পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ) সন্ন্যাসীর গল্প (kN) “তিনি হঠাৎ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, আমি বসব না, যাই, তাকে একটু খুজিগে। দেখলুম তিনি চলে যেতে উদ্যত হয়েছেন, বললুম,—ম, আমি বলচি তুমি এখানে বসে। আমি আগে সব শুনি । তারপর বরং “র্তার মুখ আহলাদে উজ্জ্বল হয়ে উঠল । বললেন,আচ্ছ। আমি বসচি, তুমি বোধ হয় বলতে পারবে এইখানেই সে কোথায় আছে, তাকে এইখানেই এনেছে কিনা ? তিনি খুনির ও-পাশে বসলেন। “ধুনির আলোয় ভাল করে তার মুখ দেখলুম, মনে হ’ল জগতের স্বষ্টিতত্ত্ব ষতই জটিল হোক না কেন, যে শিল্পীর এসব স্বষ্টি, সে তুলি ধরেছিল বটে। তার শুভ্ৰ, সুগোল হাতের বা লা দুটি আর গলার সরু হীরগাছটা আলোয় যেন জলে উঠলো। নারীর সৌন্দর্য্য যে স্বষ্টির একটা কত-বড় ঐশ্বৰ্য্য, তা বেশ বুঝতে পারলুম। “আবার জিজ্ঞাসা করলুম,—তোমার বাড়ী কোন গায়ে, মা ?...তিনি আঙুল তুলে বনের দিকে দেখিয়ে বললেন,—ওই যে ঐদিকে, শুভরত্বপুর । “আমি বললুম,—ম, এ জায়গায় আসা কি ভাল ? এক বেরিয়েছ কি ব’লে ? রমণী বিস্ময়ের সুরে বললেন, আমি একা তো আসিনি। আমার মন্ট কে তারা এখানেই এনেছে, তাই আমি এলাম তাকে খুজতে। তারা আমায়ু আসতে দেয় কি না ? আমি লুকিয়ে এসেছি। “আমি মনে করেছিলুম যে, ক’রে হোক ভুলিয়ে তাকে সকাল পৰ্য্যস্ত সেখানে আটকে রাখব, তারপর ভোর হ’লে যা-হয় করব । বললুম,—আসতে দেয় না কেন ? বারণ করে বুঝি ? তিনি বললেন - বারণ করে ? দেখবে, এই দেখ। তারপর আলোর কাছে হাত দুটোর খানিকট খুলে দেখালেন, দেখলুম কম্বুইয়ের খানিকট ੰ অমন স্থনর চাপা ফুলের রঙের হাতে যেন কালো রক্ত ফেটে পড়ছে। বললেন,—দেখলে ? বেঁধে রেখেছিল। আমি লুকিয়ে এসেছি—আমার এইধানে কেটে গিয়েছে, আমি আমার মন্টর কাছে আসি, তাই ওর—তারপর হঠাৎ যেন অভিমানে ফুপিয়ে জোরে কেঁদে উঠলেন। “এক মুহুর্তে আমার পুরুষ-হৃদয়ের সমস্ত সহাহভূতি গিয়ে এই অসহায়, নিপীড়িত, শোকবিহবলা, ছৰ্ভগিনীর ওপর পড়ল। আমি কি ব’লে সাম্বন দেব তা বুঝতে পারলুম না । বললুম,—ম, কেঁদো নী—ছিঃ-কাদে নাছোট মেয়েকে যেমন করে সাত্বনা দেয়, তেমনি কথায় তাকে বোঝাতে আরম্ভ করলুম। তিনি আবার বললেন-ছেলের আমার কি বুদ্ধি ! অর্থ হয়েছিল, তা পখ্যি করবে কি না । কবিরাজ মশায় তো ভাত খেতে বারণ করে দিয়ে গেলেন - ছেলে কেঁদে খুন ভাত খাবেই। আমি খই চটুকে ডাল দিয়ে মেখে ভাত ব’লে নিয়ে গিয়েচি থাওয়াতে - হঁয়া ছেলে তাই খাবে কি না ? বলচে, এ বুঝি যা ভাত ? এ তো খই! এই বয়েসে এত বুদ্ধি। পূজোর সময় জাম কিনে দেওয়া হ’ল, নতুন জামা বাক্সে তোলা রয়েচে, বাছা মোটে বার-দুই গায়ে দিয়েছিল – পরে চারিধারে চেয়ে চিস্তিত মুখে অনেকটা যেন আপন মনেই বললেন– তাই তো এই রাত, এই অন্ধকার, দেখ তে ছেলে কোথায় গেল ? আমি সংসারী নই, এ ধরণের অভূত অবস্থায় কখনও জীবনে পড়িনি— আমি তো একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলুম—কি বলে সাত্বনা যে দিই, মুখে আমার কোনো কথা যোগায় না । তবে একটা বুদ্ধি ভগবানই বোধ হয় আমার মাথার মধ্যে দিয়ে দিয়েছিলেন-আমি তার ভুল ভাঙাবার কোনো চেষ্টাই করলুম না। অনেকক্ষণ পৰ্য্যস্ত নানা কথায় তাকে অন্যমনস্ক ক’রে রাখার চেষ্টা করছিলুম—আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে পূব আকাশ ফরসা হতে দেখে ইাপ ছেড়ে ধাচলুম। চাদ ক্রমে নিম্প্রভ হয়ে এল-লক্ষত্র মিলিয়ে যাচ্ছিল-দেখতে দেখতে ওপারের কষাড় ঝোপগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠলো। > হঠাৎ একটা ব্যাপার ঘটে গেল-মেয়েটি খানিকক্ষণ থেকে কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে ছিল । চারিধারে সেইটুকু মাত্র দিনের জালো ফুটুবার সঙ্গে সঙ্গে সে যেন চম্কে উঠে একবার চারিদিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চেয়ে