস ছিল না, যে য। স্বেচ্ছায় দিয়ে যেত তাই খেয়ে প্রাণধারণ করতাম । লোকালয় থেকে বহুদূরে এ নির্জন শ্মশানে আমায় আর কে কি দিয়ে যাবে ? কাজেই সমস্ত দিন অনাহারে ছিলাম। কিন্তু অনেক রাত্রে ক্ষুধার যন্ত্রণা বড় বেশী হ’ল । তখন চৈত্র মাসের প্রথম পাকা তেঁতুলের সময়। ভাবলুম তেঁতুলতলায় গাছ থেকে নিশ্চয় তেঁতুল পড়ে থাকবে। হাসবেন ন—তারপর রাতদুপুরের সময় সন্ন্যাসী-মশায় চললেন তেঁতুলতলায় তেঁতুল কুড়িয়ে খেতে । ধুনির একখানা জলস্ত কাঠ নিয়ে গেলাম, আলো পাবার জন্যে । সেখানে গিয়ে দেখলুম, একটা টাটুকা চিতা, কারা সেদিন কাউকে দাহ করে গিয়েছিল। দেখলুম তারা একটা কলগীতে কিছু চাল ফেলে গেছে। চিতাপিণ্ড দেবার জন্যে নিয়ে এসেছিল, বোধ হয় বেশী হয়েছিল—ফেলে রেখে গেছে । চালক্ষদ্ধ কলসীটা নিয়ে এলুম। কলসীটার উপরটা ভেঙে ফেলে দিয়ে জল দিয়ে ধুনির আগুনে সেই চালগুলো চড়িয়ে দিলুম। “ক্রমে রাত শেষ হয়ে এল । নদীর ওপারে অনেক দূরের গ্রামের বনগাছের পেছন থেকে চাদ উঠতে লাগলো। সে-ঝোপ আলো-আঁধারে অতি অদ্ভূত দেখতে হ’ল—একটা বহুদিনের সুপ্ত প্রকৃতি যেন তন্দ্রাজড়িত চোখ মেলছে, কোন দূরদেশের নতুন বিবর্তনের ইতিহাস-ভর স্বষ্টির অস্পষ্ট আলোয় । এদিকে আমার ভাত হয়ে গেল, ভাত নামিয়ে রেখে বড় কমণ্ডলুট। নিয়ে নদীতে জল আনবার জন্যে গেলুম । শ্মশানের ধারে একটা ছোট ঘাট মতন আছে। শবরাহ করতে এসে লোকে সেই ঘাট থেকে কেউ জল নেয়, তার দু'পাশেই ঘন শর-বন। ঘাটে নেমে মাথা নীচু করে কমণ্ডলু ভৰ্ত্তি করছি, হঠাৎ শর-বনের র্যাক দিয়ে দেখতে পেলুম ঘাটের ব-ধারের শর-ঝোপের ওঁ-পাশে সাদা মতন কেউ যেন নড়চে । মাথা তুলে শর-ঝোপের ও-পাশে চেয়ে দেখি সত্যিই কে যেন মাথা নীচু করে নদীর ধারে কি ৰেল কুড়িয়ে