পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২৯ প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড অপু বলিল—আবার বুঝি আজ বেধেচে গাজুলীগিল্লির সঙ্গে ? অপর্ণ বলিল—নতুন করে বাধবে কি, বেধেই তো আছে। গাঙ্গুলী-গিন্নিরঙ মুখ বড় খারাপ, হালদারদের বেীটা ছেলেমানুষ, কোলের মেয়ে নিয়ে পেরে ওঠে না, ংসারে তো আর মানুষ নেই, তবুও আমি এক একদিন গিয়ে বার্টুন বেটে দিয়ে আসি । সিড়ি ও রোয়াক ধুইবার পালা লইয়া উপরের ভাড়াটেদের মধ্যে এ রেষারেষি, দ্বন্দ্ব অপু আসিয়া অবধি এই এক বৎসরের মধ্যে মিটিল না। সকলের অপেক্ষ তাহার খারাপ লাগে ইহাদের এই সঙ্কীর্ণতা, অমুদারতা। কট, কট করিয়া শক্ত কথা শুনাইয়া দেয়-বাচিয়া, বাচাইয়৷ কথা বলে না, কোন কথায় লোকের মনে আঘাত লাগে, সে কথা ভাবিয়াও দেখে না । বাড়ীটাতে হাওয়া থেলে না, বারান্দাটাতে বসিলে হয়ত একটু পাওয়া যায়, কিন্তু একটু দূরেই ঝাঝরি-ড়েণ, সেখানে সারা বাসার তরকারীর থোস, মাছের আঁশ, আবর্জন, বাসি ভাত তরকারী পচিতেছে, বর্ষার দিনে বাড়ীময় ময়লা ও আধময়লা কাপড় শুকাইতেছে, এখানে তোবড়ানো টিনের বাক্স, ওখানে কয়লার ঝুড়ি । ছেলেমেয়েগুলো অপরিষ্কার, ময়ল পেনী বা ফ্রকু পরা। অপুদের নিজেদের দিক্‌টা ওরই মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিলে কি হয়, ছোট্ট বারান্দার টবে দু-চারটা রজনীগন্ধ, বিদ্যাপাতার গাছ রাখিলে কি হয়, এই একবৎসর এখানে আসিয়া অপু বুঝিয়াছে, জীবনের সকল সৌন্দৰ্য্য, পবিত্রত, মাধুর্য্য এখানে পলে পলে নষ্ট করিয়া দেয়, এই আবহাওয়ার বিষাক্ত বাম্পে মনের আনন্দকে গল| , টিপিয়া মারে। চোখের পীড়া দেয় যে অস্বন্দর, তা ইহাঁদের অঙ্গের আভরণ । থাকিতে জানে না, বাস করিতে জানে না, শূকরপালের মত খায় আর কাদায় গড়াগড়ি দিয়া মহা জানন্দে দিন কাটায়। এত কুত্র বেষ্টনী মধ্যে দিন দিন যেন দম বন্ধ হইয়া আসিতেছে তাহার। কিন্তু উপায় নাই, মনসাপোতা থাকিলেও আর কুলায় ন, অথচ তের টাকায় ভাড়ার এর চেয়ে ভাল ঘর শহরে কোথাও মেলে না। তবুও অপর্ণ এই জালো হাওয়া বিহীন স্থানেও শ্ৰী ছাদ আনিয়াছে, ঘরটা নিজের হাঙে সাজাইয়াছে, বাক্সপেট রাতে নিজের হাতে বোন ঘেরা টোপ, জানালায় ছিটের পর্দা, বালিস মশার সব ধপ ধপ, করিতেছে, দিনে দু তিনবার ঘর ঝাট দেয়। এই বাড়ীর উপরের তলার ভাড়াটে গাঙ্গুলীদের একজন দেশস্থ আত্মীয় পীড়িত অবস্থায় এখানে আসি৷ দু-তিন মাস আছেন। আত্মীয়টি প্রৌঢ়, সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে । দেখিয়া মনে হয় অতি দরিদ্র, বড়লোক আত্মীয়ের আশ্রয়ে এখানে রোগ সারাইতে আসিয়াছেন ও চোরের মত একপাশে পড়িয়া আছেন। বৌটি যেমন শাস্ত তেমনি নিরীহ,—ইতিপূৰ্ব্বে কখনও কলিকাতায় আসে নাই—দিনরাত জুজুর মত হইয়া আছে। মা সারাদিন সংসারের থাটুনি খাটে ও সময় পাইলে রুগ্ন স্বামীর মুথের দিকে উদ্বিগ্নদৃষ্টিতে চাহিয়া বসিয়া থাকে । তাহার উপর গাঙ্গুলী-বেীএর ঝঙ্কার বিরক্তি প্রদর্শন, মধুবর্ষণ তো আছেই। অত্যন্ত গরীব, অপু রোগী দেখিতে যাইবার ছলে মাঝে মাঝে বেদান, আঙ্গুর, লেবু দিয়া আসিয়াছে । সেদিনও বড় ছেলেটিকে জামা কিনিয় দিয়াছে। এদিকে তাহারও চলে না। এ সামান্য আয়ে সংসার। চালামে একরূপ অসম্ভব । অপর্ণ অন্যদিকে ভাল গৃহিণী হইলেও পয়সা-কড়ির ব্যাপারটা ভাল বোঝে না—দুজনে মিলিয়া মহা আমোদে মাসের প্রথম দিকটা খুব খরচ করিয়া ফেলে—শেষের দিকে কষ্ট পায় । কিন্তু সকলের অপেক্ষ কষ্টকর হইয়াছে আপিসের এই ভূতগত খাটুনি । ছুটি বলিয়া কোনো জিনিয নাই এখানে। ছোট ঘরটিতে টেবিলের সামনে ঘাড় গুজিয়া বসিয়া সকাল এগারোটা হইতে বৈকাল সাতটা পৰ্য্যস্ত। আজ দেড় বৎসর ধরিয়া এই চলিতেছে। এই দেড় বৎসরের মধ্যে সে শহরের বাহিরে কোথাও যায় নাই। আপিস অরি বাসা, বাসা জায় আপিস। শীলবাবুদের দমদমার বাগান-বাড়ীতে সে একবার গিয়াছিল, সেই হইতে তাহার সাধ নিজের মনের মত গাছ-পালায় সাজানো বাগান-বাড়ীতে বাস করা। জাপিসে যখন কাজ না থাকে, তখন একখানা কাগার -o-, -