পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৫১৬    প্রবাসী - মাঘ, ১৩৩৭      [৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড 

এ কথা ইণ্ডিয়ান সিনেমা কমিটি রিপোর্ট অনুমোদন করেছেন। তাঁহাদের মতে ব্যবসাদারদের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় যে, খাঁটি ভারতীয় দর্শকদের কাছে ভারতীয় ফিল্ম দেখালে পাশ্চাত্য ফিল্ম দেখানোর চেয়ে বেশী লাভ করা যায়। ভারতীয় ফিল্ম তৈরি করা একটি লাভজনক ব্যবসা। এই ফিল্ম ভাল হ’লে ফিল্ম উৎপাদন ব্যবসায়ীর প্রচুর লাভ হয়। ভারতবর্ষ একটা আজব দেশ, এর পথেঘাটে সাপ, বাঘ, বনমানুষ, সাধু-সন্ন্যাসী ইত্যাদি পাওয়া যায়। ভেষ্টেড ইনটারেষ্ট-ওয়ালাদের কৃপায় এ ধারণাটা বিদেশীদের অনেকেরই আছে। প্রাচীন সভ্যতা ইত্যাদির কথাও যে দু-চারজন জানতে না চান এমন নয়। তাই উৎসুক ও জ্ঞানপিপাসু, দু-দলই ভারতবর্ষকে খুব ভালভাবে জানতে চায়। এ জানাটা ফিল্মের ভিতর দিয়েই সুন্দরভাবে হ’তে পারে ব’লে এ দেশী চলচ্চিত্রের বাজার বিদেশেও প্রচুর পরিমাণে আছে। এসব দেখে মনে হয় এ শিল্পটাকে মন প্রাণ দিয়ে গড়ে তুললে মানুষ হয়ত একদিন আমেরিকার অয়েল কিং, মাইন কিং দেরও ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনীয়তার দিক থেকেও চলচ্চিত্রের তুলনা হয় না। শিক্ষার কথা ধরা যাক। বাস্তব জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয়, যথা - স্বাস্থ্যরক্ষা, পথঘাট পুকুর পরিষ্কার রাখার ফলাফল, মহামারীর প্রতিকার, শিশুমৃত্যু-নিবারণ, সন্তানপালন, খাঁটি ও ভেজাল খাদ্যের দোষগুণ, চরকা কাটা, তাঁত-বোনা - আমোদ-প্রমোদের মধ্য দিয়েই অজ্ঞ জনসাধারণের মনে প্রবেশ করানো যায়। উন্নত ধরণের চাষ-আবাদের ব্যবস্থা, গো-পালন, মৌমাছিপালন, হাঁস মুরগীর চাষ, শারীর বিজ্ঞান, নূতন নূতন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, দেশ বিদেশের পুরাণ ও ইতিহাস, বিভিন্ন সামাজিক জীবনের তুলনামূলক আলোচনা, ইত্যাদি বিষয় সিনেমার সাহায্যে প্রচার করলে অনেক কাজ হয়। শতকরা দুজন লিখতে-পড়তে-জানা দেশে বর্ণমালা শিখিয়ে জাতীয় আন্দোলনে ও জাতীয় ভাবে দেশকে উদ্বুদ্ধ করা হুরাশা। গণচৈতন্ত সম্পাদনে বায়োস্কোপই শ্রেষ্ঠ উপায়। রুশ-বিপ্লবের পূর্ব ও পরের অবস্থা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। সত্যিকারের শিল্পীদের দিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হ'লে অপরাপর সহযোগী শিল্পের চাইতে এতে আনন্দ পাওয়। যায় বেশী। আবার থিয়েটারের চাইতেও সুন্দর পারিপার্শ্বিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে ব’লে লোকের ঝোঁক সিনেমার প্রতি বেশী হয়। সময়ের অল্পতাও অধিক আকর্ষণের কারণ হ’তে পারে। বিনা আনন্দে জীবনের স্ফূর্তি হয় না। নিপীড়িত, নিগৃহীত, নিরানন্দ গরিব দেশে সস্তায় আমোদ পাওয়াও ত কম কথা নয়। তবে বায়োস্কোপের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, বিশিষ্টতা ইত্যাদির প্রচার করলে মেয়ে বিবির দল খুশী না হ’তে পারে। আর একটা দিক ভাববার আছে, কোম্পানীর ফেল পড়া। কতকগুলি কোম্পানী ফেল হওয়ার কারণ অতুসন্ধান করলে জানা যায় যে, বেশীর ভাগ কোম্পানীই ব্যবসা ও নাট্যকলার দিক একই ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেন। তিনি আবার খুশীমত তাঁর প্রিয়পাত্রপাত্রীদের যোগ্যতার চাইতেও দাম দেন বেশী। আবার কেউ কেউ ফিল্মে উপযুক্ত ব্যয় না ক’রে ফিল্মের টাকা দিয়েই অন্যান্য ব্যবসা শুরু করে দেন। এতে বিপদ হয় এই যে, সবগুলো ব্যবসাকেই অকালে মরতে হয়। অংশীদারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গোলমালও ফেল পড়ার আর একটা কারণ। চলচ্চিত্রের অযোগ্যতার জন্যে ভারতে কোম্পানী উঠে যেতে বড় দেখা যায় নি। তবু একথা সত্যি বলতে হবে যে, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ডিরেক্টারের অভাব আছে যথেষ্ট। কেবল কয়েকটা সিনেমা কোম্পানী গড়ার সখ চেগে উঠতেওঁ মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু ঐ বিদ্যে দিয়ে যে শিল্প সৃষ্টি হয় না, দুদিনেই সেটা ধরা পড়ে যায়। টেক্‌নিক জিনিষটা অত সহজে শেখা গেলে সকলেই সব শিল্প সৃষ্টি করতে পারত। ডিরেক্টার কেবল শিল্পী হ’লে হবে না, তাঁর মোটামুটি সর্ব্ববিদ্যাবিশারদ হওয়াও একটু প্রয়োজন। যুদ্ধদৃশ্যে