পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । তাহার পিতা অভিজাত সম্প্রদায়ে পাত্র না পাইয়া কন্যা মুল্লা বিবিকে চিরকুমারী রাখিয়া গিয়াছেন। মুল্লার বয়স এখন প্রায় ষাট বৎসর। আমীর সাহেবের ঘরে গৃহিণীপণ করা ছাড়া তাহার অন্য কিছু কাজ নাই । তিনি বহু যত্নে এবং বহু চেষ্টায় আমীর সাহেবের সংসার রক্ষা করিয়া আলিতেছেন, মা হইলে এতদিনে আমীর সাহেবের বিষয়সম্পত্তি সমস্ত মহাজনের ঘরে ঢুকিত । আমীর সাহেবের জ্যেষ্ঠা কন্যা আমীন বিবির বয়স যখন বার বৎসর তখন অভিজাত সম্প্রদায়ে কোনো পাত্রই ছিল না। কাজেই তাহারও ভাগ্যে চিরকৌমাৰ্য্যই ঘটিবার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু সৌভাগাক্রমে এমনি দিনে অভিজাত ংশের একজনের গৃহে একটি পুত্র সস্তান জন্মগ্রহণ করিল। আমীর সাহেবের আশা হইল যে, বোধ হয় আমীনার ভাগ্যলিপির চিরকৌমাৰ্য্য এইবার ঘুচিবে । আমীন। শিশু বালকটি অপেক্ষ বার বৎসরের বড় হইলে কি হয় তাহার সহিত বিবাহে আমীনার ত আইবুড় নাম সুচিবে, বংশের গৌরবও অক্ষুণ্ণ থাকিবে । সেই দুগ্ধপোষ্য বালকের দশ বৎসর বয়সে বাইশ বৎসরের পুর্ণযৌবন আমীনার শুভ-পরিণয় হইল । আমিনার আইবুড় নাম ঘুচিল এবং শ্বশুরকুল ও পিতৃকুল উভয় কুলের সম্মান অক্ষুন্ন রহিল । প্রথম কম্ভা আৰ্মীনা বিবি ত উদ্ধার হইয়াছেন, কিন্তু দ্বিতীয় কঙ্কা সখিনা বিবির উদ্ধারের উপায় না খুজিয়া পাইয়। আমীর সাহেব বড়ই চিস্তান্বিত ছিলেন । সখিনা বিবির বয়ক যখন জয়ােদশ বৎসর তখন একদিন ষাট বৎসর বয়স্ক জব্বার সাহেবের স্ত্রীর হঠাৎ কাল হইল । আমীর সাহেবের আশা হইল এইবার তবে সখিন। বিবির ভাগ্যও প্রসন্ন হুইয়া উঠিবে। জব্বার সাহেবের বংশগেীরৰ এখনও বজায় আছে। সখিনা বিবি বালিকা বধুরূপে তাহার গৃহ উজ্জল করিবে এবং স্বামীর বংশগৌরবের দীপ্তিতে পিতৃগৃহও আলোকিত করিবে। আমীর সাহেব বিপত্নীক, কাজেই অন্দর হইতে তাহার প্রস্তাবে কোন আপত্তি উঠিবার কথা তাহার মনে উদয় হয় নাই । কিন্তু ষে দিক হক্টতে কোনো আপত্তির কথা তিনি স্বপ্নেও মনের মধ্যে স্থান দেন নাই, . বলিদান {t8Գ সেই দিক হইতে আপত্তি আসিয়া উপস্থিত হইল । চতুর্দশবর্ষীয়া সখিনা বিবাহের কি জানে ? সখিনার উদ্ধারের জন্যই তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছেন, আর সেই সখিনাই বিবাহে আপত্তি তুলিতেছে! १ আমীর সাহেব ভাবিয়া চিন্তিয়া পরদিন প্রাতঃকালে ভগ্নী মুন্না এবং টেষ্ঠা কন্য। আমীনাকে ডাকাইয়া বলিলেন, “আমি সৎপাত্রে সখিনার বিবাহের ঠিক করিতেছি, ইহা তোমরা জাম । ভাগো জব্বার সাহেবের পত্নীর কাল হইয়াছিল, নচেৎ অভিজাত বংশে আর এমন পাত্র ছিল না যে, তাহার সহিত সখিনার বিবাহ হয় । জববার সাহেবও যথেষ্ট আত্মত্যাগ দেখাইয়৷ এই বিবাহে স্বীকৃত হইয়াছেন। সখিনার বিবাহে আমি পাচ হাজার টাকার অলঙ্কার এবং পাত্রকে এক হাজার টাকার ঘড়ি চেন পৰ্য্যন্ত দিতে স্বীকার হইয়াছি । সমস্তই প্রস্তুত, এমন সময় মেয়েটার কথা দেখ না ! সে আমাকে বলে কি না যে, যে-পাত্র তাহার জন্য স্থির করিয়াছি, সে তাহার যোগ্য নহে—সে বিবাহ করিবে না। বংশগৌরবে জব্বার সাহেবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘর আর দ্বিতীয় নাই । কোন আক্কেলে সে বলে ষে পাত্র তাহার যোগ্য নহে । সে সেদিনকার মেয়ে, এখনও তাহার গায়ে স্বাতুড়-ঘরের গন্ধ যায় নাই, সে বিবাহের কি জানে ? বড় লজ্জার কথা ! কখনও শুনি নাই যে, মুসলমানের ঘরের মেয়ে নিজের বিবাহে মতামত প্রকাশ করে । তোমরা তাহাকে ডাকিয়া বুঝাইয়া বল। আমি তাহার কোনো কথা শুনিব না, জব্বার সাহেবের সহিতই তাহার বিবাহ দিব ।” আমীন চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল, কিন্তু মুল্লা বলিল, *বলিলেই হইল যে বিবাহ করিব না ? বখন ছাগল ছানাকে কোরবানি দেওয়া হয়, তখন সে কি নিজের ইচ্ছায় গলা বাড়াইয়া দেয় । এমন মহাপুণ্যের কাজ ত ছাগলছানার হাত পা ধরিয়া মুখ বাধিয়াই করা হয়। সখিনাকে তাহাই করা যাইবে । কোনো চিন্তা নেই। র্কোরবানি দেওয়ার সময় ছাগলের মতামত আবার কে জিজ্ঞাসা করে ?” -