পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ pow { ভাগ, ২য় શ્જી বেড়াচ্চে। অত্যন্ত ভয়ে আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল। খুব আশ্চর্য্যও হলুম। ভাবলুম্ এত রাত্রে কে এখানে আসবে ? এর কোনো দিকে লোকালয় নেই, সকলের চেয়ে নিকটে যে গ্রাম শুভরত্বপুর, তা এখান থেকে দেড় মাইল দূরে ৷ এও সম্ভব নয় যে এত রাত্রে কোনো জেলে নদীর ধারে মাছ ধরতে এসেচে, আর যদিও আসে তো তার নৌকা কই ? এত রাত্রে শ্মশানের ধারে মাছ ধরতে আসবেই বা কে সাহস করে ? পাড়াগায়ের শ্মশান কেউ জমা রাখে না যে তাদের কেউ এসে রাত্রে শ্মশান চৌকি দিচ্চে। প্রথমটা একটুখানি সেখানে চুপ করে দাড়িয়ে রইলুম। পরক্ষণেই দুৰ্ব্বলতা জোর কোরে ঝেড়ে ফেলে ভাবলুম—কি এমন ? দেখিই না। শরবন ঘুরে ও-পাশে গিয়ে দেখলুম সত্যিই কে যেন মাথা নীচু করে ষেড়াচ্চে, আমার থেকে তার দূরত্ব প্রায় পনর-ষোল হাত । হঠাৎ আমার পায়ের শব্দ শুনেই বোধ হয় সে আমার দিকে ফিরে চাইলে । চাইতেই দেখলুম, যে ফিরে চাইলে সে পুরুষ নয়, রমণী। ধাক্কা খেয়ে আমার সাহস বেড়ে গেল । আমি জোর করে পা বাড়িয়ে আরও খানিক এগিয়ে গেলুম। তখন বেশ চাদ উঠেছিল। কাশফুলের মত সাদা ধপ, ধপে জ্যোৎস্না চারিদিক ধুয়ে দিচ্ছিল । দেখলুম রমণী তরুণী । কপাল পর্য্যস্ত ঘোমটা-টান, মুখ বেশ খোলা। অত্যস্ত বিস্ময়ে আমি হতবুদ্ধি হয়ে কি জিজ্ঞাসা করব ভাবচি, এমন সময় সে বেশ সহজ স্বরে বললে,-আমি ভেবেছিলাম এখানে কেউ থাকে না । তুমি কি এখানে থাকো ? মেয়েটির গলার স্বর শুনে আমার কি জানি কেন হঠাৎ সমস্ত ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিক মনে হ’ল । যেন আশ্চৰ্য্য হবার কিছু নেই, যেন আমি এইটাই আশা করছিলুম। আমি বললুম,—আমি সন্ন্যাসী মানুষ। শ্মশানে শ্মশানে বেড়ানই আমার কাজ । কিন্তু তুমি এখানে কোথা থেকে কি করে এলে মা ? সে বললে,--সত্যি সত্যি তুমি সন্ন্যাসী! তার কথার ভাবে অত্যন্ত বিস্ময়ের উপরেও আমার হালি পেল। আমি বললুম-ন হ’লে এত রাত্রে কি এথানে আর কেউ থাকে। কিন্তু তুমি কি এক এসেছ মা, তোমার সঙ্গে কেউ নেই ?...দেখলুম ঐ আমার প্রশ্নের দিকে র্তার লক্ষ্য নেই, তিনি একটু মনোযোগের সঙ্গে শর-বনের ৰোপের জলের ধারে চেয়ে কি দেখছেন । “জ্যোৎস্নার আলো তার মুখে, সৰ্ব্বাঙ্গে পড়েছিল। চাপা ফুলের রঙের সঙ্গে সাদা গোলাপের আভা মিশলে যে-রকম রং হয় তার গায়ের রংটা সেই রকম। মুখের গড়ন যে অত সুন্দর হতে পারে তা আমার ধারণাই ছিল না। চোখ দুটায় কেমন অস্বাভাবিক দীপ্তি-- আর সে দুটা এত কালে যে কোথায় ভুরু শেষ হয়ে চোখের আরম্ভ হয়েচে তা যেন ধরা যায় না । “হঠাৎ রমণী এমন করে আধখানটা ঝুকে পড়ে লক্ষ্য করতে লাগলেন, ষেন সেইটাই তার লক্ষণীয় বিষয় । র্তার দৃষ্টির রেখা ধরে চেয়ে দেখলুম, তার দৃষ্টি বদ্ধ হয়ে আছে শর-বনের পাশের একটা কি সাদা জিনিষের ওপর । ভাল করে চেয়ে দেখলাম সেটা একটা মড়ার মাখ । তিনি তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন,— তুমিও তো এখানে থাক, আমার মন্ট কে দেখেছ? - বললুম—মণ্ট, কে মা ? তিনি বললেন,—মণ্ট, মণ্ট, আমার খোকা ।...র্তার চোখের দিকে চেয়ে আমি পূৰ্ব্বেই বুঝেছিলুম, এখন বেশ বুঝতে পারলুম, রমণী যিনিই হোন, তিনি প্রকৃতিস্থা নন । বললুম,—এস মা আমার সঙ্গে, আমি ঐখানে তেঁতুলগাছের কাছে থাকি— আমি সব বলছি। তিনি অত্যন্ত আগ্রহের স্বরে বললেন,—তুমি, তুমি জানো ? তুমি তাকে চিনতে - মণ্ট কে ?...বললুম, মা, আমি এখানে নতুন এসেছি, আমি তো ঠিক জানতুম না । তুমি এস আমার সঙ্গে । তিনি আমার সঙ্গে সঙ্গে এলেন ।--বেললুম,—ম, তুমি কোথা থেকে আসচে ? তোমার বাড়ী কোন গ্রামে ?••• “তিনি দেখলুম একটু বিস্ময়ের সঙ্গে জামার আসবাবপত্র লক্ষ্য করছেন-কমণ্ডলু, ধুনি, কম্বল, ভাতের ছাড়ি, পুথি । তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন,--শ্লাগা এসব কি ? তুমি কি বাড়ী যাও না ? এখানেই থাকো ? আমি বললুম,-আমার বাড়ী ত নেই মা। আমি এখানেই থাকি। তুমি বসে, দাড়িয়ে কেন মা ?