পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२२ প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড সাম্নেই উপরের ঘরে মেজবাৰু বন্ধুবান্ধব লইয়৷ বিলিয়ার্ড খেলিতেছেন, মার্কারটা রেলিংএর ধারে দাড়াইয়া সিগারেট খাইয়া পুনরায় ঘরে ঢুকিল। মেজবাবুর বন্ধু নীলরতন বাবু একবার বারান্দায় আসিয়া কাহাকে হাক দিলেন। অপুর মনে হয় তাহার জীবনের সব বৈকালগুলি এরা পয়সা দিয়া কিনিয়া লইয়াছে, সবগুলি এখন ওদের জিন্মায়, তাহার নিজের আর কোনো অধিকার নাই উহাতে। প্রথম জীবনের সে সব মাধুরীভরা মুহূৰ্ত্তগুলি যৌবনের কলকোলাহলে কোথায় গেল মিলাইয়া? কোথায় সে নীল আকাশ, মাঠ, আমের বউলের গন্ধভরা জ্যোৎস্নারাত্রি। পাখী আর ডাকে না, ফুল ফোটে না, আকাশ আর সবুজ মাঠের সঙ্গে মেশে না-ঘেটুফুলের ঝোপে সদাফোট ফুলের তেতো গন্ধ বাতাসকে তেতো করে না। নিশ্চিন্দিপুর ছাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে সে জীবনের সঙ্গে যোগস্থত্র ছিড়িয়া গিয়াছে—বহু বহুকাল আগে। জীবনে সে যে রোমান্সের স্বপ্ন দেখিয়াছিল—যে স্বপ্ন তাহাকে এতদিন শতদুঃখের মধ্য দিয়া টানিয়া আনিয়াছে তার সন্ধান তো কই এখনও মিলিল না ? এ তো একরঙ ছবির মত বৈচিত্র্যহীন, কৰ্ম্মব্যস্ত, একঘেয়ে জীবন— সারাদিন এখানে আপিসের বদ্ধজীবন, রোকড়, খতিয়ান, মরগেজ, ইন্‌কম্‌ট্যাক্সের কাগজের বোঝার মধ্যে পঙ্ককেশ প্রবীণ বুনো সংসারাভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের সঙ্গে সপিনা ধরানর প্রকৃষ্ট উপায় সম্বন্ধে পরামর্শ করা, এটর্ণিদের নামে বড় বড় চিঠি মুশাবিদ করা—সন্ধ্যায় পায়রার থোপের মত অপরিস্কার নোংরা বাসাবাড়িতে ফিরিয়াই তখনি আবার ছেলে পড়াইতে ছোট। সোনার বেনেদের বাড়ীর ঘৃতদুগ্ধপুষ্ট আহলাদে ছেলে, তাদের না আছে বুদ্ধির তীক্ষতা, না আছে কল্পনার অঙ্কুর। এই বয়সেই তার এমনি পয়সা চিনিয়াছে, এক ক্লাসের বই পড়া হইয়া গেলে চাকরের হাতে পুরানো বইএর দোকানে বিক্রয় করিতে পাঠায়, মাহিনী দিবার সময় আবার ছাত্রের দাদা আগে রসিদট লিখাইয়া ও সই করাইয়া লয়, ছ তিন বার পড়িয়া দেখে, তারপর মাহিনী দেয় । কেবল এক অপৰ্ণাই এই বন্ধ জীবনের মধ্যে আনন্দ আনে। আপিস হইতে ফিরিলে সে যখন হাসিমুথে চা লইয়া কাছে দাড়ায়, কোনোদিন হালুয়া, কোনোদিন ছু চার খানা পরোটা, কোনোদিন বা মুড়ী নারিকেল রেকাবিতে সাজাইয়া সাম্নে ধরে, তখন মনে হয় এ যদি না থাকিত। ভাগ্যে অপর্ণকে সে পাইয়াছিল । এই ছোট্ট পায়রার খোপকে যে গৃহ বলিয়া মনে হয় সে শুধু অপর্ণা এখানে আছে বলিয়া, নতুবা চৌকী, টুল, বাসনকোসন, জানালার পর্দা, এসব সংসার নয় অপর্ণ যখন বিশেষ-ধরণের শাড়ীটি পরিয়া ঘরের মধো ঘোরাফের করে অপু ভাবে এ স্নেহনীড় শুধু ওরই চারিধারে ঘিরিয়া, ওরই মুখের হাসি, বুকের স্নেহ যেন পরম আশ্রয়, নীড় রচনা সে ওরই ইন্দ্রজাল । আপিসে বসিয়া সে এক এক সময় নানা স্থানের কাল্পনিক ভ্রমণকাহিনী লেখে, দাৰ্জিলিং, সমুদ্ৰ-ভ্ৰমণ, পুরী, কাশ্মীর। বালির কাগজে লেখে, ডেস্কের মধ্যে পুরিয়া রাথে। পুরানো বইয়ের দোকান হইতে সে নানাদেশের ছবিওয়ালা বর্ণনাপূর্ণ বই কেনে—নানা দেশের রেলওয়ে বা ষ্টীমার কোম্পানী যে সব দেশে যাইতে সাধারণকে প্রলুব্ধ করিতেছে—কেহ বলিতেছে হাওয়াই দ্বীপে এস একবার—এখানকার নারিকেল কুঞ্জে ওয়াকিকির বালুময় সমুদ্রবেলায় জ্যোৎস্নারাত্রে যদি তীরাভিমুখী উৰ্ম্মিমালার সঙ্গীত না শুনিয়া মর, তবে তোমার জীবন বৃথা । এল পাশে দেখ নাই ? দক্ষিণ ক্যালিফনিয়ার মরুপ্রাস্তরে চুণাপাথরের পাহাড়ের ঢালুতে, যেখানকার শাস্ত রাত্রির তারাভরা আকাশের তলে কম্বল বিছাইয়া একবারটি ঘুমাইয়া দেখিও । শীতের শেষে বসম্ভের ফুল প্রথম যখন ফুটিতে স্বরু করে, তখন সেখানকার রৌদ্রদীপ্ত, স্বপ্নময় সৌন্দৰ্য্য, ওয়ালোয় হ্রদের তীরে মাজাম আগ্নেয়গিরির তুষারমণ্ডিত চুড়া, নীচের গিরিশ্রেণীতে উন্নত পাইন ও ডগলাস ফারের ঘন অরণ্য, হ্রদের স্বচ্ছ বরফ গলা জলে তুষারকিরাটা আগ্নেয়গিরির প্রতিচ্ছায়ার কম্পন, উত্তর আমেরিকার ঘন, স্তন্ধ, নির্জন আরণ্যভূমি, কর্কশ, বন্ধুর পর্বতমালা, গষ্ঠীরনিনাদী জলপ্রপাত,